বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ করতে চায় আদানি

বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগে আগ্রহী ভারতের বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী আদানি গ্রুপ। গতকাল বুধবার আদানি গ্রুপের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে এসে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে নিজেদের আগ্রহের কথা বলেছে আদানি গ্রুপ।

বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, নতুন বিনিয়োগ আমরা সাধুবাদ জানাই। ভারতের ব্যবসায়ী গ্রুপ আদানি দেশে অনেক বিনিয়োগ করেছে, আরও করতে চায়।

বকেয়া বিলের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আদানির বিদ্যুৎ বিলের পাওনা থাকলে তো আমরা দিয়ে দেব। তবে এ নিয়ে নির্দিষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি।

ভারতীয় ব্যবসায়ী গ্রুপ আদানির পক্ষ থেকে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল বুধবার (২৯ মে) অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন।

প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন আদানি গ্রুপের পূর্ণকালীন পরিচালক প্রণব বিনোদ আদানি। অর্থ সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার এ বৈঠক উপস্থিত ছিলেন। 

বৈঠক শেষে প্রণব বিনোদ আদানি সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের বিনিয়োগের অনেক সম্ভবনা আছে। আমরা বাংলাদেশে নতুন করে বিনিয়োগ করব।

বৈঠক সূত্র জানায়, আদানি গ্রুপ বাংলাদেশে নতুন করে ১৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিক্রি করার প্রস্তাব করেছে কয়েক মাস আগেই। এ নিয়ে কয়েকবার দুই পক্ষের বৈঠক হয়েছে। তবে বাংলাদেশে ভয়াবহ ডলার সংকটের কারণে এ প্রস্তাব বেশি দূর এগোয়নি। তারা বাংলাদেশের সঞ্চালন লাইনে বিনিয়োগ করতে চায়। এছাড়া তারা অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

জানা গেছে, মার্কিন ডলারে আদানির বিদ্যুতের পাওনা পরিশোধের শর্ত থাকার কারণে এ পাওনা দিতে পারছে না বাংলাদেশ। কারণ সরকারি ব্যাংকগুলোর হাতে পর্যাপ্ত ডলার নেই। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারত থেকে বিদ্যুৎ কেনা বাবদ বাংলাদেশের বকেয়া রয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আদানির বকেয়ার পরিমাণ তিন হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা। তবে এটিও পুরো বকেয়া নয়, কোম্পানিটি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রি বাবদ আরও বেশি পরিমাণ অর্থ পায়।

সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, আদানি পাওয়ারের সেপ্টেম্বরের আংশিক এবং অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ মাসের পুরো বিল বকেয়া রয়েছে। এ সময়ে কোম্পানিটির মোট বকেয়ার পরিমাণ তিন হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা। এর সাথে মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসের হিসাব যোগ করা হলে বকেয়ার পরিমাণ আরও বাড়বে।

উল্লেখ্য, দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে ২০১৭ সালে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করে বিপিডিবি। চুক্তি অনুসারে কেন্দ্রটি থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ। নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের সিংক্রোনাইজিং থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক উৎপাদনে (সিওডি) যাওয়ার আগ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি ব্যয় বিপিডিবিকে দিতে হচ্ছে।

তবে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরুর আগেই এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লার যে দাম ধরা হয়েছিল, তা নিয়ে আপত্তি তোলে বিপিডিবি। অনেকে আদানির সাথে করা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি বাংলাদেশের স্বার্থে অনুকূলে নয় বলে মন্তব্য করেছে।

এদিকে, বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব বাজেটের আওতায় অর্থ বিভাগ থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বিপিডিবি) বিদ্যুৎ ক্রয়-বিক্রয়ের ঘাটতি বাবদ ভর্তুকির অর্থ ছাড়ের জন্য গত এপ্রিলে অর্থ বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়।

ভারতের আদানি গ্রুপের গড্ডা কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। এ সময়ে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারকে গুনতে হবে এক লাখ আট হাজার ৩৬১ কোটি টাকা (১১ দশমিক ০১ বিলিয়ান ডলার)। এ অর্থ দিয়ে কমপক্ষে তিনটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। ‘আদানি গড্ডা কোল পাওয়ার প্ল্যান্ট: অ্যান অ্যাকিলিস হিল অব দ্য পাওয়ার সেক্টর অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা-বিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি) ও ভারতীয় গ্রোথওয়াচ যৌথভাবে প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করা হয়েছিল। প্রতিবেদনের অন্যতম লেখক ও বিডব্লিউজিইডি’র সদস্য সচিব হাসান মেহেদী বলেন, আদানিকে ২৫ বছরে যে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হবে তার পরিমাণ কর্ণফুলী টানেলের মোট বাজেটের ৯ গুণ এবং ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পের চারগুণেরও বেশি। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, আদানি গ্রুপ প্রতি বছর কমপক্ষে তিন হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা (৪২.৩৩ কোটি ডলার) ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে নিয়ে যাবে, যা বাংলাদেশের জনগণের উপকার না করে বরং আদানি গ্রুপকে আরও ধনী হওয়ার সুযোগ করে দেবে।