মার্চ প্রান্তিককে খেলাপি বেড়েছে ২৫ শতাংশ

চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা। যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় বেড়েছে ২৫ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী এই তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, মার্চ শেষে দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি বা মোট ঋণের ১১ দশমিক ০১ শতাংশ, যা দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। সে সময়ে মোট ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণ ছিল ৯ শতাংশ।

খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির কারণ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক মিডিয়াকে বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। পাশাপাশি খেলাপি হওয়ায় সুদ যুক্ত হওয়ার কারণেও খেলাপি ঋণ বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, খেলাপি ঋণ কমাতে ব্যাংকগুলোতে তদারকি বৃদ্ধির পাশাপাশি পর্যবেক্ষক ও সমন্বয়ন কাজ করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। ফলে মার্চ পর্যন্ত ৩ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে সরকারি-বেসরকারি, বিদেশি ও বিশেষায়িত সব ধরনের ব্যাংকেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ডিসেম্বরে সরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ ছিল ৬৫ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা, যা মার্চে বেড়ে হয়েছে ৮৪ হাজার ২২১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ মার্চে বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৩০ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা এবং অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ২০ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা।

এ ছাড়া সরকারি খাতের বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ৮ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসির (বিডিবিপি) খেলাপি ঋণ ৮৭৩ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে সরকারি ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ২০ দশমিক ৯৯ শতাংশ খেলাপি ছিল, যা মার্চে বেড়ে হয়েছে ২৭ শতাংশ।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৭০ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা, যা মার্চে বেড়ে হয়েছে ৮৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ ঋণ খেলাপি ছিল, যা মার্চে বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ।

বিদেশি ব্যাংকগুলোতে ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা, যা মার্চে বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে বিদেশি ব্যাংকগুলোর ৪ দশমিক ৮২ শতাংশ ঋণ খেলাপি ছিল, যা মার্চে বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক— বিশেষায়িত এই দুই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে, খেলাপি ঋণের হার ১৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ।

 

এখন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকেও খেলাপি ঋণের লাগাম পরানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি, সাবেক ও বর্তমান আমলাদের পর্ষদে পরিচালক নিয়োগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়োজিত পর্যবেক্ষকও খেলাপি ঋণ কমাতে পারছে না। ফলে তিন মাসে খেলাপি ঋণ এত পরিমাণ বেড়েছে বলে মনে করছেন খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ করা ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের শর্তের একটি হলো ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার কমানো। ২০২৪ সালের মধ্যে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে বলেছে সংস্থাটি। তবে উল্টো এখন খেলাপি ঋণ বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংকের বড় গ্রাহকদের প্রায় সবাই সরকারের ঘনিষ্ঠ ও বিভিন্ন পদে রয়েছেন। তাদের ঋণগুলো তদারকির বাইরে থেকে যাচ্ছে। আগে ভালো ছিল, এমন কিছু ঋণও এখন খেলাপি হয়ে পড়ছে। খেলাপি চিহ্নিত করার নতুন নিয়মের কারণে ভবিষ্যতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে তারা মনে করেন।

চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা। যা আগের প্রান্তিকের তুলনায় বেড়েছে ২৫ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী এই তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, মার্চ শেষে দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি বা মোট ঋণের ১১ দশমিক ০১ শতাংশ, যা দেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

 

গত বছরের ডিসেম্বরের শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। সে সময়ে মোট ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণ ছিল ৯ শতাংশ।