উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই বেকার

উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই বেকার

দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে গত তিন বছরে উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করা প্রায় ১৯ লাখ শিক্ষার্থীর অধিকাংশই এখনো কর্মহীন। বিপুলসংখ্যক এ বেকার জনগোষ্ঠদের জন্য দ্রুতই কর্মসংস্থান তৈরি করা না গেলে দেশের জন্য তারা বড় বোঝা হয়ে দাঁড়াবেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রতি বছর দেশে কী পরিমাণ তরুণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছেন সে তথ্য সংরক্ষণ করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। 

সংস্থাটির ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সে বছর পাস কোর্স (তিন বছর মেয়াদি), স্নাতক (সম্মান), স্নাতকোত্তর ও পোস্ট গ্র্যাজুয়েট সম্পন্ন করেন ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৫২৮ শিক্ষার্থী। 

২০২২ সালে গ্র্যাজুয়েট সম্পন্ন করেন ৬ লাখ ৪৭ হাজার ৬২০ জন। ২০২৩ সালে কী পরিমাণ শিক্ষার্থী উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে বের হয়েছেন সে তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়া এখনো চলমান। 

সব মিলিয়ে গত তিন বছরে দেশের বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ১৮ লাখ ৯২ হাজারের বেশি ছাত্র  উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন। এসব স্নাতকদের একটা বড় অংশ এখনো কর্মসংস্থানে প্রবেশ করতে পারেননি। আবার যারা চাকরি পেয়েছেন তাদের বেশির ভাগই বেসরকারি ও সাধারণ মানের কিছু প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।

বাংলাদেশ শ্রমশক্তি জরিপ ২০২২-এর প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সামগ্রিকভাবে দেশের উচ্চ শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মাত্র ২৫ দশমিক ৪১ শতাংশ আনুষ্ঠানিক কর্মে নিয়োজিত। সদ্য স্নাতক সম্পন্নদের মধ্যে কর্মসংস্থানের এ হার আরো কম। তাদের বেশির ভাগই কর্মহীন। 

দেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানে এমন ধস নামার পেছনে মূলত চাকরির বাজার সংকুচিত হওয়াকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। বেকারত্বের জন্য মানহীন শিক্ষা ব্যবস্থাকে দায়ী করেন তারা।

বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, সরকার সেবা খাতে কর্মসংস্থান বাড়াচ্ছে। বেসরকারি খাতও বড় হচ্ছে। এর সঙ্গে সংগতি রেখে তরুণদের কর্মদক্ষ করে তুলতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে সব অভিভাবক চান তার সন্তান ডেস্ক জব করুক। ডেস্ক জব ছাড়া অন্যান্য চাকরিও যে সম্মানজনক, সেটি বুঝতে হবে। এ অবস্থার পরিবর্তন আনতে হলে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোও জরুরি।

আর্থিক খাতের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ফাইন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মামুন রশীদ এ বিষয়ে বলেন, সমীক্ষায় দেখা যায় বাংলাদেশে প্রচ্ছন্ন বেকারত্ব রয়েছে। যারা কাজ পাচ্ছেন, সেটাও তার উপযুক্ত না। অনেকে স্নাতক শেষ করে পারিবারিক ব্যবসায় যুক্ত হন। এ ধরনের শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় যেটাই হোক একটা ডিগ্রি হলেই চলে। এছাড়া আরেকটি দল আছে শুধু বিসিএসের প্রতি আগ্রহী। 

‘‌আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো শিক্ষার মান। কারিগরি জ্ঞান নেই, সক্ষমতা উন্নত না, হাতেকলমে কোনো শিক্ষা নেই। ফলে মানসম্পন্ন কাজও করতে পারছেন না অনেকে।’

ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২২-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছরই সিএসই ও আইটিতে স্নাতক সম্পন্ন করে বের হন ১২ হাজারের মতো শিক্ষার্থী। তবে এর বিপরীতে দেশের আইটি শিল্পে প্রতি বছর জনবল নিয়োগ হয় কেবল পাঁচ হাজার। অর্থাৎ প্রতি বছর চাহিদার দ্বিগুণেরও বেশি শিক্ষার্থী এ দুই বিষয়ে স্নাতক করছেন। যদিও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের চাহিদা অনুযায়ী কর্মী পাচ্ছে না। ফলে স্নাতক শেষে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার অভাবে চাকরিপ্রত্যাশীদের বেশির ভাগকেই দীর্ঘদিন বেকার থাকতে হচ্ছে। 

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) এক পর্যবেক্ষণেও বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব কোর্সে উত্তীর্ণ হয়ে এলেও ৮০ শতাংশ স্নাতক ডিগ্রিধারী চাকরির লিখিত পরীক্ষায় মৌলিক কোডিং, ইংরেজি ও গণিতের মতো বিষয়ে ফেল করছেন। 

চাকরিপ্রত্যাশীরা অবশ্য বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীর হওয়ায় এবং বেসরকারি অধিকাংশ চাকরিতে অভিজ্ঞতা চাওয়ায় স্নাতক শেষ করে তাদের দীর্ঘদিন বেকার থাকতে হচ্ছে অথবা অতি স্বল্প বেতনে চাকরি করতে হচ্ছে। 

বর্তমানে সরকারি চাকরির বেশির ভাগ নিয়োগ হয় বাংলাদেশ সরকারি কর্ম-কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে। সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে মোট ৩৫ হাজার ৩৫৬ জনকে চাকরির সুপারিশ করেছে তারা। তাদের মধ্যে ২০২১ সালে ১৭ হাজার ৬৪৬ জন, ২০২২ সালে ৪ হাজার ৫৯৫ জন এবং ২০২৩ সালে ১৩ হাজার ১১৫ জনের চাকরির সুপারিশ করেছে পিএসসি।