আগের মতো নষ্ট হয়নি চামড়া

দাম কম হওয়ার কারণে ২০১৯ সাল থেকেই দেশে রেকর্ড পরিমাণ চামড়া নষ্ট হয়ে আসছে। সেই সময় দাম কমে যাওয়ার কারণে নদীতে চামড়া ফেলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। গত কয়েক বছর সেই ধারা বজায় ছিল। তবে এবারের চিত্র অন্য রকম। ব্যবসায়ীরা আশার বাণী শোনাচ্ছেন। ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার ৮০ শতাংশ চামড়া আড়তে জায়গা করে নিয়েছে। ১৫ শতাংশ ঈদের দ্বিতীয় দিন এবং বাকি ৫ শতাংশ আড়তে ঠাঁই পাবে ঈদের তৃতীয় দিন।

মঙ্গলবার ঈদের দ্বিতীয় দিন রাজধানীর পুরান ঢাকার টিপু সুলতান রোড এবং পোস্তা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চামড়া সংগ্রহের ব্যস্ততা মোটামুটি শেষ পর্যায়ে।

পুরানা ঢাকার এই এলাকার চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের দিনই চামড়া সংগ্রহ করে তাতে লবণ দিয়েছেন তারা। ঈদের দ্বিতীয় দিন চামড়া আসার চাপ বেশ কম। ফলে অনায়াসেই নিজেদের কাজ করতে পারছেন আড়তদাররা।

টিপু সুলতান রোডে তিন চামড়া ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয় দ্য মিরর এশিয়ার এ প্রতিবেদকের। তারা জানান, আগামীকাল রাস্তার পাশেও চামড়া কিনবেন তারা। 

এদিকে পোস্তা এলাকার আড়ৎ ঘুরে দেখা যায়, কোনো আড়তেই চামড়ায় লবণ দেওয়ার ব্যস্ততা আর তেমনটা নেই। প্রায় প্রতিটি আড়তেই লোকজন হাতেগোনা। কোনো কোনো আড়তে চামড়ার পাশেই শ্রমিকরা ঘুমিয়ে আছেন।

এর আগের বছরগুলোতে ঈদের দ্বিতীয় দিনেও চামড়া কেনাবেচার ব্যস্ততা দেখা যেতো পোস্তা এলাকায়। তবে এ বছর তেমনটি দেখা যায়নি। এদিন দুপুরে দুই-এক ট্রাক চামড়া নিয়ে আসলেও তা ট্রাক থেকে নামিয়ে নেওয়া ও লবণ দেওয়ার কাজটি হয়েছে বেশ দ্রুত সময়ের মধ্যে।

এদিকে, আড়তের ভেতরে যেতেই চোখে পড়ে সারি সারি চামড়ার স্তুপ, যা লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, গতকাল এদিকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা যেমন চামড়া নিয়ে পোস্তায় এসেছেন, একইসঙ্গে সেই চামড়া কিনে তাৎক্ষণিকভাবে তাতে লবণ দিয়েছেন আড়ৎদাররা। গতকাল দুপুর থেকে পোস্তা এলাকায় শুরু হওয়া এই কর্মযজ্ঞ চলেছে রাত নয়টা পর্যন্ত।

পোস্তার আড়ৎদাররা জানান, ২০১৯ সালে কোরবানি হওয়া পশুর প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ চামড়াই তখন নষ্ট হয়েছিল। এবার প্রায় শতভাগ চামড়াই সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।

কাঁচা চামড়া কেনা ও লবণ লাগানো ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ হাউড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএইচএসএমএ) চেয়ারম্যান আফতাব খান জানান, গতকাল রবিবার রাত ৯টার মধ্যেই লক্ষ্যমাত্রার ৮০ শতাংশ চামড়া তারা সংগ্রহ করতে পেরেছেন।

টেলিফোনে আফতাব খান বলেন, পোস্তার ব্যবসায়ীদের এবারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখের কাছাকাছি চামড়া সংগ্রহ করা। আমরা সেই অনুযায়ী লবণ কিনে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। আমাদের পোস্তার আড়ৎদার, ব্যবসায়ী ও খুচরা বিক্রেতারা মিলে ঈদের প্রথম দিনেই আমাদের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮০ ভাগ চামড়া সংগ্রহ করে। রাত ৯টার মধ্যেই চামড়া কেনা শেষ হয়। এমনকি গতকাল রাতের মধ্যেই লবণ লাগানো হয়েছে।

ঈদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনের লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে জানতে চাইলে চামড়া ব্যবসায়ী সংগঠনের এই নেতা বলেন, ‘আজ দ্বিতীয় দিনে ১৫ ভাগ ও আগামীকাল বুধবার ঈদের তৃতীয় দিনে পাঁচভাগ সংগ্রহ করা হবে।

চলতি বছর কাঁচা চামড়া সংগ্রহের চাপ কেবল পোস্তায় ছিল না। রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকায়ও চামড়া সংগ্রহ ও লবণজাত করা হয়েছে। একই কর্মযজ্ঞ চলেছে সাভারের হেমায়েতপুরে।

এ বিষয়ে বিএএইচএসএমএর চেয়ারম্যান বলেন, ‘ঢাকার বেশিরভাগ চামড়া এখানে এসেছে। কিছু চামড়া হেমায়েতপুরেও লবণজাত করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি চামড়া লবণজাত করেছেন ট্যানারি মালিকরা। ফলে এটা বলা যায় ঢাকায় চামড়া নষ্ট হয়নি। গতকাল চামড়ার যে দাম ছিল তার তুলনায় আজও ভালো দাম পাচ্ছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।’

এদিকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম দিনের তুলনায় দ্বিতীয় দিন ভালো দামে চামড়া কিনছেন পোস্তার আড়তদাররা। গতকাল ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে যে চামড়া কেনা হয়েছে, আজ সে সকল চামড়ার পেছনে আড়তদাররা গুনছেন ৮০০ টাকার বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর হাজারীবাগেও এবার চামড়া লবণজাত কারার সুযোগ পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। পোস্তায় জায়গার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে হাজারীবাগে পুরানো ট্যানারির কারখানাগুলোতে চামড়ায় লবণজাত করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

আফতাব খান আরো বলেন, ‘পোস্তায় আগের মতো ব্যবসায়ীরা নেই। নানা সংকটের কারণে অনেক ব্যবসায়ী এই খাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এমনকি পোস্তা এলাকা যে গোডাউনগুলো ছিল, সেগুলো এখন আগের মতো নেই। কারণ, একজন চামড়া ব্যবসায়ী যে গোডাউনের ভাড়া দিতেন ৪০ হাজার টাকা, এখন সেই একই গোডাউন কয়েকগুণ বেশিতে ভাড়া নিয়েছেন প্লাস্টিক ব্যবসায়ীরা। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক ব্যবসায়ী এখন চামড়া কেনা কমিয়ে দিয়েছেন।