পাঁচ ব্যাংকের অর্থপাচারের ঝুঁকি এড়ানোর পরামর্শ আইএমএফের
প্রথমবারের মতো অর্থপাচারের ঝুঁকিতে থাকা পাঁচ ব্যাংকে চিহ্নিত করে সেগুলো ঝুঁকিমুক্ত করতে বলেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
এ ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংককে ঝুঁকিভিত্তিক পর্যবেক্ষণের আওতায় নিয়ে এসে আরো ২০ ব্যাংক নিয়েও কাজ করতে বলছে আন্তর্জাতিক ঋণ দানকারী প্রতিষ্ঠানটি।
তৃতীয় কিস্তির ঋণ দিতে সম্মত হলেও আর্থিক খাতের সংস্কারে ১৬টি শর্ত জুড়ে দিয়েছে আইএমএফ। দেশের রাজস্ব আদায় বাড়ানো, সরকারি আর্থিক নীতি কাঠামো ও আর্থিক খাত এবং মানিলন্ডারিং আইন-সংক্রান্ত বিভিন্ন খাতের সংস্কারের শর্ত জুড়ে দিয়েছে সংস্থাটি।
গত সোমবার রাতে বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ চুক্তির আওতায় তৃতীয় কিস্তি ছাড়ের অনুমোদন দিয়েছে আইএমএফের পর্ষদ। এ অনুমোদনের ফলে বাংলাদেশ তৃতীয় কিস্তিতে পাবে ১১৫ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, এ সপ্তাহের মধ্যে কিস্তির এ অর্থ বাংলাদেশ হাতে পাবে।
উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে ৮টি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক এবং এসআলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে বিদেশে এক বিলিয়ন (১০০ কোটি) ডলার পাচারের অনুসন্ধান নিয়ে হাইকোর্টের জারি করা রুল খারিজ করেছে আপিল বিভাগ। চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ৬ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় দেয়।
গত বছরের ৪ আগস্ট বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার এসআলমের অর্থপাচার নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পরে একই বছরের ৬ আগস্ট প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাইয়েদুল হক সুমন। ওই সময় প্রতিবেদন দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।
পরে এসআলম গ্রুপের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে অর্থপাচার ঠেকাতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যর্থতাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি হয়।
জানা গেছে, এসআলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম সিঙ্গাপুরে কমপক্ষে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যদিও বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো অনুমতি তিনি নেননি বলে দ্য ডেইলি স্টারের অনুসন্ধানে বিষয়টি জানা যায়।
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের বাইরে বিনিয়োগের জন্য এ পর্যন্ত ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিলেও চট্টগ্রামভিত্তিক বিশাল এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম তালিকায় নেই। আরো জানা যায়, গত এক দশকে সিঙ্গাপুরে এসআলম অন্তত দুটি হোটেল, দুটি বাড়ি, একটি বাণিজ্যিক স্পেস এবং অন্যান্য যে সম্পদ কিনেছে, বিভিন্ন উপায়ে সেসব কাগজপত্র থেকে তার নাম সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
এসআলম গ্রুপের ব্যাংকগুলো হচ্ছে- ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আল-আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড, ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড, গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড এবং ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড।
আইএমএফের শর্তে মধ্যে আছে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়ানো। এ জন্য কর আদায় বাড়াতে ভ্যাট, পিআইটি, সিআইটির ওপর অর্থ মন্ত্রণালয় আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছে। যা শর্ত অনুসারে ২০২৪ সালের জুনে মধ্যে শেষ করতে হবে।
একই সময়ের মধ্যে রাজস্ব বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর পরিকল্পনার আওতায় ভ্যাট এবং আয়কর বাড়াতে হবে। আরো রয়েছে, ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে আয়কর প্রশাসনের ডিজিটাল রূপান্তর করে ই-রিটার্ন এবং ই-পেমেন্ট কাঠামো তৈরি করা।