বন্ধ পাটকলের কর্মজীবীদের বেতন দিতে ৩৫ কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) ও এর আওতাধীন উৎপাদন বন্ধ ঘোষিত মিলসমূহের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ২০২৪ সালের পাঁচ মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ৩৫ কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।

২০২৪ সালের আগষ্ট-ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট পাঁচ মাসের বেতন-ভাতাদি পরিশোধের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় থেকে ৬৩ দশমিক ৪৯ কোটি বরাদ্দ চাওয়ার বিপরীতে এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে বিজেএমসি'র অধীন ২৫টি মিলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণার পর  ১০৪৭ জন কর্মকর্তা ও ১৬৫২ জন কর্মচারীর বেতন-ভাতাদি বিজেএমসি এবং মিলসমূহের নিজস্ব অর্থায়নের মাধ্যমে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়।

পরবর্তীতে বিজেএমসি'র তহবিলে নগদ টাকার স্থিতি কম থাকায় ও যথাসময়ে বেতনভাতা না পাওয়ায় ও কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পরিবারের মানবেতর জীবনযাপনসহ ২০২৪ সালের আগস্ট  মাসে শিল্প কলকারখানাসমূহে শ্রমিক অসন্তোষ ও ক্ষোভ নিরসনের লক্ষ্যে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে ৩৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা পরিচালন ঋণ হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

বিজেএমসি'র জনবল যৌক্তিকীকরণসহ অতিরিক্ত জনবলের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিভাগ বা করপোরেশনে আত্মীকরণ সংক্রান্ত কার্যক্রম আবশ্যিকভাবে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সম্পন্ন করে অর্থ বিভাগকে অবহিত করার শর্ত আরোপ করা হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে বিজেএমসি'র জনবল বিষয়ে মতামত সংগ্রহের লক্ষ্যে ২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়।

অর্থ বরাদ্দের আগ পর্যন্ত সারসংক্ষেপটি অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন ছিল। বন্ধ ঘোষিত কারখানার উৎপাদন না থাকার পরও ২৬৯৯ জনবলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত তখনও হয়নি।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোতে বিরাজমান পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান এবং পাট খাতকে পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে এর আগে গঠিত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ ও অনুমোদনের ভিত্তিতে ২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে বিজেএমসি'র অধীন ২৫টি পাটকলের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে মিলের শ্রমিকদের চাকরি গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধার আওতায় আনা হয়।

পরবর্তীতে মিলগুলো ইজারা ভিত্তিতে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত হয়। বর্তমানে বিজেএমসি'র অধীন ১৪টি মিল ইজারা প্রদান করা হয়েছে যার মধ্যে ৭টি মিলের উৎপাদন কার্যক্রম পুনরায় চালু করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বন্ধ ঘোষিত ২৫টি জুটমিলের শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন পাওনাদি পরিশোধ বাবদ অর্থ বিভাগ থেকে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৯০৮ কোটি ২০ লাখ টাকা, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ২ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৯৫০ কোটি ২৬ লাখ টাকা, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৭১ কোটি ৩০ লাখ টাকা এবং ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৩৩ কোটি ৬২ লাখ টাকাসহ সর্বমোট ৯ হাজার ২০৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়।

এছাড়া বিদ্যমান বিভিন্ন পাটকলগুলোর বকেয়া বিদ্যুৎ বিলসহ বিভিন্ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগ থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

বিজেএমসি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় তাদেরকে সরাসরি রাজস্ব বাজেটের অর্থ প্রদানের কোনো সুযোগ নেই। তবে বিজেএমসির'র বিদ্যমান জনবল আত্মীকরণ বা অন্য কোনোভাবে প্রক্রিয়া গ্রহণ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন থাকায় আগের মত তাদেরকে অর্থ বিভাগের বাজেটের অধীন পরিচালন ঋণ' খাত থেকে বেতন-ভাতার বকেয়া পাওনা পরিশোধের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

বিজেএমসি’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের বিপরীতে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য শর্ত হলো—বরাদ্দকৃত অর্থ অন্য কোনো খাতে ব্যয় করা যাবে না; অর্থ ব্যয়ে সরকারের বিদ্যমান বিধি-বিধান অনুসরণ করতে হবে।

বরাদ্দকৃত অর্থ বিজেএমসি'র অনুকূলে ‘পরিচালন ঋণ; হিসেবে গণ্য হবে, যা আগামী ২০ বছরে  ৫ শতাংশ সুদে ষান্মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে।