নিলয়-হিমি কী প্রেম করছেন?
তরুণ প্রজন্মের অন্যতম মডেল ও অভিনেত্রী জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। বর্তমান সময়ের একজন ব্যস্ততম অভিনেত্রী। সারা বছর একক ও ধারাবাহিক নাটকে তিনি সমানতালে অভিনয় করে যাচ্ছেন। ছোটবেলায় নাচ, গান, আবৃত্তি শিখেছেন হিমি। কচিকাঁচা ও ছায়ানটের শিক্ষার্থী হওয়ায় বিটিভির শিশুতোষ অনেক অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন তখন থেকেই। টেলিভিশন নাটকে তার ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। বছর জুড়েই শুটিংয়ে ব্যস্ত থাকেন এই অভিনেত্রী। সম্প্রতি পাতায়া থেকে ছয়টি নাটকের শুটিং করে দেশে ফিরেছেন তিনি।
প্রথমবারের মতো পাতায়া শুটিং করেছেন হিমি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘থাইল্যান্ড আরো যাওয়া হলেও পাতায়া এবারই প্রথম শুটিংয়ের জন্য গিয়েছি। সেখানে ছয়টি নাটকে অভিনয় করেছি। তার মধ্যে পাঁচটি নিলয় আলমগীর ও একটি তৌসিফ মাহবুব ভাইয়ের সঙ্গে। নাটকগুলো পরিচালনা করেছেন মাবরুর রশীদ বান্নাহ, হাসিব হোসেন রাখি ও সহিদ উন নবী। প্রথমবার বান্নাহ ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করেছি। তার মধ্যে ‘গেস্ট ইন ব্যাংকক’, ‘হট্টোগোল’ ও ‘মিসেস ডিস্টার্ব অ্যাগেইন’ তিনটি নাটকের নাম চূড়ান্ত। ছয়টি কাজই ভিন্ন ঘরানার। প্রেম, কমেডি ও সিরিয়াস গল্পে নির্মিত হয়েছে।’
নাটকগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে দেখা যাবে জানিয়ে হিমি বলেন, ‘একটির সঙ্গে অন্যটি মিলবে না। চরিত্র ও গল্পে অনেক ভিন্নতা আছে। আগে দু-চার জন নিয়ে বিদেশে নাটক নির্মাণ হলেও এখন শিল্পী সংখ্যা বেড়েছে। আমরা গল্পের প্রয়োজনে ছাড় দেইনি। কয়েকজন শিল্পী আগে থেকেই সেখানে শুটিং করছিল যার ফলে এটি আমাদের জন্য সুবিধা হয়েছে। নাটকগুলোতে শিল্পী সংকট কম মনে হবে। যতটা ভিন্নতা রাখা যায় তেমনই ছিল। বৈচিত্র্যময় লোকেশন রয়েছে। যেটা দেশের নাটকে দেখা যায় না। গল্পেও ভিন্নতা আছে।’
বিদেশে শুটিং হলেও নাটকগুলোতে বিদেশ ফোকাস করা হয়নি বলে জানিয়েছেন হিমি। বললেন, ‘কয়েকটির নিয়মিত গল্প। প্রথম নাটক দর্শকপ্রিয়তার পর সিক্যুয়েল নির্মিত হয়েছে। দর্শক বিরক্ত হবে এমন কাজ করিনি। পরিচালক বেশি এবং দুটি ইউনিট ছিল। সবাই সবার জায়গা থেকে সেরাটা দিয়ে চেষ্টা করেছেন। সেই সঙ্গে দর্শক চাহিদার কথা মাথায় ছিল। যেটা সবসময়ই থাকে। মা সঙ্গে থাকায় কস্টিউম নিয়ে অসুবিধা হয়নি। কিছু দরকার হলে মা দ্রুত নিয়ে এসেছে। তবে শুরুর দিকে যখন বিদেশে শুটিং করতাম সেসময় কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল। তবে এখন আর অসুবিধা হয় না। কাজ শেষ করে ঘুরেফিরে শপিং করে ফিরেছি।’
বিদেশে শুটিং করলে বাড়তি সুবিধা কি জানতে চাইলে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘সে অর্থে বাড়তি সুবিধা হয় না। ঘোরাফেরা করা যায় (হা.হা..)। লোকেশনের ভিন্নতা থাকে। নিজেদের মেকআপ করতে হয়। সবাই এক জায়গায় থাকার কারণে শুটিং যথা সময় শুরু করা যায়। সে ক্ষেত্রে খরচ কিছুটা কমে। অনেকগুলো প্রডাকশন একসঙ্গে মুভ করলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। কখনো বেশিও হয়। প্রযোজক আর্থিকভাবে লাভবান না হলে নিয়মিত বিদেশে শুটিং হত না। তবে বিদেশে শুটিং হলে শিল্পীদের জন্য অনেক কষ্ট হয়। মেকআপ থেকে শুরু করে অনেক কিছুই নিজেদের করতে হয়। তবে একটি ভালো কাজ দর্শকদের উপহার দেয়ার জন্য সেই কষ্ট করতে চাই। দর্শক ভিন্নতা চায়। আমরা নিজেদের জায়গা থেকে ছাড় দেয়নি। সেরাটা দিয়ে কাজ করি।’
বিদেশে নির্মিত নাটক দর্শকপ্রিয় হয় না, তবু কেন বিদেশ? উত্তরে হিমি বলেন, ‘তা জানি না। তবে এ কথা আমি নিজেও শুনেছি। প্রথম যখন সিঙ্গাপুরে আটটি নাটকের শুটিং করেছিলাম তার মধ্যে বেশ কয়েকটি নাটক বেশ সাড়া ফেলেছিল। ভিউয়ের দিক দিয়েও এগিয়ে ছিল। জানামতে, প্রযোজক লাভবান হয়েছিল। অন্য সহ-শিল্পীদেরও কাজ হিট হতে দেখেছি। ঠিকমতো যদি কাজ করা যায় তাহলে সেটি দর্শক গ্রহণ করবেই। সে ক্ষেত্রে শিল্পীদের অনেক বেশি কষ্ট করতে হয়। এবার এমনো হয়েছে নবী ভাইয়ের জন্য রাজার একটি ড্রেস লাগবে কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না। সেটার জন্য সবাই দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেছি। কস্টিউম কিনে আনার পর শুটিং করেছি। গল্পের প্রয়োজনে আমরা কেউ-ই ছাড় দেইনি। তাছাড়া প্রযোজক লাভবান না হলে কখনোই লোকসান করে লগ্নি করবে না। আমার পূর্বের কাজগুলো অনেক ভালো গিয়েছে। অনেকগুলো কাজ করলে সবগুলো যে ভালো যাবে সেটা তো নয়। দেশে করলেও তো অনেক সময় অনেক কাজ সেভাবে দর্শক পছন্দ করে না। তবে প্রচলিত রয়েছে একেবারে চলে না, মানুষ দেখে না; এটা ভুল কথা। কোনো কিছুর ঘাটতি না থাকলে যে কোনো জায়গার নাটকই দর্শকদের ভালো লাগবে।’
বেশির ভাগ নাটকেই হিমি-নিলয় আলমগীর জুটি দেখা যায়। তাদের অনেক কাজই দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। এখনো তারা জুটি হয়ে নিয়মিত কাজ করছেন। একের পর এক কাজ করায় নিলয়-হিমি প্রেম করছেন, এমন খবরও চাউর হয়েছে। এ কথা শুনে হাসলেন হিমি। বললেন, ‘চরিত্রগুলো ভালো হলেই তখন মানুষ এমন চিন্তা করে। অভিনয় থেকে যখন বাস্তবতা আলাদা করতে না পারবে তখন মনে করি অভিনয়টা ভালো মতো করতে পেরেছি। এটা ক্যারিয়ারের অংশ। নরমাল বিষয় এবং নিছক গুঞ্জন। যার কোনো ভিত্তি নেই।’
দ্বিতীয়বার স্বাধীন দেশ। নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা কী? হিমি বলেন, ‘অনেক বেশি প্রত্যাশা। সুন্দর একটি দেশ চাই। অন্যায় কমে আসবে। যখন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দেশ উত্তাল ছিল তখন দেশে ছিলাম না। আগে থেকেই শুটিংয়ের জন্য বিদেশে অবস্থান করছিলাম। সেখানে থাকাকালীন দেখেছি রং-তুলিতে বদলে গেছে শহর। এয়ারপোর্ট নেমে বাসায় ফিরতে ফিরতে সরাসরি দেখলাম। রং-তুলির এই সৌন্দর্য দেখে ভীষণ ভালো লেগেছে। কথা বলার স্বাধীনতা এসেছে। সবকিছু সুন্দর ভাবে সাজানোর চেষ্টা, বিষয়গুলো ভালো লেগেছে। আমাদের সমাজে মানুষের জন্য কথা বলার লোকের অভাব নেই। কিন্তু পশু প্রাণী নিয়ে বলার লোক খুবই কম। আমি যেহেতু পশু প্রাণী ভালোবাসি আমার প্রত্যাশা থাকবে এটা নিয়ে যাতে আইন হয়। যাতে কেউ প্রাণী মারলে আইনের আওতায় আনা যায়। আইন না থাকলে সেটার প্রয়োগ নেই। এটার জন্য শাস্তিস্বরূপ আইন হয় এটা চাওয়া থাকবে।’
ছোট পর্দায় যারা কাজ করেন তাদের সবারই স্বপ্ন থাকে বড় পর্দার। হিমিও ব্যতিক্রম না। তিনিও চলচ্চিত্রে কাজ করতে আগ্রহী। তবে আপাতত ছোট পর্দাতেই নিজেকে ব্যস্ত রাখতে চান। এখন বড় পর্দা নিয়ে তার ভাবনা নেই। জানালেন, ‘সব শিল্পীদের মতো আমারও স্বপ্ন আছে চলচ্চিত্রে কাজ করার। যখন কোনো ইংলিশ সিনেমা দেখি তখন সেখানে নিজেকে চিন্তা করি। তখন মনে মনে বলি আমাকেও এভাবে যদি দেখা যেত। শিল্পীদের জায়গা থেকে খুব বেশি কিছু করার থাকে না। প্রয়োজক ও পরিচালক যদি না ভাবে তবে ভালো কাজ আসলে কী করে করব। নাটক নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। ভালোবেসে নাটকে কাজ করছি। সিনেমা নিয়ে সে রকম আকাঙ্ক্ষা এখনো হয়নি। তবে ভালো কাজ পেলে অবশ্যই করব। এখনকার সব চিন্তা ভাবনা নাটক ঘিরেই।’
হিমি জানালেন তার স্বপ্নের চরিত্রের কথা। তার ভাষায়, ‘সত্তর ও আশির দশকের কাজগুলো আমার খুব ভালো লাগে। কাজগুলো আমাকে খুব টানে। রবীন্দ্রনাথের গল্প পছন্দ। এরই মধ্যে এমন একটি কাজ করেছি। কিছুটা হলেও সেই আশা পূরণ হয়েছে। সামনে এরকম আরো কাজ পেলে করব। একটি গল্প আমি ভেবেছি। সেটা নিয়ে কাজ চলছে। হয়ত অচিরেই দেখা যাবে। নিজেই প্রযোজনা করার কথা ভাবছি। তবে নিয়মিত প্রযোজনা করব কিনা বাকি সব কথা জানাতে আরো একটু সময় নিতে হবে।’
বর্তমান নাটক নিয়ে অনেক কথা হয়। ইতিবাচকের পাশাপাশি রয়েছে নেতিবাচক সমালোচনাও। এ নিয়ে হিমির কাজে জানতে চাইলে বলেন, ‘সবার রুচি এক নয়। এক জিনিস সবাই পছন্দ করবেও না। এটি দর্শকদের উপর নির্ভর করে। আমি শিল্পী হিসেবে কাজটি করে স্বাচ্ছন্যবোধ করছি কিনা সেটা বিষয়। অনেকেই কমেডি পছন্দ করে আবার অনেকের বিরক্ত লাগে। আমাদের জীবনে অনেক বেশি দুঃখ কষ্ট আছে। তারা কমেডি গল্প পছন্দ করে। দিনশেষে তারা এটা উপভোগ করে। ভালোবাসার গল্পেও কাজ করেছি। আমি সব ধরনের গল্পে নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করছি। কমেডি গল্প অনেকভাবে উপস্থাপন করা যায়। প্রতিটি কাজের ভালো খারাপ দুটিই থাকবে। দর্শকদের সমালোচনা আমাকে সাহসী করেছে, ভুল-ত্রুটি শুধরে নিয়ে নতুন উদ্যমে কাজ করে যাওয়ার। দিনশেষে দর্শকের জন্য কাজ করি।’
সংগীতশিল্পী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে শৈশব থেকে গানচর্চা করলেও হিমি হয়েছেন অভিনেত্রী। গান-ভিডিও ছাড়া তাকে দেখা গেছে বিজ্ঞাপন চিত্রে। অভিনয়ের পাশাপাশি করেছেন উপস্থাপনাও। এখন অভিনয় ছাড়া কিছুই ভাবতে পারছেন না তিনি। আমৃত্যু অভিনয় চালিয়ে যেতে চান। নিজেকে আরো দক্ষ অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে নিরলশ পরিশ্রম করছেন হাস্যোজ্জল অভিনেত্রী জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি।