আমানতকারীদের সহায়তা দিয়ে ব্যাংকিং খাতে প্রাণ ফেরানো ছিল বড় উদ্যোগ
ব্যাংকগুলোতে প্রাণ ফেরানোর বাজারে মুদ্রা প্রবাহ ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোও ছিল অন্তর্বর্তী সরকারের একটা বড় উদ্যোগ।
বাসস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেছেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা দেখলাম, দেশের অর্থনীতির সব সূচকেই খুব খারাপ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তখন পরিস্থিতি এমন ছিল যে, ব্যাংকিং সেক্টরের লোকজনের চেক অনার করার ক্যাপাসিটি ছিল না। চেক ডিজঅনার হতো। চেক জমা দিলে, তা ফেরত আসতো। কারণ আগের ম্যানেজমেন্ট টাকা পয়সা নামে-বেনামে উঠিয়ে নিয়ে তছরুপ করে চলে গেছে।”
“এর ফলে মানুষের মাঝে ব্যাংক সম্পর্কে একটি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছিল। আমানতকারীরা ভাবতে শুরু করছিল যে, ব্যাংকে টাকা-পয়সা রাখলে আর পাওয়া যাবে না। আমরা এই অবস্থা দূর করতে আমানতকারীদের সাপোর্ট দেওয়ার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ২২ হাজার কোটি টাকা দিয়েছি।”
তিনি বলেন, “এ ছাড়া ব্যাংকগুলোকে অন্যান্য নীতি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এসবের মূল কারণ হচ্ছে, আমানতকারীদের চেক যেন ফেরত না যায়। তারা যেন টাকা পায়, আমরা সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। যাতে ব্যাংক ও আর্থিক খাতে আমানতকারীদের আস্থা ফিরে আসে। আর ব্যাংকাররা তারল্য সংকট কাটিয়ে কিছু কিছু সাপোর্ট লোন দিতে পারে। সম্প্রতি আমানতকারীরা ব্যাংকে ফিরে আসতে শুরু করেছেন। তারা টাকা জমা করা শুরু করেছেন।”
“এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে রিজার্ভ বাড়াতে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আমরা হুন্ডিকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছি। ফলে যারা বাইরে থেকে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন, তারা বুঝতে ও দেখতে পাচ্ছেন যে, মাইক্রো ইকোনমিক অবস্থা স্থিতিশীল। এ ছাড়া বাড়তি কিছু প্রণোদনা পাচ্ছেন। তাই আমাদের রেমিট্যান্সে প্রবাহটা ভালো।”
রপ্তানি আয় বাড়ার কথা জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্প (আরএমজি) খাতে রপ্তানি আয় বাড়ছে। পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমেছে। ফলে আমাদের রিজার্ভ পরিস্থিততি ভালো। এসব উদ্যোগ তাদেরকে (প্রবাসী কর্মী) বৈধপথে রেমিটেন্স পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করেছে। এছাড়া মানিলন্ডারিংয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এটিও তাদেরকে হুন্ডিতে টাকা পাঠানো নিরুৎসাহিত করেছে।”
“অন্যদিকে ক্যাপিটাল মেশিনারি আমদানি কমেছে, তবে অন্যান্য মেশিনারি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি হচ্ছে। এই আমদানিতে যে খরচ হচ্ছে, তা বিরাট কিছু না। সেটা ম্যানেজেবল। এজন্য রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া মানিলন্ডারিংয়ের সাথে যারা জড়িত আছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এস আলম, বসুন্ধরা, সামিট পাওয়ার ও সালমান এফ রহমানসহ বড়বড় ১১/১২টি কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। তবে এটি শেষ করতে সময় লাগবে।”