বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি ১১ মাসের সর্বনিম্ন আগস্টে

বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি ১১ মাসের সর্বনিম্ন আগস্টে

দেশের বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি কমে ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। গত আগস্ট মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ, যা ১১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২৩ সালের সে‌প্টেম্ব‌রে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আন্দোলনের সৃষ্ট পরিস্থিতিতে গত জুলাই-অগাস্ট মাসে দেশজুড়ে সংঘাত-সংঘর্ষ, কারফিউসহ বেশ‌কিছু দিন ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে দেশের আমদানিতে। এসব কার‌ণে ক‌মে যায় এলসি খোলার প‌রিমাণ। এমন অবস্থায় ব‌্যবসা-বা‌ণিজ‌্য ক‌মে যাওয়ায় বেসরকারি খাতের ঋণের চাহিদা তেমন ছিল না। তাই আগস্টে প্রবৃদ্ধি কমেছে। এছাড়া সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়ায় ঋণ প্রবা‌হে নে‌তিবাচক প্রভাব পড়েছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বল‌ছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে পণ্য আমদানির এলসি (ঋণপত্র) খোলা ও নিষ্পত্তি উভয়ই কমেছে প্রায় ১৩ শতাংশ।

গত জুলাই ও অগাস্টে ১০ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানির এলসি খোলা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার কম। শতাংশের হিসাবে তা ১২ দশমিক ৮৫ শতাংশ কম। ওই বছরের জুলাই-অগাস্টে এলসি খোলা হয়েছিল ১১ দশমিক ৫১ বিলিয়ন ডলারের।

দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি বোঝার অন্যতম একটি সূচক হলো মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা কমেছে প্রায় ৪৪ শতাংশ।

এদিকে দেশে কয়েক বছর ধরে চলছে উচ্চ মূল্যষ্ফীতি। অর্থের যোগান কমিয়ে এই মূল্যষ্ফীতির লাগাম টানতে চাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি বছরই পাঁচ দফা বাড়ানো হয়েছে নীতি সুদহার। এর প্রভাবে একদিকে গ্রাহক পর্যায়ে ঋণের খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে বেসরকারি খাতে কমছে ঋণপ্রবাহ। ফলে চাপে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। সুদহার বাড়ার বিরূপ প্রভাব পড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে।

এক বছর আগে ব্যাংক ঋণে সর্বোচ্চ সুদহার ছিল ৯ শতাংশ। এখন তা বেড়ে কোনো কোনো ব্যাংকে সাড়ে ১৪ শতাংশ হয়েছে। সব ব্যাংকের ঋণের গড় সুদহারও ক্রমশ বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২০ সালের জুলাইয়ে ব্যাংক ঋণের গড় সুদহার ছিল ৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ। চলতি বছরের জুলাইয়ে তা বেড়ে হয়েছে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। 

মূল্যষ্ফীতি মোকাবিলায় বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে এই ঘোষণা দিয়েছে। গত অর্থবছরের জুন পর্যন্ত প্রকৃত প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছিল ৯ দশমিক ৮০ শতাংশে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়াতে হলে অবশ্যই সরকারকে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ কমাতে হবে। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারি ঋণ গ্রহণের পরিমাণ সীমিত করার বিষয়ে সরকারকে অনুরোধ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, মূল্যষ্ফীতি ছয় থেকে সাত মাসের মধ্যে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব হলে নীতি সুদহার, ব্যাংকঋণের সুদহারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হবে।

দেশে দুই বছ‌রের বে‌শি সময় ধরে ডলারের সংকট চলছে। এতে ডলারের দাম ৮৫ থেকে বেড়ে ১২০ টাকায় উঠেছে। এর ম‌ধ্যে চল‌তি বছ‌রের মে মা‌সে ‘ক্রলিং পেগ’ নামে নতুন পদ্ধতি চালু ক‌রে এক‌দি‌নে ডলা‌রের দাম ৭ টাকা বাড়ানো হয়। ডলারের দাম বাড়ার কারণেও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কিছুটা বা‌ড়ে। কারণ, প্রতি ডলারে খরচ ৭ টাকার বেশি বেড়ে গিয়েছিল। প‌রে আমদানি ঋণ কমে যাওয়ায় বেসরকারি ঋণ কমে গেছে।