উচ্চতর লক্ষ্য নির্ধারণে ব্যবস্থা কার্যকর হলেও বাস্তবে অগ্রগতি নেই
বিশ্ব সঠিক পথে নেই, পাঁচ বছর পরপর উচ্চতর লক্ষ্য নির্ধারণের ব্যবস্থা কার্যকর হলেও বাস্তবে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
ঢাকায় দি ওয়েস্টিন হোটেলে অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক দূত ক্রিস্টিন টিলির সঙ্গে বৈঠক শেষে এমন মন্তব্য করেন তিনি। এর আগে উপদেষ্টা ঢাকায় দি ওয়েস্টিনে ‘বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া: জলবায়ু নীতি ও সবুজ জ্বালানি রূপান্তর’ শীর্ষক সংলাপে অংশ নেন।
আলোচনায় জলবায়ু অর্থায়ন ও বৈশ্বিক সহযোগিতার বিভিন্ন দিক উঠে আসে। বৈঠকে স্বচ্ছ জলবায়ু অর্থায়নের আহ্বান জানিয়ে তহবিল ঝুঁকি ও প্রবেশাধিকার বাধার বিষয়ে সতর্ক করেছেন পরিবেশ উপদেষ্টা।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জলবায়ু অর্থায়নের সংজ্ঞা স্পষ্ট হওয়া দরকার। তিনি উল্লেখ করেন, এটি এমনভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে যাতে বিভিন্ন ধরনের সহায়তাও এর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, যা সঠিক নয়।
তিনি বলেন, যেসব দেশ অতীতে বেশি কার্বন নিঃসরণ করেছে, তাদের বড় দায়িত্ব রয়েছে। তবে কিছু উন্নয়নশীল দেশও এখন বড় দূষক। তাদেরও অবদান রাখা উচিত। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, এমন কোনো অবস্থান নেওয়া যাবে না, যা গুরুত্বপূর্ণ জলবায়ু তহবিলের ঝুঁকি বাড়াবে।
বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে তিনি বলেন, জলবায়ু অর্থায়নে আরও দেশকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি বাংলাদেশ সমর্থন করে। তবে তিনি মনে করেন, উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্দেশ্য এক নয়। কেউ কেউ ভোগবাদী জীবনযাত্রা টিকিয়ে রাখতে চায়, আর কেউ দারিদ্র্য দূরীকরণে কাজ করছে। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসা অনেক দেশের জন্য কঠিন হতে পারে।
প্যারিস চুক্তির কাঠামোকে রিজওয়ানা হাসান ইতিবাচক হিসেবে দেখেন। পাঁচ বছর পর পর উচ্চতর লক্ষ্য নির্ধারণের ব্যবস্থা কার্যকর হলেও বাস্তবে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হচ্ছে না। জীবাশ্ম জ্বালানি ও প্লাস্টিক বিষয়ক আলোচনায় বাধার বিষয়টিও তিনি উল্লেখ করেন।
অস্ট্রেলিয়ার ২০২৬ সালে COP31 আয়োজনের প্রস্তাব নিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, কঠোর ভিসানীতি থাকলে দক্ষিণের দেশগুলোর অংশগ্রহণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আগের কয়েকটি COP-এ এমন সমস্যার উদাহরণ দেখা গেছে।
ক্রিস্টিন টিলি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অস্ট্রেলিয়া সহযোগিতা বাড়াতে চায়। তিনি স্বীকার করেন, অভিযোজন প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ নেতৃত্ব দিচ্ছে, তবে আন্তর্জাতিক আলোচনায় দেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী হওয়া উচিত। জলবায়ু অর্থায়নের ক্ষেত্রে প্রকল্প গ্রহণের চেয়ে কাঠামোগত পরিবর্তনে জোড় দেওয়া জরুরি।
দুই পক্ষই দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন। তারা বলেন, জাতিসংঘের কাঠামো ধরে রাখা জরুরি হলেও বিকল্প পথ নিয়েও ভাবতে হবে।