রেমিটেন্স প্রবাহে ভাটা আড়াল করতে তথ্য প্রস্তুত করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার প্রতিবাদে দেশে রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধের ডাক দিয়েছে প্রবাসীরা। প্রবাসীদের এই আহ্বান ও গত সপ্তাহরে বুধবার থেকে ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারণে রেমিটেন্সে ভাটা পড়েছে বলে জানা গেছে। ১৯ জুলাই থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত রেমিটেন্স এসেছে ৭ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। অথচ এ মাসে ১৮ জুলাই পর্যন্ত গড়ে প্রতিদিন ৭ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলার রেমিটেন্স এসেছে।  এ অবস্থায় রেমিটেন্সের প্রকৃত প্রবাহ আড়াল করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথ্য প্রস্তুত বন্ধ করে দিয়েছে। 

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সেদিন মহাখালীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে আগুন দেওয়া হলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়কের ওপর থাকা ইন্টারনেট সেবাদাতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তার। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েকটি ডেটা সেন্টারও। সে কারণেই সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়।

ডিজিটাল পেমেন্ট, আমদানি রপ্তানি, ব্যাংক বীমা, বিভিন্ন পরিষেবা এবং ব্যক্তিগত যোগাযোগ সবকিছু স্থবির হয়ে যয়। শুক্র, শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির পড়ে কারফিউ থাকায় গত রোব, সোম ও মঙ্গলবার বন্ধ ছিল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ইন্টারনেট না থাকায় বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিংও বন্ধ ছিল এ সময়ে।

গত বুধ ও বৃহস্পতিবার সীমিত আকারে ব্যাংকিং হয়েছে সারা দেশে। প্রথম দিন বুধবার ৫০ শতাংশ ও বৃহস্পতিবার ৭৫ শতাংশ শাখা খোলা ছিল। ব্যাংক বন্ধের সময়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাংলাদেশে আসলেও তার পরিমাণ কতো, সেই তথ্য এখনো প্রস্তুত করেনি বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ঠ বিভাগ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বলেন, ‘‘ব্যাংক তো কয়েকদিন বন্ধ ছিল। ইন্টারনেটও বন্ধ ছিল। বুধ ও বৃহস্পতিবার সীমিত পরিসরে ব্যাংক চলেছে সময় কমিয়ে। এসময়ে আসা রেমিটেন্সের তথ্য রিকন্সিলিয়েশেন(প্রাপকের কাছে অর্থ বুঝিয়ে দেয়ার পরে চূড়ান্তভাবে নিস্পত্তি) করা হয়নি। প্রতিবেদন তৈরির কাজ চলছে, ব্যাংকিং সময় স্বাভাবিক হলে রেমিটেন্স তথ্য জানাতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের বেশিরভাগ আসে বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ব ও বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকের বিদেশি শাখা আছে। খুবই সামান্য পরিমাণ রেমিটেন্স আসে এদের মাধ্যমে।

বৈদেশিক মুদ্রা আসার মধ্যে রপ্তানি আয়, রেমিটেন্স, বিভিন্ন ঋণের অর্থ আসে। বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে তা জমা হয় এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্টান ও ব্যাংকের মাধ্যমে।

মোট পরিমাণ জমা হওয়ার পরে ভাউচার(সংশ্লিষ্ঠ ডকুমেন্টস) অনুযায়ী খাতভিত্তিক বৈদেশিক  মুদ্রা শ্রেণিবিন্যাস করে ব্যাংক।

সেই তথ্য যাচাই-বাছাই ও মিলিয়ে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রতিবেদন তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। অবশ্য এর মধ্যে প্রাপকরা রেমিটেন্স পেয়ে যান। শুধু মোট অঙ্ক বের করতে এমন শ্রেণিবিন্যাস করা হয়।

রেমিটেন্স আসলেও তার রিকন্সিলিয়েশনের কাজটি শেষ করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি মাসের প্রথম ১৩ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ৯৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। দৈনিক গড়ে এসেছে ৭ কোটি ৫২ লাখ ডলার। এর পরের তথ্য এখনো হালনাগাদ করা হয়নি।

গত ২০২৩ সালের জুলাইতে দৈনিক গড় রেমিটেন্স এসেছিল ৬ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। মাস শেষে মোট রেমিটেন্স এসেছিল ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ডলার। চলতি বছরের গত মাস জুনে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিটেন্স এসেছে দুই দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। দৈনিক রেমিটেন্স ছিল ৮ কোটি ৪৭ লাখ ডলার।