বাংলাদেশি পণ্যের চীনে শতভাগ শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার
চীনের বাজারে শতভাগ শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পেয়েছে বাংলাদেশি পণ্য। সম্প্রতি চীনের স্টেট কাউন্সিলের কাস্টমস ট্যারিফ কমিশনের অফিস এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে। ফলে এখন থেকে বাংলাদেশ থেকে কোনও পণ্য চীনে রপ্তানি করলে কোনো ধরনের শুল্ক দেওয়া লাগবে না।
গত ৫ সেপ্টেম্বর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং চীন-আফ্রিকা সহযোগিতা ফোরামের বেইজিং শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঘোষণা করেন, আফ্রিকার ৩৩টি দেশসহ চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কযুক্ত এলডিসিভুক্ত দেশগুলো চীনের বাজারে শতভাগ শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করবে। বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চীনই প্রথম এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের আলোকে সম্প্রতি চীনের স্টেট কাউন্সিলের কাস্টমস ট্যারিফ কমিশনের অফিস ঘোষণা দিয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে একতরফা উন্মুক্তকরণ ও সাধারণ উন্নয়ন অর্জনে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে- এমন এলডিসিভুক্ত দেশগুলো শতভাগ অগ্রাধিকারমূলক শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করবে। এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশও ১ ডিসেম্বর থেকে চীনে রপ্তানিকৃত পণ্যের জন্য এই সুবিধা ভোগ করবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২৪ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ৬৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। বিপরীতে চীন ২ হাজার ২৯০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। বাংলাদেশ প্রধানত তৈরি পোশাক, পাট, পাটজাত পণ্য, মাছ ও চামড়া রপ্তানি করে থাকে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ আমদানি করে মূলত মূলধনি যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল, ভোগ্যপণ্য ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ ও কাঁচামাল। বৈশ্বিক বাণিজ্য সংস্থা ডব্লিউটিওর তথ্যমতে, ২০২২ সালে দেশটি ২ দশমিক ৭২ টিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। সেই দেশটিতে আমরা যদি মাত্র ১ শতাংশ পণ্য রপ্তানি করতে পারি, তাহলে দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ২৭ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে উন্নীত হবে।
এদিকে ২০২২ সালে চীন তার বাজারে বাংলাদেশকে ৯৯ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলেও বাংলাদেশ সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না বরং দেশটিতে রপ্তানি আরও কমেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশটিতে রপ্তানি হয়েছে ৬৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য। আগের অর্থবছরে তা ছিল ৬৮ কোটি ৩৪ লাখ ডলার।
একই সঙ্গে কমেছে দেশটির বিনিয়োগও। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্যানুসারে, সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ এসেছে ৯ কোটি ৩২ লাখ ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা ছিল ১১৫ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। ২০০০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশটির মোট বিনিয়োগ ১২৫ কোটি ৬২ লাখ ডলার।
ইতিমধ্যেই বলা হয়েছে, বিশ্বের জোগানদার খ্যাত চীনের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য–ঘাটতি বিশাল। সফরকালে এই ব্যবধান কমিয়ে আনতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা চাইবেন বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বাড়ানো। একই সঙ্গে বিনিয়োগ করা শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে আবার রপ্তানি করা গেলে এই বাণিজ্য–ঘাটতি একসময় কমে আসবে। বাংলাদেশে চীনের প্রায় ৩০০ প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ রয়েছে। এটা ১০ গুণ বৃদ্ধি হতে পারে।