করপোরেট ব্যবসায়ীরা খামারিদের চিরতরে শেষ করতে চায়: বিপিএ
করপোরেট কোম্পানিগুলোর ফিড ও মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেটের কারণে ডিম এবং মুরগির বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। একই সঙ্গে মাত্র ২০ শতাংশ বাজারের চাহিদা মেটালেও নির্দিষ্ট কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠান ফিড ও বাচ্চার উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে। তারা প্রান্তিক পোল্ট্রি ব্যবসায়ীদের চিরতরে শেষ করে দিতে চায় বলেও বিপিএর।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বিপিএ-এর 'পোল্ট্রি শিল্পের সমস্যা সংকট ও সমাধানের জন্য পোল্ট্রি বোর্ড গঠন করে, বিপিএ এর ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়।
এতে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, বড় বড় রাঘব বোয়ালের সিন্ডিকেটের কারণে সরকার নির্ধারিত দাম বাস্তবায়ন করতে পারে না। সরকার ২০ শতাংশ শেয়ার হোল্ডার করপোরেট ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করে, কিন্তু আমাদের ৮০ শতাংশকে পাত্তা দেয় না।
সুমন হাওলাদার বলেন, সরকার বারবার সিন্ডিকেট অনেক শক্তিশালী, ভাঙা সম্ভব না বলে তাদের আরও অনুপ্রেরণা দেয়। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রান্তিক খামারি ও সাধারণ মানুষ। ফিড ও বাচ্চা সিন্ডিকেটর মাধ্যমে প্রান্তিক খামারিদের চিরতরে শেষ করে তারা বাজার নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়। দেশে এক লাখ ৬০ হাজার পোল্ট্রি খামার ছিল। বর্তমানে মাত্র ৬০ থেকে ৭০ হাজার টিকে আছে। বাকি এক লাখ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এজন্য দায়ী করপোরেট সিন্ডিকেট। ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন ও ব্রিডার অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে হাতেগোনা কয়েকটি কোম্পানি এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে।
বৈষম্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রান্তিক খামারিরা যেখানে ডিম ও মুরগির ৮০ শতাংশ উৎপাদন নিশ্চিত করে, সেখানে করপোরেট গ্রুপের অবদান মাত্র ২০%। তবু করপোরেট গ্রুপগুলোর কৌশলগত বাজার নিয়ন্ত্রণের কারণে প্রান্তিক খামারিদের টিকে থাকা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে। প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ, ডিম: ১০.৫০-১১ টাকা/পিস, ব্রয়লার মুরগি: ১৫৫-১৭০ টাকা/কেজিসোনালি মুরগি: ২৪০-২৬০ টাকা/কেজি করপোরেট গ্রুপের উৎপাদন খরচ: ডিম: ৮-৯ টাকা/পিস, ব্রয়লার মুরগি: ১৩০-১৪০ টাকা/কেজি সোনালি মুরগি: ২০০-২২০ টাকা/কেজি। এই বৈষম্যের কারণে করপোরেট গ্রুপগুলো কৌশলগতভাবে দাম কমিয়ে বাজার দখল করে প্রান্তিক খামারিদের দুর্বল করে দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, যখন ডিম বা মুরগির দাম বৃদ্ধি পায়, তখন সারা দেশে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়, সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত হস্তক্ষেপও দেখা যায়। কিন্তু ফিড বা মুরগির বাচ্চার দাম বাড়লে কেন সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয় না? কেন তার প্রতিক্রিয়া থাকে না? ফিড ও বাচ্চার দাম বাড়লে এর সরাসরি প্রভাব প্রান্তিক খামারির ওপর পড়ে। তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পায় না এবং তাদের উৎপাদন খরচ বাড়তে থাকে। এই অস্থিরতার কারণে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং তাদের জন্য টিকে থাকা আরও কঠিন হয়ে পড়ে।
রমজানে দাম নিয়ন্ত্রণে তাদের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে সুমন হাওলাদার বলেন, আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে ডিম এবং মুরগির বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে এবং বাজারে সঠিক দাম নিশ্চিত করার উদ্দেশে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আগামী ১২ জানুয়ারি থেকে ঢাকা শহরের ২০ পয়েন্টে এবং পরবর্তী সময়ে পর্যায়ক্রমে ১০০ পয়েন্টে সীমিত লাভে ডিম, ফ্রোজেন মুরগি এবং অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিক্রয়ের কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে।
এছাড়া, বিপিএ এর সাপ্লাই চেইনে যুক্ত হবে দক্ষ ব্যক্তি ও উদ্যোক্তা। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া কিছুসংখ্যক স্মার্ট ছাত্র যারা কৃষি খাত এবং ভোক্তা-উৎপাদকের স্বার্থ নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। তাদের দক্ষতা এবং উদ্যমের মাধ্যমে এই উদ্যোগটি আরও কার্যকরী হবে, যা দেশের কৃষি খাতের উন্নতি এবং বাজার ব্যবস্থাপনার উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।
এ সময় সংগঠনটির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বিপিএ-এর সহ-সভাপতি বাপ্পি কুমার দে, সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াস খন্দকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. কাউছার আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইকবাল হোসেন, দফতর সম্পাদক মো. মেজবাউল হক প্রমুখ। এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির সকল সদস্যসহ সব জেলা উপজেলা থেকে বিপুলসংখ্যক ডিম মুরগি উৎপাদনকারী প্রান্তিক খামারিরা উপস্থিত ছিলেন।