পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে প্রণোদনার সুপারিশ

সরকারের পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে নানা উদ্যোগ নিলেও আওয়ামী লীগ সরকার তার কোনো শাসনামলে  বড় ধরনের সাফল্য দেখাতে পারেনি। আর এর প্রধান কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে, সরকারের অলিগারকরা যেমন, সামিট, এস আলম এবং সিকদার গ্রুপ অনেক সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংকের অর্থপাচার করছে। এসব কোম্পানির অর্থ নামে-বেনামে পাচার হয়েছে। এ সব কোম্পানি অর্থ ফেরত নিয়ে আসার ব্যাপারে কোনো উদ্যেগ দেখা যায় না।  
তবে এরপরও বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের প্রণোদনা দেয়ার বিষয়ে বিদ্যমান মানি লন্ডারিং আইন সংশোধনের সুপারিশ করেছে এ বিষয়ক টাস্কফোর্স।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বলছে, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এর আলোকে, ফেরত হওয়া অর্থ ফেরত আনা প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত সরকারি বা সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের প্রণোদনা দেয়া উচিত। এ লক্ষ্যে বিদ্যমান মানি লন্ডারিং আইন, ২০১২ সংশোধন করতে হবে। চিঠিতে কয়েকটি ধারা ও উপধারাও উল্লেখ করা হয়।

এদিকে, ওয়াশিংটন-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) ২০২০ সালের তথ্যানুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার পাচার হয়, টাকার অঙ্কে তা প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা। সাত বছরে সাড়ে চার লাখ কোটি টাকার বেশি পাচার হয়েছে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।

ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের চিঠিতে  আরো বলা হয়, বিদেশে পাচারকৃত সম্পদ বাংলাদেশে ফেরত আনার বিষয়ে গঠিত টাস্কফোর্সের ১০ম সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন বিষয়ক উল্লিখিত স্মারকের প্রেক্ষিতে এ ইউনিট কর্তৃক কাস্টমস আইন, ২০২৩ ও আয়কর আইন, ২০২৩ এর সংশ্লিষ্ট ধারা (যথাক্রমে ধারা- ২৫৪ ও ধারা- ৩৪০) পর্যালোচনাপূর্বক বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারের ক্ষেত্রে কমিশন প্রদানের বিধানটি মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এ অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে একটি খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। 

এতে বলা হয়েছে, (১) এই আইন বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সরকার নিম্নবর্ণিত ব্যক্তিকে, উপ-ধারা (২) এর বিধান সাপেক্ষে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতি, পরিস্থিতি ও পরিমাণে পুরস্কার বা প্রণোদনা প্রদান করিতে পারিবে, যথা:- (ক) মানিলন্ডারিং বা সম্পৃক্ত অপরাধ সম্পাদন বা সম্পাদনের প্রচেষ্টা অথবা এই আইন বা এর কোনো বিধানের লঙ্ঘন সম্পর্কিত বিষয়ে বিএফআইইউ বা তদন্তকারী সংস্থার নিকট তথ্য প্রদানকারী কোনো ব্যক্তি; (খ) বিএফআইইউ, অন্য কোনো সরকারি বা বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা বা কর্মচারী, যিনি মানিলন্ডারিং বা সম্পৃক্ত অপরাধ সম্পাদন বা সম্পাদনের প্রচেষ্টা অথবা এই আইন বা এর কোনো বিধানের লঙ্ঘন উদ্‌ঘাটন করেন।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন পুরস্কার বা প্রণোদনা প্রদান করা যাইবে, যদি উক্ত উপ-ধারায় উল্লিখিত তথ্য সরবরাহ, মানিলন্ডারিং বা সম্পৃক্ত অপরাধ সম্পাদন বা সম্পাদনের প্রচেষ্টা অথবা এই আইনের লঙ্ঘন উদ্‌ঘাটনের বা উন্মোচনের ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণিত কার্য ফলপ্রসূভাবে সমাপ্ত হয়, যথা:- (অ) এই আইন বা আপাতত বলবৎ অন্য কোনো সংশ্লিষ্ট আইনের অধীন আরোপিত অর্থদন্ড বা জরিমানা আদায় হয়; অথবা (আ) মানিলন্ডারিং ও সম্পৃক্ত অপরাধ সম্পাদনের প্রচেষ্টা অথবা লঙ্ঘনের ঘটনার সহিত সংশ্লিষ্ট সম্পদ জব্দ বা বাজেয়াপ্ত হয়।