ডলারের দামের প্রভাব মসলার বাজারে

ঈদুল আজহার দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, বাজারে মশলার দাম ততই আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছে। মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসবের সময় সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং চাহিদাযুক্ত পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে মশলা । এই মশলার দাম এখন অনেক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারের জন্য ইদ উদযাপনের উপর কালো ছায়া ফেলেছে।

সব ধরনের মসলার দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম বাড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। পেঁয়াজ, মরিচ, আদা, রসুন, এলাচ, জিরা, দারুচিনি, গোলমরিচসহ সব ধরনের মসলার দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭-৮৫ শতাংশ বেড়েছে।

বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক হাফেজ হাজী মোহাম্মদ এনায়েত উল্লাহ বলেন, ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে গত বছরের তুলনায় মসলার আমদানি ব্যয় অনেক বেড়েছে এবং এর ফলে পাইকারি দাম বেড়েছে। মশলার পরিমাণও বেড়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘তবে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পাইকারি বাজারে দাম বাড়েনি। আমরা যে বৃদ্ধি দেখেছি তা রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে ঘটেছে। যখনই ঈদের মতো উৎসব আসে তখনই মশলার চাহিদা বেড়ে যায়, আবার কখনও কখনও খুচরা বিক্রেতারা চাহিদা বাড়ার সুযোগ নিয়ে দাম বাড়ায়।’

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা এবং পিআরআই এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, খোলা বাজারে ডলারের দাম বেড়ে গেছে । এখন হয়তো স্বল্প মেয়াদে বাজারে এর প্রভাব পড়বে। দীর্ঘ মেয়াদে আমদানি ব্যয় ঠিক হয়ে আসবে।

তিনি আরো বলেন, ডলার রেট অনেক আগেই বাড়ানো উচিত ছিল। এক বারে সাত টাকা বাড়ানো ফলে ঈদের আগে আমদানিকৃত নিত্য পণ্যের দাম হয়তো বাড়বে।

এদিকে ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়ের সঙ্গে, মসলার দামের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত করবে। অন্যদিকে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকেও তাদের প্রয়োজনের তুলনায় কম মসলা কিনতে হবে।

 

বর্তমান বাজার মূল্য

 

গোপীবাগ বাজারের এক খুচরা বিক্রেতা জানান, এখন প্রতি কেজি এলাচ ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকা, তেজপাতা প্রতি কেজি ২৪০ টাকা, জিরা ৭৬০ টাকা কেজি, সাদা গোলমরিচ ১৬০০ টাকা কেজি, কালো গোলমরিচ প্রতি কেজি ৩ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দারুচিনি ৫৫০ টাকা কেজি এবং লবঙ্গ প্রতি কেজি ১,৭০০ টাকা।

মাত্র দুই-তিন সপ্তাহ আগে কালো মরিচ ছিল ৮০০-৮৫০ টাকা কেজি, সাদা মরিচ ছিল এক হাজার টাকা কেজি, জিরা ছিল ৬০০ টাকা কেজি, দারুচিনি ছিল ৫০০-৫৪০ টাকা কেজি এবং লবঙ্গ ছিল দেড় হাজার টাকা।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) পেঁয়াজ, মরিচ, আদা, রসুন এবং জিরা সহ ১৬ ধরনের মশলার দৈনিক মূল্য তালিকা তৈরি করে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় স্থানীয় পেঁয়াজের দাম ১০ শতাংশ বেড়েছে, শুক্রবার প্রতি কেজি ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা গত বছরের একই তারিখে প্রতি কেজি ৭৫-৮০ টাকা ছিল।

শুধু গত মাসেই পেঁয়াজের দাম ১৩ শতাংশ বেড়েছে। আমদানি করা পেঁয়াজ গত বছরের তুলনায় ৬৪ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে, যার বর্তমান দাম ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা।

আমদানিকৃত ও দেশি রসুনের খুচরা দাম বেড়েছে ৬২-৬৩ শতাংশ, এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০০-২৫০ টাকা, যা গত বছর ঈদুল আজহার আগে ছিল ১৩০-১৫০ টাকা। লাল মরিচের দাম ৬ শতাংশ কমলেও আদার দাম বেড়েছে ২৩ শতাংশ।

স্থানীয় লাল মরিচ বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪২০ থেকে ৫০০ টাকায়, আদা কেজিতে বেড়েছে ৪০০-৪৫০ টাকা। গত বছর এই সময়ে আমদানি করা আদার দাম ছিল ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি।

আমদানি করা ও স্থানীয় হলুদের দাম বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। দেশি হলুদ এখন প্রতি কেজি ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় ১২০ টাকা বেড়েছে। একই হারে বেড়েছে আমদানি করা হলুদ, বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি।

কাপ্তান বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সুগন্ধি মসলার দাম বেড়েছে কয়েক গুন। সব মসলার মধ্যে এলাচ ও তেজপাতার দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে রাজধানীর বাজারে। গত বছর এলাচ প্রতি কেজি ১,৬০০-২,৪০০ টাকায় খুচরা বিক্রি হলেও বুধবার তা ৮২ শতাংশ বেড়ে ৩,৩০০-৪,০০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

তেজপাতার দাম ৮৫ শতাংশ বেড়েছে, এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০০-৩০০ টাকা, যা গত বছরের একই সময় ছিল ১২০-১৫০ টাকা।