আগামী ১০-১৫ দিন প্রবাসী আয় কম আসলে অর্থনীতির বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে: ড. আহসান এইচ মনসুর
দেশে কোটা সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে জুলাই মাসে ২৭ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে মাত্র ১৫৬ দশমিক ৭৫ কোটি ডলার । এছাড়া টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেড়ে যাওয়া, প্রবাসী আয় কম আসা এবং আমদানি রপ্তানি খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) নিবার্হী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে দি মিরর এশিয়ার সঙ্গে আলাপে এসব বিষয় উঠে আসে ।
টিএমএ প্রশ্ন: প্রবাসী আয় আর কি বাড়বে না ?
ড. আহসান এইচ মনসুর: প্রথমত বলতেই হবে সাত আট দিন ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধই ছিল। একই সঙ্গে বিদেশী ও প্রবাসী আয় বন্ধ করার আন্দোলন গড়ে উঠেছে। সরকারকে এক ধরনের শিক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে আন্দোলনটা অবশ্যই টেকসই হবে না। শ্রমিক অবশ্যই দেশে পরিবারকে টাকা পাঠাতেই হবে। যে কোনো ভাবে টাকা দেশে টাকা পাঠাবে, সেই টাকা যে কোনভাবেই বাংলাদেশে আসবে। সেটা ব্যাংকিং খাত দিয়েই আসবে। তবে আমরা হিসাব করে দেখেছি, গত ছয় দিনে যা গড় হয়েছে তা ১৫ মিলিয়ান ডলারের নিচে। এটা ভারচুয়ালি নাথিং। এর প্রায় আট দশ গুণ বেশি হ । আমরা যদি প্রতিদিন ১৫ মিলিয়ন ডলারের মতো পাই। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিন এভাবে কম প্রবাসী আয় আসলে আমাদের অর্থনীতির বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। প্রবাসী আয় গত দুইমাস ভালোই এসেছিল। এখন জুলাই মাসে দেশে ছাত্র আন্দোলনের কারণে দেখছি প্রবাসী আয়ে ভাটার টান দেখা যাচ্ছে ।
টিএমএ প্রশ্ন: প্রবাসী আয়ের কম আসার ক্ষতি কিভাবে পূরণ করা হবে ?
ড. আহসান এইচ মনসুর: সরকারের চিন্তা করতে হবে কিভাবে এটাকে সামাল দিবে। ইতিমধ্যেই দেশের বৈদেশিক রিজার্ভ নামতে শুরু করেছে। সরকারকে বিষয়টি নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। যাতে রির্জাভ আর না কমে। প্রবাসী আয়ের ক্ষতি পূরণ করতে দেশে বিদেশে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী এবং বিদেশে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়াতে হবে ।
টিএমএ: প্রশ্ন রির্জাভ কেন কমে যাবে ?
আহসান এইচ মনসুর: রির্জাভ কেন কমবে না, আমদানি করতে জাহাজের ভাড়া বৃদ্বি পাচ্ছে। আমদানি ব্যয় কয়েকগুণ বেড়েছে । ব্যবসায়ীদের আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় রিজার্ভের চাপ তো বেড়ে যাবে সেই বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। নিকট ভবিষ্যতে এই রিজার্ভের ওপর চাপটা খুব বাড়বে। প্রথমত আসবে প্রবাসী আয় থেকে। দ্বিতীয়ত রপ্তানি আয় থেকে। তৃতীয়ত আমাদের বৈদেশিক সাহায্যের ধারাবাহিক প্রবাহ কমে যাতে পারে। অনেক বিদেশী মিশন বাংলাদেশে তাদের প্রকল্প পর্যালোচনা করতে আর আসতে পারবে না । প্রকল্পের টাকা অতিদ্রুত ছাড় দিতে পারবে না, সেই টাকা ছাড় দিতে দেরী হবে। পরিকল্পনার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীর গতি দেখা যাবে। দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে এ অবস্থা দেখা দেবে । বহির্বিশ্বে আমদানি করতে জাহাজের ভাড়া বেশি দিতে হবে। আমাদের হয় তো ঋণপত্র নিস্পত্তির খরচ বেড়ে যাবে। কারণ বাংলাদেশ অর্থনীতির জন্য প্রিয় দেশ নয়। এখন এটা দূর্যোগপূর্ণ দেশ । বিশ্বের চোখে বাংলাদেশ একটা সংঘাতপূর্ণ দেশে পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে যেটা হয়েছে আমাদের রপ্তানি আদেশ কমে গেছে। রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়ে যেতে পারে। ঘাটতির পরিমাণটা বেড়ে যাবে। রির্জাভের ওপর চাপ পড়বে ।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের অর্থনীতি তো আইএমএফের পরামর্শে পরিচালনা করা হচ্ছে ?
ড .আহসান এইচ মনুসর: বাংলাদেশের অর্থনীতি আন্তর্জাতিক মূদ্রা তহবিলের(আইএমএফ) ঋণের বাধ্যবাধকতায় বা পরার্মশে চলছে । আইএমফ বা যে কোন সংস্থার পরার্মশে চলি না কেন সেখানে সামষ্টিক অর্থনীতির শর্ত এবং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এগুলো কিন্তু ধরে নিয়েই নীতি ঠিক করা হয়। এই আইএমফের ঋণের পলিসি ফ্রেমওয়ার্কে এই ছাত্রদের আন্দোলনকে ধরা হয়নি। এটা একটা বিশাল অভ্যন্তরিণ ধাক্কা। দেশের অভ্যন্তরিণ অর্থনৈতিক ব্যাপক আকারে ধাক্কা খেয়েছে। কাজেই এখনই আমাদের অর্থনৈতিক ধাক্কাটাকে আমলে নিতে হবে। বিবেচনা করতে হবে এর প্রভাব কতটা খারাপ হবে। এর প্রভাব সবে আশা শুরু হয়েছে। আগামীতে আসবে আরো আসবে প্রভাবটা। আমাদের বৈদেশিক মূদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল হয়ে এসেছিল। ফলে মূদ্রাস্ফীতি কমে আসা শুরু হয়েছিল। এখন কিন্তু আবার বৈদেশিক মূদ্র্রার বিনিময় হারের ভিত্তিটা কেঁপে গেছে। আমি বলবো না এটা নড়বড়ে হয়ে গেছে। এটা যদি স্থিতিশীল না করতে পারি তা হলে মূল্যস্ফীতি আবার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। আমি বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছি। মে মাস থেকে সামষ্টিক অর্থনীতি একটু একটু করে স্থিতিশীল হতে শুরু করেছিল । সেটা এখন একটা ধাক্কা খেয়েছে ।