আইএমএফের তৃতীয় কিস্তিতে রিজার্ভ বাড়বে বাংলাদেশের
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পরিষদের আগামী বৈঠকে বাংলাদেশের ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়টি উপস্থাপন হবে। সেখানে প্রস্তাবটি অনুমোদন হলে পরবর্তী দুদিনে বাংলাদেশের অর্থ ছাড় হবে। এবার তৃতীয় কিস্তি বাবদ ১১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার দেওয়ার রয়েছে। টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়নের কারণে কিস্তির অর্থও বেড়েছে। এ ছাড়া ডলার সংকটের কারণে এ কিস্তিতে ডলারের পরিমাণও বেড়েছে।
গত শুক্রবার আইএমএফের নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে চূড়ান্ত হয় ২৪ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে আইএমএফের সদর দপ্তরে বাংলাদেশের ঋণ বিষয়ে আলোচনা হবে। এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টায়। এ দিন নির্বাহী বোর্ডের বৈঠকে বাংলাদেশের অনুকূলে ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের পর্যালোচনা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হবে। বৈঠকে প্রস্তাবটি অনুমোদন হলেই ২৫ বা ২৬ জুনের মধ্যে বাংলাদেশ ঋণের অর্থ পেয়ে যাবে।
অথনীতি বিদ ড. রেজা কিবরিয়া জানান, আমার ধারণ যে, বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হতে আরো সাড়ে তিন বছরের মতো লাগবে। আইএমএফ টাকা পাচার নিয়ে কোন আলাপ-আলোচনা করে না। এ-সংক্রান্ত সরকারি কোনো ডাটা নাই। তিনি বলেন এ সরকার অনেক দূর এগিয়ে গেছে শ্রীলঙ্কার দিকে; নয়তো আইএমএফকে ডাকত না। আমরা বিরাট একটি অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়তে যাচ্ছি। তেল-গ্যাসসহ সবকিছুর দাম বাড়িয়ে সরকার দিশেহারা হয়ে আইএমএফের দ্বারস্থ হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের আজকের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য দায়ী সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট ও দুঃশাসন। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে জনগণের টাকা নয়ছয় করেছে সরকার। দুর্নীতি লুটপাটের টাকা পাচার হয়েছে সরকারি মদদে। সেই টাকা ফেরত আনার কোনো উদ্যোগ নেই; দোষীদের গ্রেফতারেরও কোনো উদ্যোগ সরকারের নেই।
বাংলাদেশের দেয়া ৪৫০ কোটি ডলার ঋণের প্রস্তাবটি অনুমোদন করেছে আইএমএফ। গত ৩০ অক্টোবর আইএমএফ ঋণের অনুমোদনের প্রতিক্রিয়ায় সাবেক অথ মন্ত্রী আ হ মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা অবশ্যই আইএমএফের প্রতি এ ঋণের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বিশেষ করে আইএমএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আন্তোয়নেট মনসিও সায়েহ ও মিশনপ্রধান রাহুল আনন্দসহ যে দলটি এ ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ সফর করেছিলেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যারা এই ঋণ প্রোগ্রাম নিয়ে কাজ করেছেন, তাদের প্রতিও রইল আমার কৃতজ্ঞতা।
বার্তা সংস্থা ইউএনবির তথ্য অনুযায়ী, রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে আইএমএফের একটি দল ঋণ কর্মসূচির বিশদ বিবরণ বের করতে গত বছরের ২৬ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর ঢাকা সফর করেন। এরপর ১৪ থেকে ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ সফর করেন আইএমএফের ডিএমডি আন্তোয়নেট মনসিও সায়েহ।
এর আগে ঋণের কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়ে আইএমএফের দেওয়া শর্ত বাস্তবায়ন ও অর্থনৈতিক সংস্কারের অগ্রগতি দেখতে ২৪ এপ্রিল সংস্থাটির একটি মিশন ঢাকায় আসে। তারা ৮ মে পর্যন্ত অবস্থান করে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে। এতে শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ সংস্কার কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। প্রতিনিধি দলটি ঢাকা ত্যাগের আগে এমন বার্তা দিয়ে যায়, শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতিতে তারা খুশী। ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়ে প্রতিবেদনে সুপারিশ করবেন। তারা আশা প্রকাশ করেন, নির্বাহী পরিষদ ঋণের অর্থ ছাড়ের প্রস্তাবটি অনুমোদন করবে।
গত বছরের ২৪ জুলাই ঋণ চেয়ে আইএমএফকে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ। গত বছরের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের অনুকূলে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। এর মধ্যে দুই কিস্তিতে ১১৬ কোটি ডলার ছাড় করা হয়েছে। এখন তৃতীয় কিস্তি বাবদ ১১৫ কোটি ডলার ছাড় করার পর্যায়ে রয়েছে।
এদিকে আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতিমধ্যে ঋণের সুদের হার বাজারভিত্তিক করেছে। এতে সুদ হার বেড়েছে। ডলারের দামে ক্রলিং পেগ (একটি সীমার মধ্যে থেকে ওঠানামা) পদ্ধতি চালু করেছে। এতে ডলারের দাম এক দিনের ব্যবধানে ৮ টাকা বেড়েছে। এখন ডলারের দাম বাজারভিত্তিক করার বিষয়ে কাজ চলছে। জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করছে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমানো হচ্ছে।
সূত্র জানায়, আইএমএফের তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে যাবে। বৃহস্পতিবার দেশের নিট রিজার্ভ ছিল ১৯২১ কোটি ডলার। ঈদের রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় রিজার্ভ আরও কিছুটা বাড়বে। ফলে ঋণের অর্থ ছাড় হলে এবার রিজার্ভ আবার ২ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এতে রিজার্ভে সাময়িক স্বস্তি মিলবে। তবে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা বাবদ ১০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হবে।