জমি-ফ্ল্যাটে ১৫% কর, নগদ অর্থ বৈধ করার সুযোগ
বাজেট নিয়ে এবার খুব বেশি কাটাছেঁড়া করার সুযোগ পাচ্ছেন না অর্থমন্ত্রী। কারণ, একদিকে টাকার সংকট, অন্যদিকে লাইনচ্যুত হওয়া অর্থনীতিকে পথে আনার চেষ্টা। তবু, জীবনের প্রথম বাজেট স্মরণীয় কিংবা আলোচনার কেন্দ্রে রাখতে আনছেন বেশকিছু পরিবর্তন।
বরাবরই তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়া কালো টাকা সাদা করার সুযোগ এবার আরো বিস্তৃত করছেন নিজের প্রথম বাজেটেই। আগে এই সুযোগ কেবল জমি বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে থাকলেও নতুন বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বৈধ করা যাবে নগদ অর্থও।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বাজেট বক্তৃতায় প্রত্যক্ষ কর-আয়কর অধ্যায়ে এ বিষয়টি উপস্থাপন করেছেন।
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়েছে ,তীব্র গরমে এক রকম মৌলিক চাহিদার পর্যায়ে চলে যাওয়া এসি, রেফ্রিজারেটরের কাঁচামাল আমদানিতে থাকা শুল্ক বাড়িয়ে ১৫ শতাংশের প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন তিনি। ফলে, ২০২৬ সালের পর এসব পণ্য কিনতে ব্যয় বাড়বে ভোক্তাদের। এমনকি, আরেক দরকারি পণ্য পানির ফিল্টারে কর বসিয়ে চিন্তা বাড়াচ্ছেন নিরাপদ পানি পান নিয়ে। একই সাথে, ১০ শতাংশ কর ধার্য করে এলইডি বাতির উৎপাদন ব্যয় বাড়ানোর ইঙ্গিত থাকছে আসছে বাজেটে।
নতুন বাজেটে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিসের ব্যয় কিছুটা কমিয়ে স্বস্তি দেয়ার কথা ভাবছেন অর্থমন্ত্রী। এই খাতের প্রধান দুই উপকরণ- ফিল্টার এবং সার্কিটে থাকা ১০ শতাংশের আমদানি শুল্ক নামিয়ে আনছেন ১ শতাংশে।
দেশে বর্তমানে মোটরসাইকেল শিল্পের বিকাশ ধারা অব্যাহত রাখতে যন্ত্রপাতি বা ইঞ্জিন আমদানির ওপর থাকা শুল্ক প্রত্যাহার করতে যাচ্ছেন তিনি। তবে, কিছু ব্যয় বাড়াচ্ছেন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কের উন্নয়নে ব্যবহৃত পণ্য-সামগ্রীতে।
ব্যক্তি পর্যায়ে কর আদায় ও প্রয়োজনে অব্যাহতির মাধ্যমে বৈষম্য কমানোর কথা বলা হলেও এবার সে পথে হাঁটছেন না অর্থমন্ত্রী। কারণ, দীর্ঘ সময়ের চড়া মূল্যস্ফীতি সত্ত্বেও করমুক্ত আয়ের সীমা রেখেছেন আগের সাড়ে তিন লাখ কোটিতেই। অন্যদিকে, হাত দেননি ধনীদের সম্পদের ওপর থাকা সারচার্জ বা অধিশুল্কের হারে।
এসব ব্যাপারে সাবেক অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, একদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে, অন্যদিকে সব ধরনের ঋণের সুদই বেড়ে গেছে। ফলে ঋণের সুদ খরচ বাড়বেই। আগামী অর্থবছরে ঋণের সুদ খরচ বড় হওয়ার আরেকটি কারণ আছে। সেটি হচ্ছে, চলতি অর্থবছরে অনেক পাওনা পরিশোধ করা হয়নি। আগামী অর্থবছরে সেগুলো দিতে হবে।
ঋণ ব্যবস্থাপনা নিয়ে মাহবুব আহমেদ বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয় সরকার, যেগুলো পরে আদায় করা যায় না। এখানে একটা বড় সমস্যা আছে। এতে হাত দেওয়া দরকার। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, রাজস্ব আয় বৃদ্ধির ব্যাপারে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। রাজস্ব আয় থাকলে এত ঋণ নিতে হতো না, এত সুদও পরিশোধ করতে হতো না।