কীসের উন্নত-স্মার্ট বাংলাদেশ, প্রশ্ন সালেহউদ্দিন আহমেদের

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ

বাজেটে গরিবদের খুশি হওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, এটা গতানুগতিক বাজেট। বাজেটের যে স্লোগান সেখানে খুশি হওয়ার কিছু নেই। গরিবদের খুশি হওয়ার মতো কিছু নেই। ব্যবসায়ীদের জন্য কিছু নেই। 

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) ইকোনমিক রিপোর্টাস ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট পরবর্তী’ এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, উন্নত দেশ, আমরা কতটুক উন্নত, ১২৫টি দেশের মধ্যে ১০৫। পাকিস্তানও আমাদের চেয়ে ইন্টারনেটে এগিয়ে। ইন্টারনেট, মোবাইল, টেলিফোন সব জায়গায় ট্যাক্স। স্পিড নেই, ব্যান্ডউইথ নেই। কিসের উন্নত-স্মার্ট বাংলাদেশ।

তিনি আরও বলেন, বাজেটে কিছু প্রায়োরিটি সেট করা দরকার ছিল। মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ, এসব বিষয়ে লক্ষ্য দেওয়া দরকার ছিল। ১ লাখ ৩৭ হাজার ব্যাংক থেকে নিয়ে আসলে বেসরকারি খাত ব্যবসা করতে পারবে না। ট্যাক্স আসবে কোন জায়গা থেকে? সামর্থ্যবানদের থেকে ট্যাক্স নেন। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ কর বাড়ান। ভ্যাট বাড়ালে সবার ওপর এর প্রভাব পড়ে।

তিনি বলেন, সরকার হলো সূর্য ও মেঘের মতো। সূর্যের মতো সবাইকে দিতে হবে, আর মেঘের মতো কিছু লোককে সাপোর্ট দেবে। কালিদাসের মেঘনাদবধ কাব্যে এটা বলা আছে। আমরা পতাকা, ভূখণ্ড, জাতীয় সংগীত পেলেও ভেতরের পিলার নড়বড়ে।

সেমিনারে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এ কে এনামুল হক বলেন, বৈদেশিক বিনিয়োগের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য এখন বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চায়ন নিশ্চিত করতে হবে। বিনিয়োগকারীরা মুনাফা যদি বিদেশে না নিয়ে যেতে পারে তাহলে তারা বিনিয়োগ করবে না।

তিনি আরও বলেন, দেশের শিল্পের দেখাশোনা করার জন্য কোনো মন্ত্রণালয় নেই। একজন শিল্পমন্ত্রী আছেন তিনি সরকারি শিল্পকারখানা দেখেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আছে, সেখানকার মন্ত্রী বেসরকারি ব্যবসা-বাণিজ্য দেখেন। দেশের শিল্প দেখবে এমন মন্ত্রণালয় দেশে নেই।

অধ্যাপক এনামুল হক বলেন, যত ধনী লোক আছে সবাই বিদেশে চলে যেতে চায়। শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। বাংলাদেশে ব্যবসা করে বিদেশে গিয়ে সেরা ধনী লোক হয়ে বসে আছে। তার মানে হলো, তারাও দেশে থাকতে চাইছে না। এটা রোধ করতে হলে অর্থনীতিকে রিফর্ম করতে হবে। অর্থনীতিকে রিফর্ম না করলে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে।

ইআরএফ সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. মনজুর হোসেন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।