ডিমের দাম বাড়াচ্ছে তেজগাঁও বাজার

গত ৬ জুন ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণার পর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে নিত্য পণ্যের বাজারে। বিশেষ করে ডিমের বাজার আরও অস্থির হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দফায় দফায় দাম বাড়লেও সরকারের কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ না থাকায় সাধারণ মানুষের খাদ্য তালিকা থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ডিম। সোমবার সারাদেশে ডিমের বাজারে অস্বাভাবিক দরের বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে।

এদিকে পোলট্রি শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিন্ডিকেটের কারণে ডিমের দর অযৌক্তিক ভাবে বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালালেও ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণকারী রাজধানীর তেজগাঁও পাইকারী বাজারে কোনো প্রকার অভিযান চালাচ্ছে না। বিশেষ করে রাজধানীর ডিমের দাম এই বাজারই নিয়ন্ত্রণ করে বলে অভিযোগ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দেশের বিভিন্ন স্থানে খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার দেশের কোথাও কোথাও ফার্মের লাল ডিমের ডজন ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়। আর সাদা ডিম এর থেকে ১০ টাকা কমে বিক্রি হয়। পাইকারী পর্যায়ে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয় ১৫২ থেকে ১৫৫ টাকা।   

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, বর্তমানে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে তেজগাঁও আড়ত। এই আড়ত থেকেই এসএমএসের মাধ্যমে সারাদেশে ডিমের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তারা তিন দিন পর পর খামারিদের কাছ থেকে ডিম কেনেন। এসএমসের মাধ্যমে ঘোষিত মূল্যের চেয়েও এক টাকা কমে খামারিদের কাছ থেকে আড়তদাররা ডিম কেনেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ওই আড়তে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ লাখ ডিম বিক্রি হলেও তারা সারাদেশে চার কোটি ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। প্রতিদিন তারা বাজারদর জানিয়ে দেয় সারাদেশের বিক্রেতা এবং খামারিদের। তারা এখন ডিমের বাজারে সবচেয়ে বড় সিন্ডিকেট।

বাজারের একাধিক দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই বাজারের ব্যবসায়ীরাই দাদন দিয়ে খামারিদের জিম্মি করে কম দামে ডিম বিক্রি করতে বাধ্য করেন। প্রতি তিন দিন পর পঞ্চম দিনে গিয়ে খামারিদের কাছ থেকে ডিম কেনার আগের দিন ডিমের বিক্রি রেট কমিয়ে দেওয়া হয়। ডিম কেনার পর আবার বাড়িয়ে দেওয়া হয় রেট।

তেজগাঁও ডিমের আড়তে রাইসা এন্টারপ্রাইজ ও সেলিম ট্রেডার্সের কাছে ডিম সরবরাহ করে ময়মনসিংহের ভালুকার শিকদার পোলট্রি ফিড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতি দিন প্রায় পৌনে এক লাখ পিস ডিম বিক্রি করে থাকে তারা। এ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার শামীম আহমেদ জানান, বর্তমানে ডিমের বাজার চড়া। কোরবানির ঈদের সময় বাজার পড়বে।

বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান কার্যালয় থেকে পাঠানো এক তথ্যে বলা হয়, বর্তমানে এক পিস ডিম উৎপাদনে প্রান্তিক খামারিদের খরচ হয় ১০ টাকা ২৯ পয়সা। প্রতিদিন সারা দেশে মোট ডিম উৎপাদন হয় সাড়ে ৪ কোটি পিস। আর সারাদেশে প্রতিদিন ডিমের চাহিদা থাকে ৪ কোটি পিস। সে হিসেবে বাজারে ডিমের কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা ডিমের অবৈধ মজুত করে ডিমের দাম বাড়িয়ে দেয়।

এদিকে ডিমের দাম বাড়ার পর অনেকেই ডিম কেনা কমিয়ে দিয়েছেন বলে জানাচ্ছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। ফেনীর এক পাইকারী ব্যবসায়ী জানান, আগে প্রতিদিন একটি গাড়িতে ৮০ থেকে ৯০ হাজার ডিম বিভিন্ন বাজারে পাঠানো হতো। এখন সেখানে ৪০ থেকে ৫০ হাজার পিসের অর্ডার আসছে। জনগণের মধ্যে ডিম ভীতি কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সরকারের অভিযানের পরও ডিমের বাজারে অস্থিরতা চলছে। কেন দাম বাড়ছে তা সামনে আসছে। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হিমাগার থেকে অবৈধভাবে মজুত করা ডিম ধরা পড়ছে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের কারসাজিও সামনে এসেছে। কে বা কারা কারসাজি করছে তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় এনে বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। সাধারণ মানুষের পুষ্টির এই উপাদানটাও নাগালের বাইরে চলে গেলে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দেবে।