ফাঁকি দেওয়া কর খুঁজে আনতে এনবিআর আন্তরিক : চেয়ারম্যান

ফাঁকি দেওয়া কর খুঁজে আনতে এনবিআর আন্তরিক : চেয়ারম্যান

ছাত্রবিপ্লবের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে করদাতারা এগিয়ে আসলে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হতে পারে বলে মনে করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। 

বুধবার (২৩ অক্টোবর) আগারগাঁওয়ে এনবিআর সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ভ্যাট, ট্যাক্স ও অন্যান্য কর ফাঁকি দেওয়ার মাধ্যমে যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এ ব্যাপারে হয়তো প্রচার কম হচ্ছে। অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে এ ব্যাপারে এনবিআরের সমন্বয় চলমান রয়েছে। ফাঁকি দেওয়া কর খুঁজে বের করে সরকারের তহবিলে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে এনবিআর আন্তরিক রয়েছে।

অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রাজস্ব আদায়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে এনবিআর। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। 

এ পরিস্থিতিতে বছরশেষে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে কী না তা এই মুহূর্তে অনুমান করা কঠিন। তবে এনবিআর চেষ্টা করছে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের। রাজস্ব আদায় করা এনবিআরের পবিত্র দায়িত্ব। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের হার সব সময়ই বেশি থাকে।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক ছাত্রবিপ্লবে জাতীয়ভাবে নানা সমস্যা হয়েছে। জুলাই-অগাস্টে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ ছিল। ফলে ভ্যাট-ট্যাক্স আদায় কম হয়েছে। এটা কাভার করতে হবে। ছাত্রবিপ্লবের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে করদাতারা এগিয়ে আসলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হতে পারে। 

চেয়ারম্যান বলেন, আমরা অচিরেই একটা ঘোষণা দেবো। যাদের অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়নি, তারাও তো অনলাইনে রিটার্ন দিতে পারছেন, দিচ্ছেন, দেবেন। তাদের জন্য আমরা একটা পুরস্কার ঘোষণা করতে পারি, এই ঘোষণার পরে যারা শতভাগ অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করবেন, সংখ্যার ভিত্তিতে আমরা তাদের একটা সম্মাননা দেবো বা পুরস্কৃত করবো। আমরা এক্ষেত্রে করদাতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চাই। এই প্রতিযোগিতার অনলাইনে যত করদাতা আসবেন, আমাদের সিস্টেমের উপর তত প্রেশার পড়বে, আমরা সিস্টেম আরো আপডেট করার সুযোগ পাবো।’

কোনো সরকারি কর্মচারী অনলাইনে রিটার্ন দিতে না পারলে হার্ডকপি দিলে নেওয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনলাইনে না দিতে পারার কথা না। কারণ ই-রিটার্ন সিস্টেম খুব সহজ। সিস্টেমে আপনাকে শুধু ডেটা দিতে হবে, বাকি কাজ হবে অটোমেটিক ও নির্ভুল। অনেকে ভয় পান যে আমি ট্যাক্স বুঝি না। সেক্ষেত্রে কর আইনজীবী, ভাই, বোন, আত্মীয়—যে কেউ রিটার্ন প্রস্তুত করে দিতে পারবেন। করদাতার দায়িত্ব শুধু ওটিপিটা শেয়ার করা। এক্ষেত্রে দায়-দায়িত্ব কিন্তু করদাতার। ব্যাপারটা এমন না যে—রিটার্ন প্রস্তুত করদাতাকেই করতে হবে। যিনি ভালো বুঝেন, যিনি উনার বিশ্বস্ত, যাকে দিয়ে রিটার্ন করালে তিনি স্বস্তি পাবেন—তাকে দিয়ে করাবেন।

চার শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোন আঙ্গিকে সিলেক্ট করা হয়েছে, এমন প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন, যারা টেকনোলজিক্যালি অ্যাডভান্স, যাদের কর্মচারীরা সবসময় প্রযুক্তির মধ্যে থাকেন—তাদেরকে প্রথম অবস্থায় অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যেমন—ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী পুরো প্রযুক্তির মধ্যে কাজ করেন, ডেটা এন্ট্রি করেন। আবার বহুজাতিক কোম্পানি যেমন ইউনিলিভার, বিএটি, ম্যারিকো, বার্জার, বাটা, নেসলে কর্মচারীরা একটা সিঙ্গেল ভাউচার হলেও সফটওয়্যারে এন্ট্রি দেয়। প্রযুক্তি দক্ষতা আছে, অনলাইনে রিটার্ন দিতে অস্তত্বিবোধ করবেন না এমন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ই-রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আমাদের এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা অত্যন্ত খুশি মনে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, সেজন্য তাদের বাধ্যতামূলক করেছি। এর বাইরে অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। প্রয়োজন হলে আমরা আরেকটা অর্ডার করবো।

তিনি বলেন, অনলাইনে রিটার্নের সঙ্গে কোন ডকুমেন্টযুক্ত করা লাগবে না। ডকুমেন্ট দেখে ই-রিটার্ন পূরণ করবেন। সেই ডকুমেন্ট নিজের কাছে রেখে দেবেন—যদি কখনো প্রয়োজন হয়।

অনলাইনে রিটার্ন দেওয়ার ক্ষেত্রে করফাঁকি দিলে কীভাবে শনাক্ত করা হবে, জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, একটা সময় আসবে সে সময় আমরা সবার জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করবো। কেউ যদি অনলাইনে রিটার্ন দেওয়ার ক্ষেত্রে কর কম দিতে চায় বা ফাঁকি দিতে চায়—আপনি যেহেতু নিজের রিটার্নে নিজে ডিক্লার করছেন—সেহেতু দায়দায়িত্ব কিন্তু আপনার। আইন বলছে, আপনি যদি মিস ডিক্লার করেন, আপনার যদি ফাঁকি পাওয়া যায়—সেখানে আপনার উপর অতিরিক্ত করারোপ করা, জরিমানা করা—সেগুলো তো থাকবে। আপনি যদি ফাঁকি দেন, ট্যাক্স অথরিটি আপনার উপর প্রফার ট্যাক্স ও জরিমানা আরোপ করবে। 

অপ্রদর্শিত অর্থের বিষয়ে তিনি বলেন, গত বছর বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছিল। এবার কী পদেক্ষপ নেওয়া হবে সেই ব্যাপারে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। বাজেটের আগে সেটি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

করমেলা প্রসঙ্গে রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, এবার করমেলা না হলেও করসেবা থাকবে। করদাতারা অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। তাছাড়া কর অঞ্চল থেকে সব ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে। যেকোনো তথ্য কিং দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য কল সেন্টারকে আরো প্রসারিত করা হবে। এরপরও যদি কোনো করদাতার দোরগোড়ায় করসেবা পৌঁছে দিতে হয় সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিজনেস ফ্যাকাল্টির কিছু শিক্ষার্থীকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে তৈরি করে তাদের সেবা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় থাকবে।