তহবিল সংগ্রহের জন্য চাপিয়ে দেওয়া পেনশন স্কিম নিয়ে হুলুস্থুল

তীব্র অর্থ সংকট থেকে বাংলাদেশকে যেনতেন ভাবে উদ্ধারের নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়ে যাচ্ছে বিনা ভোটের আওয়ামী লীগ সরকার। এখন তারা সর্বজনীন পেনশন স্কিমের মাধ্যমে ১৮ কোটি জনগণের কাছ থেকে  জোরজবরদস্তির মাধ্যমে  টাকা আদায় করতে চাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ঋণের প্রচ্ছন্ন শর্তের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক অতিরিক্ত টাকা ছাপাতে পারছে না। ফলে ঘুরেফিরে আওয়ামী সরকার পেনশনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।

মোট ৩০,০০০ কোটি টাকার পেনশন ফান্ড হলে সরকার এর কালক্রম চালাতে পারে। কিন্তু তারা চাচ্ছে এর পরিমাণ ৫০,০০০ কোটি টাকা থেকে এক লাখ কোটি টাকা। এ তহবিল দিয়ে বর্তমানের অর্থ সংকট মোকাবেলাসহ দেশের বন্ড মার্কেট বিনিয়োগ করতে পারে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ মাত্র ১০০ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করতে পেরেছে। দেশের মূল্যস্ফীতি সাড়ে নয় শতাংশে উপরে। দুই বছর আগে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ কমে হয়েছে ১৬ বিলিয়ন ডলার।

২০২৩ সালের ১৭ই আগস্ট সর্বজনীন পেনশনের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন এই পেনশন স্কিম সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নয়। বেসরকারি খাতে যারা পেনশন পায় না, তাদের যাতে মানবেতর জীবন যাপন করতে না হয়, সেই জন্য এই পেনশন।

কিন্তু এক বছরের কম সময়ে তিনি একেবারে নব্বই ডিগ্রি ঘুরে  সরকারি খাতে কর্মরত সবার টাকার দিকে হাত বসালেন। এখন প্রধানমন্ত্রী সর্বজনীন পেনশন স্কিমকে একটা প্রকল্প হিসেবে নিতে চাচ্ছেন। এ জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রবিধি বিভাগ একটা প্রস্তাবও একনেকে নিয়ে আসার কথা হচ্ছে। গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রবিধি বিভাগেরর উপসচিব মো.  আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সার্কুলারে বলা হয়েছে, সর্বজনীন পেনশন সিস্টেম শক্তিশালীকরণ প্রকল্প চলতি বছর  নভেম্বর থেকে শুরু হবে। চার বছর পর ২০২৮ সালের জুন মাসের এই প্রকল্প শেষ হবার প্রস্তাব দিয়ে একটা প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।

এশিয়ান ডেভেলাপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) ৩ হাজার ৮ শর্ত ২ কোটি টাকা ৫০ লাখ টাকা অর্থায়নে এই প্রকল্প কার্যকর করা হবে। দেশের বয়স্ক জনগোষ্ঠীদের একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় এনে তাদের বৃদ্বকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয়ভাবে সর্বজনীন পেনশন পদ্ধতি বাস্তবায়ন হবে।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ পেনশনের নতুন স্কিম প্রবর্তনের মধ্যেই বাধে বিপত্তি। আগের পেনশনের সুযোগ সুবিধা কাটেল করে প্রত্যয় পেনশন স্কীম করার ঘোষণা হয়েছে। চারশত আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এর বৈষম্যমূলক পেনশনের আওতায় পড়লেও প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারা বলছেন, আমাদের প্রশাসন পেনশনের নতুন অংক শিখাতে চায়। এককালীয় টাকাসহ অনেক সুবিধা বাতিল করে প্রত্যয় স্কিম ঘোষণা করা হয়ে হয়েছে।

বিভিন্ন আধা স্বায়িত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠনের ফেডারেশন বৈষম্যের অভিযোগ তুলে 'প্রত্যয়' স্কিম বাতিল করতে মে মাস থেকে আন্দোলনরত অবস্থায় আছেন। শিক্ষকদের মূল দাবি পেনশনের এককালীন টাকা দেওয়া বন্ধ করা যাবে না।

এবার  অর্থমন্ত্রী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের যে বাজেট ঘোষণা করেছেন, সেখানে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ পেনশন খাতে বরাদ্দ করেছেন।

জনপ্রশাসনের পেনশন ও গ্রাচুইটি খাতে ২৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ১৫ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা।

ধারণা করা হচ্ছে, এখন যেহেতু পেনশনের পুরো টাকা সরকারকেই দিতে হয়, তাই নতুন পেনশন স্কিমে সেই  চাপ কমাবে।  পাশাপাশি সব নাগরিককে পেনশন সুবিধার আওতায় আনার যে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি, সেটি বাস্তবায়নেই সর্বজনীন স্কিম কার্যকর হবে।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা দি মিরর এশিয়াকে বলেন, সামাজিক সুরক্ষর বিষয়টি মাথায় রেখে প্রত্যয় স্কিমটা করা হয়েছে। এখানে কোন বৈষম্য করা হয়নি। আগামীতে সরকারি কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের নতুন একটা স্কিমের ঘোষণা করা হবে।

সর্বজনীন পেনশনের 'প্রত্যয়' স্কিম প্রত্যাহারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বৃহস্পতিবার বৈঠক করার কথা থাকলেও সেটা হয়নি। পদ্মা সেতু প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করতে শিক্ষকদের বৈঠক বাতিল করেন কাদের।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. নিজামুল হক ভূইয়া বলেন, 'মিটিং বাতিল করা হয়েছে। পদ্মা সেতু নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের রাষ্ট্রীয় একটি সভা আছে। সে কারণে মিটিং বাতিল হয়েছে।'