ফেব্রুয়ারি-মার্চে আসবে আইএমএফের ঋণের ১.১ বিলিয়ন ডলার

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের চতুর্থ কিস্তির ১ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চে পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি সরকারের শীর্ষ পর্যায়, বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আজকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দল এসেছিল। তাদের সঙ্গে ঋণ প্যাকেজ ৪.৭ বিলিয়ন ডলারে মধ্যে চতুর্থ কিস্তির ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে এটা পেয়ে যাব।’

‘আজকে মূলত তারা আসছে রাজস্ব খাত, বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা, মূল্যস্ফীতি, এগুলো দেখার জন্য। এসব বিষয়ে তারা আমাদের সাথে আলাপ করেছে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে আলাপ করবে।’- বলেন সালেহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের স্থিতিশীলতা কিন্তু ফিরে আসছে। সম্পূর্ণ আসেনি, তবে এখন সময় বিনিয়োগের। আপনারা দেখবেন ফরেন এক্সচেঞ্জ রেট আগের মতো উঠা নামা করছে না। ব্যাংকিং খাতের মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের লিকুইডি সার্পোট লাগছে। তবে ইসলামী ব্যাংকের মতো বড় ব্যাংকে কিছুটা ফিরে আসছে। ইসলাসী ব্যাংক সব বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যাংক। অন্যান্য ব্যাংকগুলোও আস্তে আস্তে ফিরে আসবে।’

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘রেমিট্যান্স খুবই ভালো। রপ্তানিও হচ্ছে ভালো, আমদানি একটু কম আছে। তবে আগের থেকে একটু বেড়েছে। মুলধনী যন্ত্রপাতি কিছু কম আসছে, সেটা কিছু রেস্ট্রিকশেনের কারণে। সেটা আমরা চিন্তা করছি কি করা যায়। তারা আমাদের এখানে থাকবে কিছু দিন। আমরা তাদের বলেছি আমরা এমন কিছু নেব যেটা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক হয়।’

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা কতোগুলো লক্ষ্যমাত্রা দেবে সেটা করতে পারবো কিনা সেটা অন্য ব্যাপার। কিন্তু আমি আশা করি তারা বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য সহায়তা দেবে।’

অতিরিক্ত ফান্ডের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উপদেষ্টা বলেন, ‘অতিরিক্ত ফান্ডের বিষয়ে আমরা আবার আলোচনা করে বলব। চলমান ৪.৭ বিলিয়ন ডলার তো প্রথম প্যাকেজের। কিন্তু সংস্কার করতে হলেতো আমাদের ফান্ড লাগবে। আমাদের অনেক কিছু সংস্কার করতে হচ্ছে। যেমন ব্যাংকিং খাত, রাজস্ব খাত। এগুলো করতে আমাদের ফান্ড লাগবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আইএমএফের পর্ষদ সভায় যে কথা বলে আসছি, সেখানে আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে চলতি অর্থ বছরের জন্য ৬ বিলিয়ন ডলারের ঋণ সহায়তা প্রত্যাশা করছি। আমরা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, ওপেকফান্ড, সব মিলিয়ে ৬ বিলিয়ন ডলারের আশা। কিছু দিন পর এডিবি আসবে, ওপেকফান্ডের টাকা আসবে। সব মিলিয়ে আগামী জুনের মধ্যে ৬ বিলিয়ন ডলার পাবো। কারণ আমাদের অনেক প্রকল্প আছে যেগুলো এক দুই বিলিয়নে চলে আসবে না। একেকটা ৪০০ ধেকে ৫০০ মিলিয়নের প্রকল্প। তবে পুরো টাকা এক বছরে আসবে না।’

চলমান ঋণ সহায়তার আওতায় আসাদের ৪.৭ বিলিয়নের মধ্যে চতুর্থ কিস্তির ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার নিয়ে ৩ বিলিয়ন চলে আসবে। বাকি যেটা সেটাতো ২০২৬ পর্যন্ত যাবে না। তখন কি করা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আইএমএফ আগামী মার্চে আবার আসবে। ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার তো ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্যে চলে আসবে। এর পরেরটার জন্য মার্চ মাসে রিভিউতে আসবে আইএমএফ এর প্রতিনিধি দল।’

শ্বেতপত্র নিয়ে তাদের সাথে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আইএমএফ এর সাথে কোনো আলোচনা হয়নি।

উল্লেখ্য, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ কমতে থাকার মধ্যে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ। এর তিনদিন পর প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড় করে সংস্থাটি। এরপর গত ১৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় করা হয়।

২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাতটি কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তির পরবর্তীগুলোতে সমান অর্থ থাকার কথা ছিল। কিন্তু রিজার্ভ আরও কমে যাওয়ায় তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তিতে বেশি অর্থ চায় বাংলাদেশ।

ইতোমধ্যে বেশকিছু কঠিন শর্তের বাস্তাবয়ন ও আগামী আরও বড় সংস্কার কার্যক্রমের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় সংস্থাটি তৃতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ডলারের পরিবর্তে ১১৫ কোটি ডলার দিয়েছে সংস্থাটি। এখন চতুর্থ কিস্তিতে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার দিতে সম্মত হয়। তবে মোট ঋণের পরিমাণ এবং মেয়াদ একই থাকবে।