আদানি থেকে বিদ্যুৎ আমদানি কার স্বার্থে

আদানি থেকে বিদ্যুৎ আমদানি কার স্বার্থে

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ভারতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য রফতানির মাধ্যমে বাংলাদেশে ব্যবসা করছে। এর মধ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে আদানি গ্রুপ। এই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানি করছে। যে সময় আদানি গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি হয় তখন বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল ১২ হাজার মেগাওয়াট আর বাংলাদেশের গ্রাহকরা বিদ্যুৎ ব্যবহার কতো ৮ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। পরবর্তী বছরগুলোতে বাংলাদেশেই তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সুতরাং এই সময়ে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও আদানির বিদ্যুতের কোনো প্রয়োজন নেই।

আদানি গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ আমদানির এই চুক্তির বিষয়টি বহু বছর গোপন রাখা হয়েছিল। চুক্তিপত্রটি প্রকাশ্যে আসার পর বাংলাদেশ-ভারতসহ বিশ্বের গণমাধ্যম ও কূটনৈতিক মহল চুক্তির শর্তগুলো দেখে অবাক হয়েছে। চুক্তির শর্তে বলা আছে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ আমদানি না করলেও প্রতি কিলোওয়াটের ৩৪ শতাংশ দাম আদানিকে দিতে হবে।

৬ বছর আগে ইনস্টিটিউট অব এনার্জি ইকনোমিক অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস নামে একটি মার্কিন সংস্থা চুক্তিপত্র বিশ্লেষণ করে এ তথ্য বের করেছে। এই চুক্তির বিষয়ে তাদের মন্তব্য ছিল, বাংলাদেশের জন্য এই প্রকল্প খুবই ব্যয়বহুল, সময়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটের কারণে বাংলাদেশে নতুন সরকার গঠন হয়েছে, অর্থনৈতিক অবস্থা কিছুটা দুর্বল হয়েছে, মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। এ অবস্থায় আদানির সঙ্গে চুক্তি বিদ্যুৎ নিয়ে চুক্তিটি কার্যকর থাকবে কিনা, বাতিল হবে কিনা, নবায়ন করা হবে কিনা- এসবের ব্যাপারে কোনো কিছুই জানা যায়নি।

অন্যদিকে, আদানি গ্রুপ ভারতের সরকারি প্রতিষ্ঠান পাওয়ার ফাইন্যান্স কর্পোরেশন ও রুর‍্যাল ইলেক্ট্রিফিকেশন কর্পোরেশন থেকে ঋণ নিয়ে উড়িষ্যার ঝাড়খণ্ডে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা আমদানি করেছে। এসব সেবার জন্য ভারত সরকার আদানির কাছ থেকে কোনো শুল্ক কিংবা ট্যাক্স নেয়নি। 

ঝাড়খণ্ডে যেখানে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, সেই জায়গার জন্য কোনো অর্থ খরচ করতে হয়নি। এছাড়া আদানি গ্রুপ বাংলাদেশের কাছ থেকে বিদ্যুৎ রফতানির মূল্য নিচ্ছে মার্কিন ডলারে, যা মূল খরচের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেশি।

অর্থাৎ, বাংলাদেশ সরকার ও আদানি গ্রুপের মধ্যে বিদ্যুৎ রফতানির এই চুক্তির মাধ্যমে ভারত সরকারের কোনো লাভ হচ্ছে না। ভারতের জনগণের কোনো উপকার হচ্ছে না। বাংলাদেশেরও কোনো লাভ নেই। একমাত্র যার লাভ তিনি হচ্ছে আদানি গ্রুপের কর্ণধার গৌতম আদানি।