সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণ ৮ লাখ কোটি টাকা ছাড়ালো
সরকারের রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ায় খরচ মেটাতে ঋণের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। গত অর্থবছরে দেশের ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং উৎস থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
চলতি অর্থবছরের মার্চভিত্তিক তথ্য মতে, সরকারের অভ্যন্তরীণ ঋণের অঙ্ক সাড়ে ৮ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এক বছরে এটি বেড়েছে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি। প্রস্তাবিত বাজেটে সুদ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা; যা মোট বাজেটের ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ।
বুধবার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ সালের মার্চে সরকারের অভ্যন্তরীণ উৎসের পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ ছিল সাত লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকা, যা ২০২৪ সালের একই মাসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকায়। হিসাবমতে, এক বছরে এ উৎস থেকে সরকারের নেয়া ঋণের পরিমাণ এক লাখ ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি বেড়েছে।
এদিকে সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণ বাড়লেও চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস জুলাই থেকে মার্চে অবশ্য অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের ঋণ কমেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ সরকারের অভ্যন্তরীণ উৎসের প্রকৃত ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬৫ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকারের ঋণ ১৮ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা কমেছে।
সরকার সঞ্চয়পত্র, বিল ও বন্ড বিক্রি করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে ব্যাংকবহির্ভূত ঋণ নেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ও তফসিলি ব্যাংক থেকে সরকারের নেয়া সরাসরি ঋণই হলো ব্যাংক খাতের ঋণ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্যান্য তফসিলি ব্যাংক থেকে সরাসরি ঋণ নিয়েছিল ৩৪ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ব্যাংকে সরকারের প্রকৃত ঋণ ছিল ৬১ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। অর্থাৎ নয় মাসে এ খাত থেকে সরকারের ঋণ ২৬ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা কমেছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে ঋণ দেওয়ার জন্য টাকা ছাপানোয় বাজারে নতুন টাকা আসছে। বাজারে চাহিদা তৈরি হবে। এ কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার যদি ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়, তাহলে মূল্যস্ফীতির ওপর খুব একটা প্রভাব পড়বে না। নতুন অর্থবছরে উদ্বেগ এটাই । সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া বেড়েছে। প্রয়োজনীয় রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা এর মূল কারণ।’