এক সপ্তাহে ৭৩ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা
ঈদ-উল-আজহা সামনে রেখে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে ৭২ কোটি ৬২ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের প্রবাসী আয় আসার এই তথ্য দিয়েছে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই পরিমাণ অর্থ বৈধ চ্যানেলে পাঠালেও হুন্ডির মাধ্যমেও বিপুল পরিমাণ অর্থ আসে।
সাধারণ সময়ে প্রবাসীরা যে পরিমাণ টাকা পাঠান তার চাইতে বেশি পাঠান দুই ঈদের আগে। বিশেষ করে কোরবানির ঈদে কোরবানি দেওয়ার কারণে দেশে থাকা আত্মীয়-স্বজনকে অন্যান্য মাসের তুলনায় বেশি রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পাঠান বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এবারের কোরবানির ঈদের আগেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
তবে দ্বিতীয় সপ্তাহের তথ্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি। আগামী সোমবার পবিত্র ঈদুল আজহা। এখনো প্রবাসী আয় আসার সুযোগ আছে। ফলে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে প্রবাসী বাংলাদেশিরা কত কোটি ডলার পাঠালেন তার পূর্ণাঙ্গ চিত্র পেতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। গত মাসের তুলনায় চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রবাসী আয় আসার গড় হার বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে ২২৫ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় আসে, যা গত ৪৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। তার মানে, গত মাসে গড়ে প্রতিদিন প্রবাসী আয় এসেছে ৭ কোটি ২৫ লাখ ডলার। আর চলতি মাসের প্রথম এক সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ১০ কোটি ৩৭ লাখ ডলার এসেছে। তার মানে, দিনে গড়ে ৩ কোটি ১২ লাখ ডলার বেশি এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রায় ৭৩ কোটি ডলারের প্রবাসী আয়ের মধ্যে ১৭ কোটি রাষ্ট্রায়ত্ত, ১ কোটি বিশেষায়িত ব্যাংক, ৫৪ কোটি বেসরকারি ব্যাংক এবং ২০ লাখ ডলার বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মধ্যে জনতা ব্যাংকে সর্বোচ্চ ৬ কোটি ও অগ্রণী ব্যাংকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে।
অন্যদিকে বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক সর্বোচ্চ ১৫ কোটি ৯১ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এনেছে। এছাড়া ব্র্যাক ব্যাংক ৫ কোটি ২৯ লাখ ও ব্যাংক এশিয়া ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার এনেছে।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে ২ হাজার ১৬১ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় আসে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-জুন) প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ১৩৭ কোটি ডলারের।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বছরে ১০ লাখের বেশি কর্মী বিদেশে যান ২০১৭ সালে। ২০২২ সালে বিভিন্ন দেশে যান ১১ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি কর্মী। সব রেকর্ড ভেঙে দিয়ে ২০২৩ সালে বিদেশে গেছেন ১৩ লাখের বেশি কর্মী। তবে বিপুল বৈদেশিক কর্মসংস্থানের মধ্যে অনেক প্রবাসী ‘ব্যর্থ’ হয়ে দেশে ফিরছেন।
গত মাসে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী সংসদকে জানিয়েছেন, ১৯৭৬ সাল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৪৮ বছরে ১ কোটি ৬৩ লাখ ১২ হাজার ৩২৪ জন কর্মী বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য গেছেন।
দেশে মার্কিন ডলারের সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত কমেই চলেছে। সংকট মোকাবিলায় গত মাসে মার্কিন ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম এক লাফে ৭ টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকায় নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বেড়েছে। তবে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়াতে হলে অর্থ পাচার ও হুন্ডি রোধে বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন ব্যাংকাররা।