নিত্যপণ্যের মূল্য গত বছরের তুলনায় এখন কম
অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপে, ডিম, মাছ, ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংস, গুঁড়া দুধ, চিনি, আটা, টমেটো ও কাঁচা মরিচসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম গত বছরের তুলনায় বর্তমানে কম রয়েছে।
দাম বৃদ্ধির সাম্প্রতিক প্রবণতার পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার আমদানি শুল্ক হ্রাস, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) অব্যাহতি, বাজার পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করা, উন্মুক্ত বাজার বিক্রয় (ওএমএস) এবং রাষ্ট্র পরিচালিত ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) আওতায় বিক্রয়ের পরিমাণ বৃদ্ধিসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, সরকারের পদক্ষেপের ফলে বাজারে ডিম, ভোজ্যতেল ও চিনিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ বেড়েছে এবং এটি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম রাখতে সহায়তা করছে।
বাজার বিশেষজ্ঞরা সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং এক্ষেত্রে জনগণের আরও স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করতে সরকারের মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখা উচিত বলে মত দিয়েছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, কাঁচা মরিচের দাম এখন প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪০০ টাকার বেশি।
টিসিবি থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের একই দিনের তুলনায় মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) মসুর ডালের দাম ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ কম রয়েছে। গত বছরের একই দিনে মসুর ডালের দাম কেজি প্রতি ১২০ টাকা থেকে কমে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) ১১৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
আটার দাম এখন প্রতি কেজি ৪২ টাকা, যা গত বছর ছিল ৪৫ টাকা এবং প্রতি কেজি গরুর মাংসের দাম এখন ৭৫০ টাকা, আগে যা ছিল ৭৮০ টাকা।
গুঁড়া দুধের (ডানো) দাম এখন প্রতি কেজি ৮২০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৮৪০ টাকা এবং গুঁড়া দুধ (ফ্রেশ) এখন প্রতি কেজি ৭৭৫ টাকা, যার দাম গত বছর ছিল ৭৯০ টাকা। এছাড়া মঙ্গলবার চিনির দাম কেজি প্রতি ১২৮ টাকায় নেমে আসে, যা গত বছরের একই দিনে ছিল ১৩৫ টাকা।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মাসুদ করিম বলেন, দেশের ১৩টি জেলায় সাম্প্রতিক ব্যাপক বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও সরকারি পদক্ষেপে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ধীরে ধীরে কমছে।
তিনি আরও বলেন, ‘অফ সিজনের কারণে সবজির উৎপাদন এখন কম এবং সাম্প্রতিক বন্যায় ১৩টি জেলায় অনেক সবজি চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিম্ন ও নিম্নমধ্যম আয়ের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্য নিশ্চিত করতে সরকার ইতোমধ্যেই বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।’
সবজি ব্যবসায়ীরা জানান, গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খুচরা পর্যায়ে সবজির দাম কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কমেছে।
বাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদরা উল্লেখ করেন যে ভ্যাট প্রত্যাহার ও শুল্ক হ্রাস বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ বাড়িয়েছে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সাশ্রয়ী মূল্য নিশ্চিত করেছে। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনির ওপর ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
তারা বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অপরিশোধিত ও পরিশোধিত সয়াবিন তেল, পাম তেল ও অন্যান্য ভোজ্যতেলের স্থানীয় উৎপাদনের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে। এছাড়া ভোজ্যতেল আমদানির ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ ভ্যাটও প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানান তারা।
তারা উল্লেখ করেছেন, এনবিআর ডিমের আমদানি শুল্ক বিদ্যমান ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করেছে। এছাড়া তেল আমদানিতে আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে বলে জানান তারা।
সরকার আরও উদ্যোগ নিলে দেশের নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের মানুষ তাদের দৈনন্দিন জীবনে আরও স্বাচ্ছন্দ্য উপভোগ করবে বলে অভিমত দেন তারা।
ঢাকা শহরের বাসিন্দা আবু সুফিয়ান জানান, তিনি খিলগাঁও তালতলা বাজার থেকে এক ডজন খামারের ডিম ১৫০ টাকায় কিনেছেন, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৮০ টাকায়। সরকারি পদক্ষেপের কারণে ডিমের দাম কমেছে।
সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে তিনি সরকারের মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করার আহ্বান জানান।
সম্প্রতি এক বৈঠকে অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ওএমএস কর্মসূচির আওতায় সাশ্রয়ী মূল্যে কৃষিপণ্য বিক্রি করছে। প্রাথমিকভাবে রাজধানীর ২০টি স্থানে ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে সরকার।
স্থানগুলো হলো- খাদ্য ভবন, মানিক মিয়া এভিনিউ, মিরপুর-১০, বাসাবো, বসিলা, রায়ের বাজার, রাজারবাগ, মুগদা-উত্তর, মুগদা-দক্ষিণ, পলাশীর মোড়, হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড, বেগুনবাড়ি, উত্তরখান, দক্ষিণখান, কামরাঙ্গীরচর, রামপুরা ও ঝিগাতলা।
কর্মসূচির আওতায় প্রতি কেজি আলু ৩০ টাকা, ডিম প্রতি ডজন ১৩০ টাকা, পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৭০ টাকা ও সবুজ শাক-সবজি বিভিন্ন প্যাকেজে বিক্রি হচ্ছে।
সালেহউদ্দিন অবশ্য বলেন, টিসিবি, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও আরও কিছু বেসরকারি সংস্থা ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি করছে। তিনি জানান, সরকার টিসিবির অধীনে বিক্রির পরিমাণ আরও বাড়িয়েছে।