নতুন এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনে সামিট গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি বাতিল

প্রতীকী ছবি

এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল নামে পরিচিত নতুন ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) স্থাপনের বিষয়ে সামিট গ্রুপের সঙ্গে করা চুক্তি বাতিল করেছে সরকার।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ করপোরেশন পেট্রোবাংলা এই চুক্তিটি বাতিল করে।

পেট্রোবাংলা গত ৭ অক্টোবর সংস্থাটির সচিব রুচিরা ইসলামের সই করা এ সংক্রান্ত একটি চিঠি সামিট গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সামিট এলএনজি টার্মিনাল-২ কোম্পানি লিমিটেডের কাছে পাঠায়।

চলতি বছরের ৩০ মার্চ তৃতীয় এফএসআরইউ স্থাপনের জন্য টার্মিনাল ব্যবহার চুক্তি (টিইউএ) এবং বাস্তবায়ন চুক্তি (আইএ) সই করেছিল সামিট গ্রুপ।

সামিটকে দেওয়া চিঠিতে জানানো হয়, সই করা চুক্তির ২৭.১ (এ) (ঝ) ধারা অনুযায়ী পেট্রোবাংলা টিইউএ বাতিল করেছে। মূল শর্তের অসম্মতি এবং অসন্তুষ্টি যার ফলে সই করা টার্মিনাল ব্যবহার চুক্তি (টিইউএ) এবং বাস্তবায়ন চুক্তির (আইএ) কার্যকারিতা নেই।

চুক্তি বাতিলের আরেকটি কারণ হিসেবে 'প্রিসিডেন্ট অব দ্য কি-পারফরম্যান্স বন্ড'র অসম্মতি ও অসন্তুষ্টির কথাও উল্লেখ করা হয়।

এর আগে সামিট গ্রুপ দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আইন বিশেষ বিধান ২০১০ -এর আওতায় তৃতীয় এলএনজি টার্মিনালের জন্য চুক্তিটি পায়।

মন্ত্রিসভার অর্থনৈতিক বিষয় কমিটির অনুমোদন অনুযায়ী সামিট এলএনজি টার্মিনাল-২ কোম্পানি লিমিটেড দৈনিক ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) হ্যান্ডলিং ক্ষমতাসম্পন্ন এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের জন্য ১৫ বছর মেয়াদি টার্মিনাল ব্যবহার চুক্তি (টিইউএ) এবং বাস্তবায়ন চুক্তি (আইএ) সই করে। এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ লাখ মার্কিন ডলার।

বর্তমানে সামিট গ্রুপ কক্সবাজারের মহেশখালীতে একটি ৫০০ এমএমসিএফডি ক্ষমতাসম্পন্ন এলএনজি টার্মিনাল ২০১৮ সাল থেকে পরিচালনা করছে, যা দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি আইন বিশেষ বিধান ২০১০ -এর অধীনে অযাচিতভাবে স্থাপন করা হয়েছে।

এই আইনের আওতায় সরকার কোনো প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র বা দরপত্র প্রক্রিয়া ছাড়াই যেকোনো কোম্পানিকে যেকোনো চুক্তি দিতে পারে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ক্ষমতায় আসার পরপরই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আইন বিশেষ বিধান ২০১০ স্থগিত এবং এই আইনের অধীনে আর কোনো চুক্তি না করার সিদ্ধান্ত নেয়।

অর্থনীতিবিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা এই আইনকে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বড় ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

এদিকে সামিট গ্রুপের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'এসএলএনজি-২ প্রকল্পের অযৌক্তিক সমাপ্তি করা হয়েছে।’

এতে বলা হয়, দায়িত্বশীল ও স্বচ্ছতার সঙ্গে বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি অবকাঠামো প্রকল্প উন্নয়নে সামিট গ্রুপের প্রমাণিত কাজের রেকর্ড রয়েছে।

এতে বলা হয়, ‘আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে, সামিট চলতি বছরের ৩০ মার্চ পেট্রোবাংলা এবং বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তার দ্বিতীয় ফ্লোটিং স্টোরেজ এবং রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) প্রকল্পের জন্য টার্মিনাল ব্যবহার চুক্তি (‘টিইউএ) এবং বাস্তবায়ন চুক্তি (‘আইএ) সম্পাদন করেছে। ২০২৬ সালের অক্টোবর থেকে প্রতি বছর দেড় মিলিয়ন টন এলএনজি সরবরাহের জন্য ১৫ বছর মেয়াদে পেট্রোবাংলার সঙ্গে বিক্রয় ও ক্রয় চুক্তি (এসপিএ) সম্পাদন করেছে সামিট।’

এতে আরও বলা হয়, ‘আজ সন্ধ্যায় আমরা এফএসআরইউ টার্মিনাল ব্যবহার চুক্তির (টিইউএ) সমাপ্তির নোটিশ পেয়েছি। আমরা মনে করি এটি অযৌক্তিক এবং পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করব।’