ব্যাংকে ফিরছে টাকা, বাড়ছে আমানত
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের ব্যাংক খাতের লুটপাটের প্রকৃত চিত্র প্রকাশ পেতে থাকে। এতে আস্থার সংকটে পড়ে ব্যাংক খাত। আতঙ্কে টাকা তুলতে থাকেন মানুষ। অনেক ব্যাংকে টাকা তোলার হিড়িক পড়ে যায়। এতে ব্যাংকের বাইরে অর্থাৎ মানুষের হাতে টাকার পরিমাণ বেড়ে যায়। তবে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। ব্যাংক খাতে পুনরায় আস্থা ফিরছে। মানুষের ঘরে রাখা টাকা ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। এতে ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ বেড়েছে। গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ৬ মাসে ব্যাংকে আমানত বেড়েছে সাড়ে ৩৪ হাজার কোটি টাকা। ফলে ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৭৭ হাজার ৩১৫ কোটি টাকায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকের বাইরে মানুষের ঘরে বা হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণও কমে এসেছে। এসব অর্থের বড় অংশই ব্যাংকে ফিরে এসেছে। গত বছরের জুন শেষে ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে তা কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭৬ হাজার ৩৪১ কোটি টাকায়। সেই হিসাবে ৬ মাসের ব্যবধানে ব্যাংকের বাইরে থাকা প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকে ফিরে এসেছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ বেড়ে গেলে সেটি অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হয়। কারণ, ব্যাংকের বাইরে থাকলে টাকার হাতবদল হওয়া কমে যায়, যা দিনশেষে ‘মানি ক্রিয়েশন’ কমিয়ে দেয়। মানুষের হাতে থাকা টাকা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ব্যাংকে ফিরলে একদিকে যেমন ব্যাংকের তারল্য পরিস্থিতি ভালো হয়, অন্যদিকে ঋণ দেওয়ার মতো তহবিলের পরিমাণ বাড়ায় দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। এরপর থেকে প্রতি মাসেই এর পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই শেষে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ সর্বোচ্চ ২ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছায়। সেপ্টেম্বর থেকে ব্যাংকে ফিরতে শুরু করে বাইরে থাকা টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দেশের ব্যাংক খাতে গত জুন শেষে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ৪২ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা। ডিসেম্বর শেষে তা প্রায় ২ শতাংশ বা ৩৪ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা বেড়েছে। ডিসেম্বর শেষে ১৭ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকার আমানতের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৭ লাখ ২ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে, আমানতের প্রায় ৯৬ শতাংশই ঋণ হিসেবে বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো।
এদিকে, ব্যাংক খাতের আস্থা ফেরায় ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ১৫ দিনে ১৩১ কোটি ২২ লাখ ৩০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। দেশিয় মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে) যার পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার ৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
এর আগে, নতুন বছরের প্রথম মাসের (জানুয়ারি) পুরো সময়ে ২১৯ কোটি (২.১৯ বিলিয়ন ডলার) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। গত ডিসেম্বর মাসে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার বা ২৬৩ কোটি ৯০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। অর্থবছরের হিসেবে গত আগস্ট থেকে টানা ৬ মাস দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা।