দেশে কমেছে কোটিপতির সংখ্যা!
কয়েক দফা বাড়ার পর এবার কমেছে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা। পাশাপাশি এসব হিসাবে টাকার রাখার পরিমাণও কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) তিন মাসে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা কমেছে এক হাজার ১৮টি। আমানত কমেছে ১ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রতি বিভিন্ন কারণে ব্যাংক খাতের ওপর মানুষের আস্থা কমছে। এর প্রভাব পড়ছে ধনী-গরিব সবশ্রেণির আমানতকারীদের ওপর।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ১ কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৮৯০টি। কোটি টাকার ওপরে এসব ব্যাংক হিসাবে মোট জমা আছে ৭ লাখ ৪০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টি। কোটি টাকার ওপরে এসব ব্যাংক হিসাবে মোট জমা ছিল ৭ লাখ ৪১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যাবধানে কোটিপতির সংখ্যা কমেছে এক হাজার ১৮টি। এসব অ্যাকাউন্টে আমানত কমেছে এক হাজার ১১ কোটি।
চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৭১ হাজার ২০২টি। এসব হিসাবের বিপরীতে আমানত জমা হয়েছে ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা।
তবে কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি নাগরিকদের হিসাব নয়। কেননা অনেক ব্যক্তিই যেমন ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখেন, তেমনি অনেক প্রতিষ্ঠানও তা করেন। অর্থাৎ কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব বলতে যুগপৎ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উভয়ের কথাই বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তারও কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাবও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯১ হাজার ৬২৩টি। যেখানে জমা ছিল ১ লাখ ৯৪ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি ১ টাকা থেকে ১০ কোটির ১২ হাজার ৪৪৬টি হিসাবে জমার পরিমাণ ৮৮ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা ছিল ৯২ হাজার ৫১৬টি। যেখানে জমা ছিল এক লাখ ৯৪ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি ১ টাকা থেকে ১০ কোটির ১২ হাজার ৬৫২টি হিসাবে জমার পরিমাণ ছিল ৮৯ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা।
এছাড়া ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা রয়েছে ৪ হাজার ৩৯৬টি, ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটির মধ্যে ১ হাজার ৯৬১টি, ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটির মধ্যে ১ হাজার ২১১টি, ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৮৭৫ টি আমানতকারীর হিসাব। আর ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৫০১টি এবং ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৩৬৯টি, ৪০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা ৬৮১টি। তাছাড়া ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা ১ হাজার ৮২৬টি। যা গত ডিসেম্বর প্রন্তিকে ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৮২টি।
এছাড়া ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটির মধ্যে ২ হাজার ২টি, ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটির মধ্যে এক হাজার ৩৪৫টি, ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটির মধ্যে ছিল ৯১২টি আমানতকারীর হিসাব। আর ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৫১২টি এবং ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটির মধ্যে ছিল ৪৮০টি, ৪০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা ছিল ৭৩৮টি, ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮১২টি।
দেশে প্রকৃত কোটিপতির সঠিক হিসাব পাওয়া যায় না। ফলে কত মানুষের কোটি টাকা রয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান মেলে না। তবে ব্যাংকে কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা থেকে একটা ধারণা পাওয়া যায়। কোটি টাকার ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা করোনা মহামারির পর থেকে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭৫ সালে কোটি টাকার ব্যাংক হিসাব ছিল মাত্র ৪৭টি, যা ২০১৫ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭ হাজার ৫১৬টি। করোনা মহামারির শুরুতে ২০২০ সালের মার্চে এই সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫, যা বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজারে ৮৯০ উন্নীত হয়েছে।