বিদ্যুৎকেন্দ্রকে আর ক্যাপাসিটি চার্জ দেবে না সরকার, আইএমএফকে প্রতিশ্রুতি
বাংলাদেশে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ক্যাপাসিটি চার্জ নবায়ন করা হবে না বলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে (আইএমএফ) প্রতিশ্রুতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আইএমএফের বর্ধিত ঋণ সহায়তার আওতায় দ্বিতীয় পর্যালোচনা থেকে এ তথ্য জানা যায়।
গত সোমবার রাতে বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ চুক্তির আওতায় তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের অনুমোদন দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ। এ অনুমোদনের ফলে বাংলাদেশ তৃতীয় কিস্তিতে পাবে ১১৫ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, এ সপ্তাহের মধ্যে কিস্তির অর্থ বাংলাদেশ হাতে পাবে।
বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে অলস বসিয়ে রাখলে চুক্তি অনুযায়ী তাদের যে পরিমাণ ভর্তুকি সরকারকে দিতে হয়, তাকে ক্যাপাসিটি চার্জ বলা হয়। বর্তমানে সরকার ক্যাপাসিটি চার্জ ডলারের প্রদান করে থাকে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন, টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৪ বছরে ৮২টি বেসরকারি এবং ৩২টি রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ মোট এক লাখ চার হাজার ৯২৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুসারে, গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে সরকার ১৭ হাজার ১৫৬ কোটি টাকার ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়েছে। দেশের ১০টি শীর্ষ বিদ্যুৎ কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়েছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র। যার পরিমাণ ৩ হাজার ২২৮ দশমিক ৩৭ কোটি টাকা। অন্যদিকে সামিট ১ হাজার ৯৫৭ দশমিক ৩১ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়েছে । এরপর বেশি ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়েছে ইউনাইটেড- ১ হাজার ৬৮২ দশমিক ৩৮ কোটি টাকা এবং কনফিডেন্স- ৯৬২ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা।
আইএমএফের ঋণের দ্বিতীয় রিভিউতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উন্নয়ন খাতে অগ্রাধিকারমূলক ব্যয় বাড়াতে সরকার ভর্তুকি কমিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ২০২১ সাল থেকে দেশের পেট্রোলিয়াম পণ্য, প্রাকৃতিক গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং সারের জন্য মূল্যবৃদ্ধি কার্যকর করা হয়েছে।
তবে অর্থ মন্ত্রণালয় স্বীকার করেছে, ক্রমাগত উচ্চ আমদানি মূল্যের জন্য বিদ্যুতের অতিরিক্ত ভর্তুকির প্রয়োজন পড়ছে এবং দেশে সারের খাতে ও স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের অনেক টাকা বকেয়া পড়েছে। ফলে সরকারের উন্নয়নের সীমিত হয়ে পড়েছে।
এদিকে সার সরবরাহকারী এবং কিছু প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানিকে কম দামে গ্যাস বিক্রির জন্য পেট্রোবাংলার ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে গেছে। সেই ভর্তুকির পরিমাণ ২০২৪-এর শেষে দেশের জিডিপির ১ দশমিক ১ শতাংশ হবে বলে আশা করছে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয় আশা করছে, ২০২৪ এর শেষ নাগাদ বকেয়া ভর্তুকি কিছুটা কমবে। অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, একই সময়ে সরকারকে ধীরে ধীরে বকেয়া কমিয়ে ফেলতে হবে এবং ভর্তুকি খরচ দেশের আর্থিক বছরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ স্তরে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে সরকার ডিজেলের জন্য একটি সূত্রভিত্তিক মাসিক মূল্য সমন্বয় পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া কেরোসিন, পেট্রোল এবং অকটেনের দাম ২০২৪ সালের মার্চ থেকে সমন্বয় শুরু করেছে সরকার। যা কাঠামোগত ভর্তুকি কমাবে বলে আশা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের মনে করছে, পেট্রোলিয়াম পণ্যের ভর্তুকি শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসবে।
তৃতীয় কিস্তির অর্থ হাতে পেলে বাংলাদেশ সব মিলিয়ে তিন ধাপে আইএমএফের কাছ থেকে পাবে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার। এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পেয়েছিল বাংলাদেশ। আর গত ডিসেম্বরে পেয়েছিল দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার।