বেতন না পেয়ে কারখানার ডিএমডিকে মারধরের অভিযোগ

বেতন না পেয়ে কারখানার ডিএমডিকে মারধরের অভিযোগ

গাজীপুরে বন্ধ হওয়া একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের এক মাসের বকেয়া বেতন ও সার্ভিস বেনিফিটের (চাকরি ছাড়ার পর আনুষঙ্গিক আর্থিক সুবিধা) টাকা না পেয়ে কারখানার উপব্যবস্থাপনা পরিচালককে (ডিএমডি) পেটানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

শ্রমিকদের মারধরে আহত রাফি মাহমুদ কালিয়াকৈর উপজেলার মাহমুদ জিনস ও মাহমুদ ডেনিম লিমিটেডের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক।

বেতনের দাবিতে মাহমুদ জিনস লিমিটেড নামের ওই কারখানার শ্রমিকেরা আজ শুক্রবারও কারখানার সামনে জড়ো হয়ে মহাসড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করেন। সকাল ১০টার দিকে শ্রমিকেরা বিক্ষোভের চেষ্টা করলে শিল্প পুলিশ শ্রমিকদের সরিয়ে দেয়।

জানা যায়, চন্দ্রা মোড় এলাকায় অবস্থিত মাহমুদ জিনস লিমিটেডে কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। বিভিন্ন সংকটের জন্য গত ৯ অক্টোবর কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করে মালিকপক্ষ। পাশাপাশি কারখানা কর্তৃপক্ষ, শ্রমিক, বিজিএমইএ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করে ২৮ নভেম্বর শ্রমিকদের বেতনসহ অন্যান্য পাওনা পরিশোধের কথা বলা হয়। সেই অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কারখানাটির সামনে আসতে থাকেন শ্রমিকেরা। কিন্তু এর মধ্যেই পাওনা পরিশোধ করা হবে না জানিয়ে নোটিশ টাঙিয়ে দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। এতে শ্রমিকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে কারখানার সামনেই বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা এলাকায় বিক্ষোভ শুরু করেন।

গাজীপুর শিল্প পুলিশ জানায়, শ্রমিক আন্দোলনের খবর পেয়ে বিকেল ৪টার দিকে মালিকপক্ষ কারখানাটির সামনে এসে শ্রমিকদের সঙ্গে বকেয়া বেতনের বিষয়ে কথা বলেন। এ সময় উত্তেজিত শ্রমিকেরা মালিকপক্ষের লোকজন ও শিল্প পুলিশের সদস্যদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। তখন শিল্প পুলিশ, থানা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে সরে যান। পরে শ্রমিকেরা মালিকপক্ষের লোকজনকে কারখানাটির ভেতরে অবরুদ্ধ করেন। তখন কারখানার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক রাফি মাহমুদ উত্তেজিত শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে নিজেই তাদের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান। একপর্যায়ে শ্রমিকেরা তার ওপর হামলা চালান। শ্রমিকদের পিটুনিতে তিনি গুরুতর আহত হন। তখন শ্রমিকদের একটি অংশ তাকে উদ্ধার করে।

কারখানার মানবসম্পদ (এইচআর) বিভাগের প্রধান অহিদুল ইসলাম বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার স্যার (রাফি মাহমুদ) শ্রমিকদের বলছিলেন, ‘আমার কাছে এই মুহূর্তে টাকা নেই। আমি আপাতত টাকা দিতে পারছি না। তোমরা আমাকে আরেকটু সময় দাও।’ কিন্তু শ্রমিকেরা বলছিলেন, টাকা আজকের মধ্যেই দিতে হবে। তখন স্যার বলছিলেন, ‘টাকা না দিতে পারলে তোমরা কি আমারে মারবা, ঠিক আছে মারলে মারো।’ এই রকম কথা বলার পর শ্রমিকেরা স্যারকে ফিজিক্যাল অ্যাসল্ট করেছে।

রাফি মাহমুদের বাবা কারখানার পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, ওই কারখানায় প্রায় চার হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের টাকাপয়সা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু টাকা ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। শ্রমিকেরা আন্দোলন করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আমার ছেলেকে ফোনে ডেকে সেখানে নিয়ে যান। রাফি মাহমুদ রাত ৮টা পর্যন্ত কারখানার ভেতরে অচেতন অবস্থায় পড়ে ছিল। তাকে চিকিৎসা পর্যন্ত করতে দেওয়া হয়নি। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার আবু তালেব বলেন, কারখানার শ্রমিকেরা আন্দোলন করলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের বলা হয়েছে, শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান করেন। তখন উনি (রাফি মাহমুদ) কারখানায় এসে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে শ্রমিকেরা উত্তেজিত হয়ে তাকে মারধর করেন। পরে আমরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকায় হাসপাতালে পাঠিয়েছি।