প্রাকৃতিক গ্যাসের ট্যারিফ বাড়ানোর কোন পরিকল্পনা নেই
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠকে সরকার স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাসের ট্যারিফ বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। তাদের মতে, এমন কোনো পদক্ষেপ বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির চাপ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
জ্বালানি বিভাগের (ইএমআরডি) সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম গত মঙ্গলবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে আইএমএফ মিশনের প্রস্তাবিত প্রাকৃতিক গ্যাসের ট্যারিফ সমন্বয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সচিব সাইফুল ইসলাম মিরর এশিয়াকেও নিশ্চিত করেছেন যে, আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ান ডলারের ঋণ কর্মসূচির অধীনে পরবর্তী দুটি কিস্তি ছাড়ের শর্ত হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের ট্যারিফ সমন্বয়ের বিষয়ে আইএমএফ দলের প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়া সরকারের অবস্থান স্পষ্ট।
আইএমএফের ডেভেলপমেন্ট মাইক্রোইকোনমিক্স ডিভিশনের প্রধান ক্রিস প্যাপাগিওর্গিওস মঙ্গলবার একটি উচ্চ পর্যায়ের দলের নেতৃত্ব দেবেন।
আইএমএফ দল, বিশেষ করে প্রাকৃতিক গ্যাস এবং পেট্রোলিয়াম জ্বালানী সম্পর্কিত ভর্তুকি এবং সম্ভাব্য ট্যারিফ সমন্বয়ের বিষয়টি বুঝতে আগ্রহী।
ইএমআরডি সচিব সাইফুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাসের ট্যারিফের কোনো ধরনের বৃদ্ধি স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছি, কারণ এমন কোনো বৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতিকে আরও উঁচুতে ঠেলে দিতে পারে।’
সচিব ব্যাখ্যা করেছেন যে, সরকার বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য প্রতি ঘনমিটারে ০ দশমিক ৯৮ টাকা ভর্তুকি প্রদান করছে। আমদানি করা এলএনজির উচ্চতর ব্যয়ের কারণে এই ভর্তুকি বেড়েছে, যা সরকার এখন প্রতি ঘনমিটারে ৬৫ টাকায় কিনছে।
সচিব বলেছেন, ‘আমরা আইএমএফকে আশ্বাস দিয়েছি যে, এই ভর্তুকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো হবে, কারণ সরকার স্পট মার্কেট থেকে সব কোম্পানির জন্য এলএনজি আমদানির সুযোগ খুলে দিয়েছে।’
তিনি আরও যোগ করেছেন যে, এলএনজি আমদানির জন্য চূড়ান্ত নির্বাচিত কোম্পানির সংখ্যা ২২ থেকে বেড়ে ৩৩ হয়েছে।
‘আমরা এখন পেট্রোলিয়াম জ্বালানী বিপণন থেকে ন্যূনতম মুনাফা অর্জন করছি এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) পেট্রোলিয়াম জ্বালানী আমদানির কোনো বকেয়া নেই’- তিনি গর্বের সাথে যোগ করেছেন।
সচিব আরও উল্লেখ করেছেন যে, সরকারের স্মার্ট দরকষাকষি কৌশল উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাশ্রয় করেছে।
সচিব আরও বলেছেন, ‘আমরা অফিস ব্যয়ের ক্ষেত্রে কৃচ্ছতা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা করছি, প্রাকৃতিক গ্যাসের বিতরণ ও সংবহনে সিস্টেম লস কমানো এবং অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রেখে ভর্তুকি কমানোর পরিকল্পনা করছি।’
তিনি উল্লেখ করেছেন যে, প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘাটতি রয়েছে, যার মধ্যে ৪ হাজার কোটি টাকা পাওয়ার ডিভিশন দ্বারা অবৈতনিক রয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ট্যারিফ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছে, যদিও দেশটি মুদ্রাস্ফীতির চাপে ঝুঁকে পড়েছে এবং সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যার পরে অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছে। এই পদক্ষেপটি আইএমএফের ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ান ডলারের ঋণ কর্মসূচির অধীনে পরবর্তী দুটি কিস্তি ছাড়ের শর্তের অংশ।
আইএমএফের নির্দেশনা একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসেছে, কারণ বাংলাদেশের বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি ২০২৪ সালের অক্টোবরে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশে বেড়েছে, যা পূর্ববর্তী মাসের ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২৪ সালের আগস্ট মাসে ভয়াবহ বন্যার পরে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে প্রায় ১৪হাজার ৪২১ দশমিক ৪৬ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে এবং জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশের আর্থিক কষ্ট আরও বেড়েছে।
তাদের এজেন্ডায় নয়টি প্রধান ক্ষেত্র পর্যালোচনা করা হয়েছে, বিশেষ করে বিদ্যুৎ ট্যারিফের উপরের দিকে সমন্বয়। আইএমএফ আগামীকাল ট্যারিফকে প্রকৃত সরবরাহ ব্যয়ের সাথে সামঞ্জস্য করে তিন বছরের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি নির্মূল করার লক্ষ্য রাখে।
সরকারি সূত্র জানিয়েছে যে, বিদ্যুৎ বিভাগ সম্ভবত এই সময়ে বিদ্যুৎ ট্যারিফ বাড়ানোর আইএমএফের পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করেছে।