বাজেটে ভারতীয় পণ্য আমদানির সুবিধা

ভারতীয় পণ্য বর্জনের প্রচারণা বা ‘ভারত খেদাও’ আন্দোলন  শুরু হয়েছিল গত ফেব্রুয়ারিতে। সামাজিক মাধ্যমের বদৌলতে এর প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও । কিন্তু  মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে এখন সেটি রাজনৈতিক চেহারায় রূপ নিয়েছে।  শুধু তাই নয় ভারতীয় পণ্যের বাজারকে চাঙা করতে কৌশলে নানা উদ্যোগও নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

এ আন্দোলনের জন্য ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি কমেছে ব্যাপক হারে। এর সঙ্গে সঙ্গে এ দেশে ভারতীয় কোম্পানির বিক্রি তলানিতে এসে ঠেকেছে। ভারতের বড় কোম্পানি ম্যারিকো। প্রতিষ্ঠানটির পণ্য চলতি বছর বাংলাদেশে সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম বিক্রি হয়েছে। এ অবস্থায় সদ্য ভারতের সমর্থন নিয়ে আসা এক ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকার বেকায়দায় পড়েছে।

এখন ভারতীয় পণ্যেও রপ্তানি কমে যাওয়া আওয়ামী সরকারকে এক ধরনের গভীর চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। অবশ্য ভারতের মোট রপ্তানির মাত্র ৩ শতাংশ আয় বাংলাদেশে আসে।

গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সুনির্দিষ্টভাবে ভারতীয় পণ্য বর্জনের পক্ষে সামাজিক মাধ্যমের অনেক ব্যবহারকারী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে বেশ কিছু গ্রুপও খোলা হয়েছে, যেসব গ্রুপে হাজার হাজার মানুষ সদস্য হয়েছেন।

বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি কমে যাওয়া এবং ভারতীয় কোম্পানিগুলোর বিক্রি ব্যাপক ধস হওয়ার কারণে ‘ভারত খেদাও’ আন্দোলনের অনেকেই দাবি করেছেন, তারা এখন ভারতীয় পণ্যের বদলে দেশের বা অন্য দেশের পণ্য ব্যবহার করতে শুরু করেছেন।

যেসব নিত্য ব্যবহার্য ভোগ্যপণ্য ভারত থেকে আমদানি করা হয়, সেগুলোর বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশি বিভিন্ন কোম্পানির উৎপাদিত পণ্য ব্যবহারে আহ্বান জানাচ্ছেন তারা। সঙ্গে জুড়ে দিচ্ছেন সেসব পণ্যের ছবি বা বিজ্ঞাপন।

তারা তালিকায় রেখেছেন সাবান, শ্যাম্পু, ফেইসওয়াশ, টুথপেস্টের মত টয়লেট্রিজ এবং বোতলজাত পানি, জীবাণুনাশক, মশানাশকসহ আরো নানান পণ্য। গাড়ি বা মোটরসাইকেল টায়ার থেকে শিশুখাদ্যের কথাও লিখছেন অনেকে। ভারতীয় পণ্যের কোম্পানিগুলো বিক্রি ধরে রাখতে বিভিন্ন ছাড় দেওয়ার ঘোষণা দিলেও তা কোন কাজে আসছে না।

অর্থ মন্ত্রী আবুল  হাসান মাহমুদ আলী ৬ জুন জাতীয় সংসদের বাজেট উপস্থান করেন। সেখানে  ভারতের রপ্তানিকারকদের সুবিধা দেওয়ার জন্য বেছে বেছে সেই দেশের পণ্যের আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। অনেকেই বলছেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরিত হয়ে উন্নয়নশীল বা মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি লাভ করেছে। মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় বাংলাদেশে যেহেতু আছে, অবশ্যই আমদানি শুল্ক প্রতি বছর কমিয়ে শূন্য করে ফেলতে হবে।

অর্থনীতিবিদ এবং পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর  বলেন, সরকার মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে আমদানি শুল্ক কমাতেই পারে। বাজেটে আমদানি শুল্ক কমানো ভারতীয় পণ্য বর্জন মুভমেন্টকে কোন ভাবে প্রতিহত করতে পারে কি না তা নিয়েও সন্দেহের বিষয় রয়েছে। তবে আমদানি শুল্ক কমানো অবশ্যই বাংলাদেশের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। মধ্যম আয় দেশের শর্ত হিসেবে অনেক আগেই আমদানি শুল্ক কমানোর বিষয় শুরু করা উচিত ছিল। এর ফলে আমরা লাভবান হতাম।

উল্লেখ্য ২০২২ সালে ভারতের বাজেটে বাংলাদেশের জন্য ধার্য হয়েছিল ৩০০ কোটি রুপি। আগের বছর যেটি ছিল ২০০ কোটি রুপি। জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে বাজেট ঘোষণায় কিছু পণ্যে আয়কর, শুল্ক, ভ্যাট কমানো হয়েছে। অনেকেই ধারণা করছে এসব পণ্যের দাম কমবে আসবে।

কিন্তু পণ্যগুলো যে ভারত থেকে বেশি আমদানি হয়ে থাকে তা বাজারে বা শহরের সুপার শপ গুলোতেই একটু লক্ষ্য করলেই এ বিষয়টি বোঝা যাবে।

গুঁড়া দুধ: প্যাকেটজাত গুঁড়া দুধ আমদানিতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এতে আমদানিকৃত গুঁড়া দুধের দাম কমতে পারে। এ ক্ষেত্রে শুল্ক কমানো জন্য ভারতের বিভিন্ন ব্রান্ডের দুধ দেশে ব্যাপক হারে আমদানি হবে সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। দেশি ডিপ্লোমা, নিডো, মার্কস, নেসলে এভরিডে বড় ধরনের প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে যাবে। সেইখানে ভারতীয় গুঁড়া দুধের ব্রান্ডগুলো যেমন আমুল, মাদার ডাইরি, ত্রমুলা মিল্ক পাউডার আবার বাজার পাবে।

চকোলেট: চকোলেট আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হচ্ছে। এ কারণে ভারত থেকে আসা সব বয়সীদের পছন্দের চকোলেটের দাম কমতে দেখা যাবে। ভারতীয় পণ্যের মধ্যে কিটক্যাট, নেসলে, আমুল, মার্স চকোলেট রয়েছে।

৩০টি নিত্য পণ্য: নিত্যপ্রয়োজনীয় ৩০টি পণ্য ও খাদ্যশস্য সরবরাহের ওপর উৎসে কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে পেঁয়াজ, রসুন, মোটর, ছোলা, চাল, গম, আলু, মসুর, ভোজ্য তেল, চিনি, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ, ডাল, ভুট্টা, ময়দা, আটা, লবণ, গোলমরিচ, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, খেজুর, তেজপাতা, পাট, তুলা, সুতা এবং সব ধরনের ফলসহ ৩০টি পণ্য। ফলে কমতে পারে এসব পণ্যের দাম। এসব পণ্য বেশিভাগই ভারত থেকে আসে। শুল্ক কমে গেলে এসব পণ্য দেশীয় পণ্যগুলোকে প্রতিযোগিতায় ফেলে দেবে ।

ল্যাপটপ: ল্যাপটপ আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হলেও ভ্যাট প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এতে ৩১ শতাংশের পরিবর্তে ২০.৫০ শতাংশ শুল্ক-কর দিতে হবে বিধায় ল্যাপটপের দাম কমতে পারে। এখানে ভারতীয় ল্যাপটপগুলো চাইনিজ পণ্যের থেকে কম দামে বাংলাদেশে বিক্রি করতে পারবে।

সুইস-সকেট: বাসা বাড়িতে ব্যবহৃত সুইস-সকেটের দাম কমতে পারে। কারণ দেশে উৎপাদিত সুইস-সকেট, হোল্ডার উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামালের আমদানি শুল্ক কমানো হচ্ছে। ভারত থেকে এ সুইস সকেট অনেক আমদানি হয়ে থাকে।

ডেঙ্গু কীট: ডেঙ্গু কীটের আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়ায় কমতে পারে এই স্বাস্থ্য উপকরণটির দাম। তবে সরকার বিভিন্ন সময়ে ভারত থেকেই ডেঙ্গু কীট কিনে থাকে। ইউরোপ স্ব ক্রিয়া থেকে সরকার ভাল মানের ডেঙ্গু কীট কিনতে পারে।