দুর্নীতিবাজদের সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন থেকে বিদায় করা হোক
বাংলাদেশে চাকরির বাজার অসম্ভব মন্দার কারণে শিক্ষিত তরুণ সমাজসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের দুইটা পয়সা আয় করার অন্যতম উৎস ছিল শেয়ার বাজার। অনেকেই অল্প কিছু পুঁজি নিয়ে এই ব্যবসা করে কোনোরকমে টিকে ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শেয়ার বাজার হয়ে উঠে তাদের খেলার মাঠ।
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজি নিয়ে তারা একপ্রকার ছিনিমিনি শুরু করে দেয়। লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারীদের পেটে লাথি মেরে সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে বিএসইসি, ডিএসই, আইসিবি সহ বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং তাদের তৈরি কথিত গেমলাররা হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। খায়রুল হোসেন ও শিবলী রুবাইয়াত ছিল এদের টাকা বানানোর কারিগর। বিশেষ করে সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের ৯৫% কর্মকর্তা কর্মচারীরা প্রত্যক্ষভাবে বিভিন্ন অনিয়ম করে বাজার থেকে কারসাজি করে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে সহায়তা করে।
৫ আগস্ট নতুনভাবে দেশ স্বাধীন হলে সব জায়গায় পরিবর্তনের হাওয়া লাগে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করে। সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনেও পরিবর্তনের হাওয়া লাগে। নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় মাশরুর রিয়াজকে।
কিন্তু কমিশনের অন্যতম দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, আনোয়ার হোসেন সহ কিছু কর্মকর্তাদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মাশরুর রিয়াজ আর যোগদান করতে পারেনি। সরকার নতুন একজন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়, সাথে পুরোনো তিনজন কমিশনারের জায়গায় নতুন তিনজন নিয়োগ পান।
নতুন চেয়ারম্যানের ক্যাপিটাল মার্কেট নিয়ে বিন্দু পরিমাণ ধারণা নেই। তার এই অজ্ঞতার সুযোগ নেয় মহা দুর্নীতিবাজ কমিশনার তারেকুজ্জামান। যে কিনা ডিএসইর ১২ লক্ষ টাকা বেতনের চাকরি ছেড়ে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা বেতনে কমিশনে কমিশনার হিসেবে যোগদান করে। শিবলী রুবাইয়াত দ্বিতীয় মেয়াদে চেয়ারম্যান নিয়োগের আগে সেও চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে ছিল। তার লবিং ছিল সরাসরি ভারতীয় দূতাবাস। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হকের ভগ্নিপতি হওয়ার কারণে তার সম্ভাবনাও ছিল। কিন্তু সালমান এফ রহমান এর পরেরবার তাকে চেয়ারম্যান বানানোর আশ্বাস দিয়ে শান্ত করে। কিন্তু তাকে কমিশনে দেয়া হয় ব্যাপক ক্ষমতা। কমিশনে সমস্ত দুর্নীতিবাজদের গডফাদার হয়ে উঠেন তিনি।
৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর সে নিজেকে বিএনপিপন্থী পরিচয় দিতে মরিয়া হয়ে উঠে। মূলত নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেয়ার পর বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে বাজারে ভয়াবহ ধস নামে। আর এসব সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কলকাঠি নাড়ছে এই তারেকুজ্জামান। বিগত ১৫ বছরে পুঁজিবাজারের মাফিয়াদের সেফ এক্সিট দেওয়ার মিশনে নেমেছে এই তারেকুজ্জামান। শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারির কারণে এর আগে খালিদ ইব্রাহিমের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটিতে তারেকুজ্জামান কে কেলেঙ্কারির অন্যতম হোতা হিসেবে চিহ্নিত করে তাকে কমিশন থেকে অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল।
কিন্তু ভারতীয় দূতাবাসের সরাসরি হস্তক্ষেপে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। তার মত এমন দুর্নীতিবাজ লোককে কমিশন থেকে অব্যাহতি না দিলে বাজারের অবস্থা ভয়াবহ হবে এবং বাজারকেন্দ্রিক দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হবে। বাজারকে অস্থিতিশীল করে তারেকুজ্জামান দেশকে অস্থিতিশীল করার মিশনে নেমেছে "র" এর প্রেসক্রিপশন।
তাকেসহ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কমিশন থেকে প্রত্যাহার না করলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সাধারণ বিনিয়োগকারীরা রাজপথে নেমে আসবে।