ভারতে বৃদ্ধির খবরে বাংলাদেশেও পেঁয়াজের দাম বাড়াচ্ছে 'সিন্ডিকেট'
ভারতের পেঁয়াজের দাম সরাসরি বাংলাদেশের পেঁয়াজের দামে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, গত দুই সপ্তাহে বাজারে পেঁয়াজের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে, আরো বাড়বে।
ভারতে এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বাংলাদেশি মূল্যে প্রায় ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, অর্থনীতির ভাষায় ভারতীয় পেঁয়াজকে এখন বিকল্প পণ্য হিসেবে ধরা যেতে পারে। বিকল্প পণ্য ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়লে, দেশি পেঁয়াজের দাম হু হু করে বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক।
উল্লেখ্য, গত মার্চে জমি থেকে পেঁয়াজ উত্তোলন শেষে দেশি পেঁয়াজ মজুত করে রাখা হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সেই মজুত রাখা পেঁয়াজের দাম বাড়বে ভারতীয় পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির খবরে।
স্থানীয় বাজারে দুই দিন আগে ৬৫ টাকায় বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন ৮০ টাকায় উঠেছে। কোরবানি ঈদের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে ১৭ জুন। অনেকে ধারণা করছেন, এ উৎসবের আগেই দেশি পেঁয়াজ দাম কেজি প্রতি ১০০ টাকায় গিয়ে ঠেকবে।
এদিকে ভারতীয় ইকোনমিক টাইমস পত্রিকা বলছে, বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় গত দুই সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ। ঈদুল আজহার আগে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার মধ্যেই দেশটিতে পেঁয়াজের এ মূল্যবৃদ্ধি ঘটল।
ইকোনমিক টাইমসের খবরে আরো বলা হয়েছে, এ পরিস্থিতিতে ভারতের ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ মজুত করে রাখছেন। তাদের প্রত্যাশা, কেন্দ্রীয় সরকার পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে, সেগুলো শিথিল করা হবে।
পেঁয়াজের অন্যতম বড় বাজার মহারাষ্ট্র রাজ্যের নাসিকের লাসালগাঁওয়ে সোমবার পাইকারি হারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৬ রুপিতে। গত ২৫ মে এই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ১৭ রুপিতে। সবচেয়ে ভালো মানের পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে ৩০ রুপি ছাড়িয়ে গেছে, যদিও এই মানের পেঁয়াজ খুব কম পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে।
খবরে বলা হয়েছে, চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকার কারণেই মূলত পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। জুন মাস থেকে বাজারে যে পেঁয়াজ আসে, তা মূলত কৃষক ও ব্যবসায়ীরা তাঁদের মজুত থেকে সরবরাহ করেন। তবে কৃষক পেঁয়াজ বিক্রি কমিয়ে দিয়েছেন, কারণ তারা মনে করছেন, ২০২৩-২৪ রবি মৌসুমে উৎপাদন কম হবে এবং পেঁয়াজের দাম বাড়বে।
ভারত থেকে এখন খুব বেশি পেঁয়াজ রপ্তানি হচ্ছে না। এর কারণ, রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা আছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ার কারণ আগামী ১৭ জুন যে ঈদুল আজহা উৎসব পালিত হবে, সেটি। নাসিকের ব্যবসায়ী বিকাশ সিং বলেন, মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজের অনেক চাহিদা রয়েছে, বিশেষ করে দক্ষিণের রাজ্যগুলো থেকে।
ইকোনমিক টাইমসকে ভারতের হর্টিকালচার প্রডিউস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অজিত শাহ বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার একটি কারণ হলো, কৃষক ও মজুতকারীরা আশা করছেন, সরকার সম্ভবত রপ্তানি শুল্ক প্রত্যাহার করবে। এ ধারণার ওপর ভিত্তি করে তারা পেঁয়াজ মজুত করছেন এবং আশা করছেন যে দাম আরও বাড়বে।’
মতিঝিল এলাকার বেসরকারি চাকরিজীবী আরিফ হোসেন বলেন, সব জিনিসের দাম যেমনে বাড়ছে, আমাদের বেতন তো আর বাড়েনি। কয়েকদিন আগেও এই দেশি পেঁয়াজ কিনেছি ৬৫ টাকা দিয়ে, আর আজ তা কিনতে হচ্ছে ৮০ টাকা দিয়ে। বাজারে ভারতীয় বড় পেঁয়াজ ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
শ্যামবাজার পাইকারি পেঁয়াজ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মাজেদ দ্য মিরর এশিয়াকে বলেন, ‘চাহিদার আলোকে দেশি পেঁয়াজের সরবারহ না থাকায় দাম বেড়েছে, সেই সঙ্গে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা আমদানি করছে অত্যন্ত সীমিত। এই দুই কারণে মূলত দাম বেড়েছে।’
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান দ্য মিরর এশিয়াকে বলেছেন, দেশের পেঁয়াজ বড় ধরনের মজুত থাকলেও বিকল্প পণ্য ভারতের পেয়াঁজের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশি সিন্ডিকেট ভারতীয় পেঁয়াজের সঙ্গে সমান তালে দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে। কেউ দেখার নেই।
তিনি বলেন, আমি নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার সম্পূর্ণ বিষয়টা নিয়ে হতাশ হয়ে পড়েছি। সরকারের কোন পদক্ষেপ দাম কমানোর ক্ষেত্রে কাজে আসে না। শুধু এ দেশের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা হুজুগে দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে।
এদিকে প্রায় ছয় মাস বন্ধ থাকার পর পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে ভারত সরকার। তবে রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছেন আমদানিকারকরা।
চলতি অর্থবছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩৬ লাখ মেট্রিক টন। আর দেশে চাহিদা ২৮ থেকে ৩০ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ, ঘাটতি নয়, বরং বাড়তি উৎপাদন হচ্ছে পেঁয়াজ। এমন তথ্য খোদ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের। তারপরও পেঁয়াজ আমদানি না করলে সারা বছরই অস্থির থাকছে পেঁয়াজের বাজার।