মাছ, মাংস ও ডিমের সঙ্গে ফের বেড়েছে সবজির দাম
সপ্তাহের ব্যবধানে শাক-সবজি, মুরগি, ডিম, মাছ ও মাংসসহ বেশ কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজারে স্বস্তি ফিরছে না কিছুতেই, এমনটাই অভিযোগ ক্রেতাদের।
শুক্রবার (১২ জুলাই) সকালে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ঢাকা উদ্যান মনির মিয়ার কাঁচাবাজার, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ও কাটাসুর কাঁচাবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে বৃষ্টির কারণে খুব একটা ক্রেতার দেখা মেলেনি।
বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে সবজি, ডাল, আলু ও ডিমসহ সকল পণ্যের দাম। মানভেদে প্রতি কেজি করলা ৮০-১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ঝিঙে ৬০ টাকা, ধুন্দল ৮০ টাকা, শসা ৭০-৮০ টাকা ও লতি ৮০-১০০ টাকা, বেগুন ৮০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া, প্রতি কেজি পেঁপে ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৮০-১০০ টাকা, গাজর ৬০-৭০ টাকা, টমেটো ১২০-১৪০ টাকা, কাঁকরোল ৬০-৮০ টাকা ও পটোল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়।
কমেনি কাঁচা মরিচের দামও। খুচরা পর্যায়ে কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৪০ টাকায়। আর দাম বেড়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়। তবে সামান্য দাম কমে রসুন ২২০ টাকা ও আদা বিক্রি হচ্ছে ২৬০-৩০০ টাকায়। গত সপ্তাহের ১৩৫ টাকা কেজি মশুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায় এবং গত সপ্তাহের ১৪০ টাকা ডজন ফার্মের ডিম কিনতে হচ্ছে ১৫০-১৫৫ টাকায়।
এছাড়া, প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকায়, প্রতিটি লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। আর বাজারে লালশাকের আঁটি ১৫ টাকা, পাটশাক ১৫ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা, লাউশাক ৩০-৪০ টাকা, কলমিশাক ১৫ টাকা ও পালংশাক ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, গত সপ্তাহে মুরগির দাম কিছুটা কমলেও চলতি সপ্তাহে কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০-১৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৭০০-৭৩০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৬০-২৮০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়। আর প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩২০ টাকায়। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০-৮০০ টাকায়। খাসির মাংস এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা ও ছাগলের মাংস এক হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া প্রতি কেজি রুই মাছ ৩৫০-৪৫০ টাকায়, মৃগেল ২৫০-৩৫০, পাঙাশ ১৯০-২২০, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০-১০০০ টাকায়, বোয়াল মাছ প্রতি কেজি ৮০০-১২০০ টাকা, কাতল ৩০০-৪০০, পাবদা ৪০০-৫০০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কোরাল ৭০০ টাকা, ট্যাংরা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতা মনিরুল ইসলাম বলেন, ১ টাকাও আয় বাড়েনি। অথচ খরচ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। আগে যেখানে ২ কেজি সবজি লাগত, বাধ্য হয়ে সেখানে ১ কেজিতেই চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে হয় বউ-বাচ্চাকে গ্রামে পাঠাতে হবে, নতুবা পুরো পরিবার গ্রামে চলে যেতে হবে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৃষ্টি, বন্যা ও ছাত্রদের আন্দোলন (বাংলা ব্লকেড) নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণ। চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট সবজি বিক্রেতা খায়রুল জানান, বৃষ্টি ও বন্যার কারণে এমনিতেই ক্ষেতে পানি জমে সবজি নষ্ট হওয়ায় কমে গেছে সরবরাহ। এতে চাহিদার চেয়ে যোগান কম থাকায় বাড়ছে দাম।
ঢাকা উদ্যান মনির মিয়ার কাঁচাবাজারে পণ্য কিনতে আসা সুজন মিয়া বলেন, বাজারে সব পণ্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও নিত্য নতুন অজুহাত দিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে নাজেহাল করা হচ্ছে। মাসের বাজেট সপ্তাহে ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন এখন ডাল, ডিম ও আলুভর্তা করে ভাত খাবো তাও ভাবতে পারি না। যেন এসব দেখার কেউ নেই।
একটি বেসরকারি অফিসে কর্মরত সোহেল ও মিরাজ হোসেনের একই ধরনের কথা। তাদের ভাষ্য, সীমিত আয়ের মানুষ কষ্টে আছেন। অনেকেই খাবারের খরচ কমিয়ে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছেন। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে চলাটা মুশকিল হয়ে যাবে। ঢাকা ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে হবে মানুষদের।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান দ্য মিরর এশিয়াকে বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের জীবন ডিফিকাল্ট (কঠিন) হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে, স্বল্প আয়ের মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলছে। তাদের আয় বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। নিম্নবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত মানুষ কীভাবে যে জীবন ধারণ করছে সেটা কল্পনা করা যায় না। ব্যবসায়ীদের অতিলোভ বাজার দরের বৃদ্ধির আরেকটি কারণ।’