এস আলমের সাতটি ব্যাংক এবং আইসিবি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ১৩০৪ কোটি টাকা দিতে পারছে না

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) স্থায়ী আমানত হিসেবে রাখা ১৩০৪ দশমিক ০২ কোটি টাকা ফেরত দিতে পারছে না এস আলমের কুক্ষিগত সাতটি বেসরকারি ব্যাংক এবং ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। যদিও বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক এস আলমের ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে আগের মালিকায় হস্তান্তর করা শুরু করেছে।

চবক চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং নৌ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বন্দর কর্তৃপক্ষের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন।

চবক চেয়ারম্যানের চিঠিতে বলা হয়েছে, উপর্যুক্ত বিষয়ে আপনার সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, ব্যাংকসমূহের বিভিন্ন শাখায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের  তহবিল, পেনশন তহবিল ও ভবিষ্যৎ তহবিল বিভিন্ন সময়ে স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ করা হয়। বর্তমান সময়ে উল্লিখিত ব্যাংকসমূহের আর্থিক দুরবস্থা, অনিয়ম ও তারল্য সংকটের বিষয়গুলো নিয়মিতভাবে গণমাধ্যম ও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার দরুন উক্ত ব্যাংকসমূহে চবকের স্থায়ী আমানতসমূহ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে প্রতীয়মান হওয়ার কারণে ব্যাংকসমূহের আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় চবক এত বিনিয়োগকৃত টাকার আসল ও সুদ বারবার পত্রের মাধ্যমে চমকের অনুকূলে পরিশোধের জন্য অনুরোধ জানানো হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসমূহ থেকে আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলশ্রুতিতে চবকের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য চলমান গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থ ব্যয়সহ অন্যান্য বায় নির্বাহ দুরূহ হয়ে পড়ছে। এতে চবক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং সরকার রাজস্ব আয় হতে বঞ্চিত হচ্ছে।

বর্তমানে এস আলমের ব্যাংকসমূহে চবক এর স্থায়ী আমানতের একটি তালিকা অনুসারে- ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি কাছে চবকের আমানতের পরিমাণ হচ্ছে ৪২১ দশমিক ৭ কোটি টাকা। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি (১১৫ কোটি টাকা), সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি (২১২ দশমিক ১৫ কোটি টাকা),  ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএসসি (১৯১ দশমিক ৭৬ কোটি টাকা), ন্যাশনাল ব্যাংক পিএলসি (২৫ কোটি টাকা), বেসিক ব্যাংক পিএলসি (১৩৭ দশমিক২৪ কোটি টাকা), ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (৭২ দশমিক ৪৯ কোটি টাকা) এবং পদ্মা ব্যাংক পিএলসি ( ১৭৯ দশমিক ৩১ কোটি টাকা)।

ইতোপূর্বে পদ্মা ব্যাংক পিএলসি, ন্যাশনাল ব্যাংক পিএলসি, বেসিক ব্যাংক পিএলসি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি এবং ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশে রক্ষিত চবক এর সকল স্থায়ী আমানত নগদায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কয়েক দফায় চিঠি দেওয়া হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অদ্যাবধি চবক এর নগদায়নের ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

গত আগস্ট মাসের ২৭ তারিখে ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি এর বিভিন্ন শাখায় রক্ষিত চবক এর সকল স্থায়ী আমানত নগদায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে চেয়ারম্যান চবক মহোদয়ের সভাপতিত্বে চবক বোর্ড রুমে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকসমূহকে চবক এর নগদায়নের জন্য অনুরোধ করা হলে ব্যাংকগুলো সমূহ নগদায়নের ক্ষেত্রে দেশের চলমান পরিস্থিতি, ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে এই মুহূর্তে চবক এর আমানত নগদায়ন করা সম্ভব নয় মর্মে জানান। তবে ব্যাংকগুলো আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তারল্য সংকট উত্তরণ সাপেক্ষে চবক এর আমানত সমূহ ধাপে ধাপে পরিশোধ করা সম্ভবপর হবে মর্মে জানান।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক দি মিরর এশিয়াকে বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন খাতে এই সব ব্যাংক থেকে টাকা পায়। জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে কিছু ব্যাংকের পে-অর্ডার ও চেক ক্যাশ করা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষের টাকা এই আটটি ব্যাংক এবং সরকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান টাকা ফেরত দিতে পারছে না। বিষয়টি সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলকে জানানো হয়েছে । দেখা যাক কি হয় ।