উৎপাদন বন্ধের ঝুঁকিতে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প

উৎপাদন বন্ধের ঝুঁকিতে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প

কয়লা আমদানি, সিন্ডিকেট ও আইনি জটিলতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের। কয়লাভিত্তিক প্রকল্পটিতে ১২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট পূর্ণাঙ্গভাবে উৎপাদনে থাকলেও সেটি যে কোনো সময় বন্ধের ঝুঁকিতে রয়েছে।

জানা গেছে, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রকল্পটিতে ২২ লাখ ৫ হাজার টন কয়লা আমদানি করে জাপানের সুমিটোমো কর্পোরেশন (Sumitomo Corporation)। তবে তাদের চুক্তি শেষ হওয়ার পরই দেখা দিয়েছে জটিলতা। আর তাতেই উৎপাদন বন্ধের ঝুঁকিতে দেশের ২০ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের এ প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্র বলছে, সুমিটোমো কর্পোরেশনের চুক্তি শেষ হলে প্রকল্পটিতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কয়লা আমদানির দায়িত্ব পায় কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড। এজন্য তারা গত বছরের ১৫ নভেম্বর কয়লা আমদানির জন্য দরপত্র আহ্বান করে। পরে দুই মেয়াদে দরপত্র দাখিলের সর্বশেষ তারিখ নির্ধারণ করা হয় চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি। এ সময়ের মধ্য ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে।

এর মধ্যে কনসোর্টিয়াম অব ইউনিক সিমেন্ট ইন্ডাট্রিস লিমিটেড এবং সিঙ্গাপুরের আদিত্য বিরলা গ্লোবাল ট্রেডিং প্রকল্পটির বিডার হিসেবে যুক্ত হয়। এতে মেসার্স বসুন্ধরা মাল্টি ট্রেডিং লিমিটেড, ইকুয়েন্টিয়া ন্যাচারাল রিসোর্সেস লিমিটেড এবং আত্রো ইন্টারন্যাশনাল (এফজেডই) বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথোরিটিতে (বিপিপিএ) রিভিউ পিটিশন দাখিল করে।

ঐ তিন প্রতিষ্ঠানের পিটিশন রিভিউ শুনানি শেষে দরপত্র প্রক্রিয়ায় ‘কারিগরি মূল্যায়ন অংশ’ সঠিক আছে বলে জানায় বিপিপিএ। একই সঙ্গে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি আর্থিক প্রস্তাব পুনর্মূল্যায়নে কোনোভাবেই মূল্যায়িত সর্বনিম্ন বা একমাত্র দরদাতার সঙ্গে আলোচনা না করার নির্দেশ দেয়।

সূত্র আরো জানিয়েছে, প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ব্যক্তি স্বার্থে ইউনিক সিমেন্ট ইন্ডাট্রিস লিমিটেড এবং সিঙ্গাপুরের আদিত্য বিরলা গ্লোবাল ট্রেডিংকে বেআইনি সুবিধা দিতে দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়ায় দেরি করে। পরে গত ৮ জুলাই মেসার্স বসুন্ধরা মাল্টি ট্রেডিং লিমিটেড, ইকুয়েন্টিয়া ন্যাচারাল রিসোর্সেস লিমিটেড এবং আত্রো ইন্টারন্যাশনাল (এফজেডই) হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট পিটিশন করে, যার পরিপ্রেক্ষিতে কয়লা কেনার দরপত্রের সব কার্যক্রমের ওপর ছয় মাসের স্থগিতাদেশ প্রদান করেন আদালত।

সর্বশেষ গত ২৫ জুলাই ইউনিক সিমেন্ট ইন্ডাট্রিস এবং আদিত্য বিরলার ‘লিভ টু আপিল’ দাখিলের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের রায়ের ওপর আট সপ্তাহের স্থগিতাদেশ প্রদান করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর পরবর্তী শুনানি আগামী ১৮ সেপ্টেম্বরের পরে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশি চারটি প্রতিষ্ঠান যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রস্তাবনা দাখিল করলেও ‘আর্থিক সক্ষমতা নেই’ অজুহাতে শুরুতেই তিনটি প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেওয়া হয়। পরে গত ২৭ মে কারিগরি কমিটির সভায় চারটি কনসোর্টিয়ামের সবগুলোর আর্থিক প্রস্তাবনা বাতিল করা হয়।

এছাড়াও গত ৩১ মে সিপিজিসিবিএলের বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জাতীয় গুরুত্ব বিবেচনায় বাতিল করা ইউনিক সিমেন্ট কনসোর্টিয়ামকে কয়লা সরবরাহের অনুমোদন দেওয়া হয়।

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক আবুল কালাম আজাদের একক ক্ষমতা বলে অবৈধভাবে মেঘনা গ্রুপের ইউনিক সিমেন্ট কনসোর্টিয়ামকে কয়লা সরবরাহের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয় এবং এ বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বসুন্ধরা, ইকুয়েন্টিনা ও আত্রোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট কয়লা আমদানিতে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা দেন।