ইসলামী ব্যাংকের ১১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ, ৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ইসলামী ব্যাংকের ১১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ, ৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ইসলামী ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে ১ হাজার ৯২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলমের (এস আলম) ছেলে আহসানুল আলমসহ ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা, ব্যবসায়ী এবং ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মালিকসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে আসামি করা হয়েছে।

২০২১ সালের নভেম্বরে, মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ গোলাম সরওয়ার চৌধুরী চট্টগ্রামের ইসলামী ব্যাংকের চাক্তাই শাখায় ঋণের জন্য আবেদন করেন। ঋণ আবেদনটির সাথে জাল কাগজপত্র ব্যবহার করা হয়, যা ব্যাংকের কর্মকর্তারা যাচাই না করেই অনুমোদন দেন। প্রথমে ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৯০ কোটি টাকা, পরে তা ১ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়।

এজাহারে বলা হয়, ব্যাংকের কর্মকর্তারা পরস্পর যোগসাজশে মিথ্যা তথ্য ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ অনুমোদন করে এবং মুরাদ এন্টারপ্রাইজের নামে এ টাকা আত্মসাৎ করেন। আসামিরা ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়ার পর এটি মুরাদ এন্টারপ্রাইজের ব্যবসায় বিনিয়োগের পরিবর্তে এস আলমের বিভিন্ন ব্যবসার ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করেন। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

মামলায় ৫৮ জন আসামি করা হয়েছে—ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলম, সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান তানভীর আহমদ, সাবেক পরিচালক মো. ফসিউল আলম, সাবেক এমডি মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, সাবেক অতিরিক্ত এমডি মুহাম্মদ কায়সার আলী, সাবেক ডিএমডি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. রেজাউল করিম, বর্তমানে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম, এবং বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তারা রয়েছেন। এছাড়া মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম সরওয়ার চৌধুরী, বিসমিল্লাহ ট্রেডিং করপোরেশনের মোরশেদুল আলম, সেন্ট্রাল পার্ক ট্রেডিং হাউসের মোহাম্মদ মঞ্জুর আলমসহ ২৫টি প্রতিষ্ঠানের মালিকও মামলায় আসামি হয়েছেন।

দুদক জানিয়েছে, মুরাদ এন্টারপ্রাইজ ঋণের টাকা গ্রহণের পর তা ব্যবসায় বিনিয়োগের বদলে এস আলমের বিভিন্ন কোম্পানির ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করে। এ অপরাধের মাধ্যমে তারা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সৃষ্টি করেছে এবং মানি লন্ডারিং আইনে অপরাধ করেছে। দুদক মামলার তদন্তে গত কিছুদিন ধরে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করছে এবং এ বিষয়ে আরো তদন্ত চলমান রয়েছে।

দুদকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ঘটনার মাধ্যমে ব্যাংকটির শাখার কর্মকর্তারা এবং ব্যবসায়ী গোষ্ঠী পরস্পর যোগসাজশে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। মিথ্যা তথ্য ও জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে ঋণ নেয়ার পরও ঋণের প্রকৃত ব্যবহার যাচাই করা হয়নি, যা ব্যাংকিং খাতে বিশাল আর্থিক অপরাধ সৃষ্টি করেছে।

এদিকে, এস আলম গ্রুপের মালিক এবং আসামিদের বিরুদ্ধে আরও তদন্ত করা হচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দুদক।