সরকারি কমার্স ব্যাংক, নিয়ন্ত্রণ ও লুট করেছে এস আলম গ্রুপ

সরকারি কমার্স ব্যাংক, নিয়ন্ত্রণ ও লুট করেছে এস আলম গ্রুপ

সরকারি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকটির ৫১ শতাংশ শেয়ারের অংশীদার। অথচ এ ব্যাংকের পুরো নিয়ন্ত্রণ বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের হাতে। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ব্যাংকটিতে চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকও নিয়োগ দিয়েছে এই গ্রুপ। তাদের মালিকানাধীন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আটকা পড়েছে ব্যাংকটির ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের।

 এস আলম গ্রুপ কমার্স ব্যাংক থেকে সরাসরি ঋণ নেয়নি। তাদের মালিকানাধীন অন্য ব্যাংকগুলোয় টাকা জমা রেখেছে কমার্স ব্যাংক। সেসব ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে টাকা নেয় এস আলম গ্রুপ। এতে কমার্স ব্যাংকের ৬১০ কোটি টাকা আটকা পড়েছে। এ ছাড়া এস আলম ও প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আটকে আছে ৭০০ কোটি টাকা। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও এসব টাকা ফেরত পাচ্ছে না কমার্স ব্যাংক। বেশির ভাগ বিনিয়োগ থেকে সুদও পাচ্ছে না।

এদিকে কমার্স ব্যাংক থেকে কৌশলে অন্য ব্যাংকে টাকা নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি এস আলম গ্রুপ, ব্যাংকটিতে প্রায় ৬০০ জনবলও নিয়োগ দিয়েছে তারা। এর বেশির ভাগই গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের চট্টগ্রামের পটিয়া এলাকার। সার্বিকভাবে আধা সরকারি এই ব্যাংকের কার্যক্রম থমকে আছে।

বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক সরকারি খাতের ব্যাংক ও সরকার। বাকি শেয়ারের বড় অংশই ২০১৬ সালের আগে ছিল বিকল্প ধারার সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান, এমজিএইচ গ্রুপের এমডি আনিস আহমেদ ও আনোয়ার গ্রুপের কাছে। ২০১৬ সালে এসব শেয়ার নামে-বেনামে কিনে নেয় চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপ। এরপর নিজের পছন্দের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগ দিয়ে ব্যাংকটির পুরো নিয়ন্ত্রণ নেয় তারা। বর্তমানে এস আলম গ্রুপের পক্ষে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন রশিদ আহমেদ চৌধুরী, তিনি চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত। আর এমডি তাজুল ইসলাম আগে জনতা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। জনতা ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ঋণ রয়েছে, সেই সূত্রে তাজুল ইসলামের সঙ্গে এস আলম গ্রুপের সখ্য গড়ে ওঠে বলে শোনা যায়।

২০১৬ সালে কমার্স ব্যাংকে কর্মকর্তা ছিলেন প্রায় ৪০০ জন, যা বেড়ে এখন হয়েছে ১ হাজার। এসব কর্মকর্তার পদায়নের জন্য নতুন নতুন শাখা, উপশাখা ও বিল সংগ্রহ বুথ চালু করেছে।

ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অবলুপ্ত বাংলাদেশ কমার্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড (বিসিআইএল) প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৬ সালের ২৭ জানুয়ারি। পরে তফসিলি ব্যাংক হিসেবে ১৯৯৯ সালে এটি বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক নামে কার্যক্রম শুরু করে।
যেভাবে লোপাট গ্রাহকের টাকা

এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন ব্যাংকে প্রায় ৬১৫ কোটি টাকা জমা রাখে কমার্স ব্যাংক। সে টাকা তারা নামে-বেনামে নিয়ে নেয়। ফলে ইসলামী ব্যাংকে ২৩০ কোটি টাকা, ইউনিয়ন ব্যাংকে ১৪০ কোটি টাকা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা আটকা পড়েছে কমার্স ব্যাংকের। বাকি টাকা আটকা আছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে।

এভাবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় আটকে আছে ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে আভিভা ফাইন্যান্সে আটকা ২৯০ কোটি টাকা। আভিভা ফাইন্যান্সের চেয়ারম্যান স্বয়ং সাইফুল ইসলাম। এ ছাড়া বহুল আলোচিত পি কে হালদারের মালিকানাধীন পিপলস লিজিংয়ে ১৫৪ কোটি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে ১৪৭ কোটি, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিতে ৭১ কোটি, এফএএস ফাইন্যান্সে ২০ কোটি, প্রিমিয়ার লিজিংয়ে ৮ কোটি এবং ফার্স্ট লিজ ফাইন্যান্সে ৯ কোটি টাকা আটকা।