যখন শুরু করব তখন জানবেন
২০২৩ সালের ঈদুল ফিতরে ‘লাভ সেমিস্টার’ নাটক দিয়ে শোবিজে যাত্রা শুরু নাজনীন নীহার। এরপর খুব অল্প সময়েই দর্শক মনে জায়গা করে নিয়েছেন এই অভিনেত্রী। এ জন্য নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে করেন তিনি। সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখা নীহা দ্য মিরর এশিয়ার মুখোমুখি হয়ে শোবিজে নিজের পথচলা, বর্তমান ব্যস্ততা ও স্বপ্নসহ নানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন মন খুলে। যার চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: এই মুহূর্তের ব্যস্ততা প্রসঙ্গেই বলুন প্রথমে। হাতে কি কাজ রয়েছে?
নাজনীন নীহা: সম্প্রতি আরিয়ান ভাইয়ার (মিজানুর রহমান আরিয়ান) একটা প্রোজেক্ট শেষ করেছি। সামনে আরও প্ল্যান আছে। টিভিসি-ওভিসি তো করছিই। সামনে কয়েকটা কাজের মধ্যে শৌখিন ভাইয়ার (জাকারিয়া শৌখিন) একটা কাজের প্ল্যান আছে। তবে আপাতত কোনো প্রোজেক্টেরই বিস্তারিত বলার অনুমিত নেই। প্রোডাকশন থেকে তা দেয়নি। আরিয়ান ভাইয়ার কাজ নিয়ে এতটুকু শুধু বলতে পারব, নাটকটার নাম ‘যুগল’।
প্রশ্ন: অল্প সময়ের জার্নি হলেও এরই মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছেন আপনি। এই যে জার্নি, এ নিয়ে কি বলবেন?
নাজনীন নীহা: আমি বলবো, আমি আসলে অনেক লাকি। সবার অনেক ভালোবাসা এবং দোয়া ছিল; যার জন্য আমাকে হয়তো সবাই অনেক পছন্দ করে বা আমাকে মানুষ চেনে।
প্রশ্ন: নাটকে যখন পা রাখলেন, ভেবেছিলেন মাত্র এক বছরের মধ্যে এ রকম পর্যায়ে আসবেন?
নাজনীন নীহা: সেটা আমি ভাবিনি। কারণ আমার যখন শুরু, আমি কিছুই জানতাম না তখন। এখনও যে খুব জানি তা না। তখন তো আমি আরও ‘র’ ছিলাম। তবে কেন জানি আমার ডিরেক্টর, কো-আর্টিস্ট, আমার প্রতি সবার একটা বিশ্বাস ছিল। আমার প্রথম ডিরেক্টরের কথা তো সবাই জানে (প্রবীর রায় চৌধুরী)। সে খুবই ভালো একজন ডিরেক্টর। কো-আর্টিস্ট জোভান ভাইয়া ছিলেন। তার ব্যাপারে বলার কিছু নেই। আমি জাস্ট নতুন ছিলাম। আমার ভয় ছিল যে আমি পারব কি না। আমাকে ভরসা করে একটা কাজের লিড করতে দিচ্ছে, তাদের প্রত্যাশা আমি পূরণ করতে পারব কি না। তবে আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, যে দর্শক আমাকে পছন্দ করেছে। আমি লাকি। এখন চাই এই জিনিসটা ধরে রাখতে। আরও বেশি ভালোবাসা পেতে চাই। সামনে আরও ভালো কাজ করতে চাই। যা যা ত্রুটি আছে আমার, সেগুলো ঠিক করে নিতে চাই।
প্রশ্ন: শোবিজ জগৎটা কতটা চ্যালেঞ্জিং মনে হয়?
নাজনীন নীহা: চ্যালেঞ্জিং তো মনে হয়ই। কারণ ভালোর তো আসলে শেষ নেই। আমার কাছে চ্যালেঞ্জ আরও বেশি। কারণ আমি মনে করি এখনও আমি কিছুই শিখে উঠতে পারিনি। আমার কেবল মনে হয় আমার ডিরেক্টর ভালো, আমার প্রোডাকশন ভালো, আমার লাক ভালো, আমাকে দর্শক পছন্দ করে ফেলেছে, তার জন্য আমি এখানে। আমার মনে হয় আমার মধ্যে অনেক ত্রুটি আছে, অনেক কিছু এখনও ঠিক করার বাকি আছে। সেগুলো ঠিক করার চেষ্টায় আছি। আর এখন তো আমার ভার্সিটিতে ক্লাস শুরু হয়েছে। আমি এবার ভার্সিটিতে অ্যাডমিশন নিলাম। এখন স্টাডির পাশাপাশি কাজ করে ওঠা, দুই দিকটাই করা একটু কঠিন হচ্ছে।
প্রশ্ন: নাটকের প্রতি আপনার আগ্রহ তৈরি হলো কীভাবে?
নাজনীন নীহা: এই জগতে আসলে আমার শখ থেকে আসা। শখ থেকে আমি এক-দুইটা শুটের জন্য এসেছিলাম। এরপর একটা-দুইটা কাজ করতে করতে কাজের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়ে যায়। এখন এটা আমার পেশা।
প্রশ্ন: ছোট বেলায় কারও মতো হতে যাওয়া বা এমন কোনো স্বপ্ন ছিল না?
নাজনীন নীহা: না এরকম স্বপ্ন আসলে ছিল না। আমার ছোটবেলায় ইচ্ছে ছিল আমি বিজনেস করব। অভিনয়ের প্ল্যান আসলে ছিল না। এটা শখ থেকে আসা। আমি টিভিসি, ওভিসি, ফটোশুট করি আগে থেকেই। গত বছর থেকে নাটকে কাজ শুরু করি। এসে যখন দেখলাম কাজ ভালোভাবে করতে পারছি, আর আমাকে গাইড করার জন্য আমার নিজের ফুপাতো ভাই মিজবাহ উদ্দিন আছে, সেখান থেকে কাজ করতে করতে কাজের প্রতি ভালোবাসা এসে যায়। এখন এটা আমার পেশা ও নেশা।
প্রশ্ন: পরিবার থেকে সহযোগিতা কেমন পান?
নাজনীন নীহা: আলহামদুলিল্লাহ, অনেক। আমার পরিবারের আব্বু-আম্মু অনেক সাপোর্টিং। আমরা দুই বোন, এক ভাই। আমি সবার বড়। ওরা (ভাই-বোন) তো খুব ছোট। এরপরও ওরা খুব সাপোর্টিভ। আমার কাজ আসলে দেখে। আমার ছোট বোন তো একেবারেই ছোট। ৫ বছরে পড়ল। ও টিভিতে দেখলেই বলে, আমি তোমাকে দেখেছি (হাসি)।
প্রশ্ন: স্বপ্নের কথা বলুন। ক্যারিয়ার নিয়ে কী স্বপ্ন দেখেন?
নাজনীন নীহা: এখন আমি চাই দর্শকের ভালোবাসা আরও বেশি পেতে। চাই আমার অভিনয়ের জায়গায় আরও বেশি ভালো করতে। অবশ্যই এখানে একটা ভালো পর্যায়ে যেতে চাই। তবে ভবিষ্যতে কাজের পাশাপাশি বিজনেস করতে চাই। তবে সেটা এখন না, আরও পারে। সব বুঝে ওঠার পর।
প্রশ্ন: কী ধরনের ব্যবসা?
নাজনীন নীহা: এটা যখন শুরু করব, তখন জানবেন। এখন বলে তো লাভ নেই। তবে ব্যবসার প্রতি এখনও আমার আগ্রহ আছে এবং এটা আমি করব।
প্রশ্ন: নাটকে গল্প বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোন দিকটি প্রাধান্য দেন আপনি?
নাজনীন নীহা: এখন আপাতত যে কাজ আমার জন্য সহজ হবে, সেটা ভেবে করছি। কারণ এখনও আমি সবকিছু পারি এমনটা না। আমার তো এখনও অনেক ত্রুটি আছে। যে চরিত্রটা আমি ক্যারি করতে পারব, সেগুলো আমি বাছাই করে নিচ্ছি। যেন আমার জন্য সহজ হয়। এখনই বেশি টাফ চরিত্র নিচ্ছি না। যদি না পারি কোনো কারণে। এ জন্য এখন আমি রোমান্টিক স্টোরিগুলো পিক করছি। আর সব বুঝে ওঠে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র আমি করব।
প্রশ্ন: কিন্তু রোমান্টিক গল্পের নায়িকা হিসেবে তো প্রতিষ্ঠা পেয়ে যাচ্ছেন। পরে এর নেগেটিভ প্রভাবও তো পরতে পারে…
নাজনীন নীহা: এটা ঠিক জানি না। তবে আমার ইচ্ছা, আমি সব ধরনের চরিত্রে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব।
প্রশ্ন: সিনেমায় কাজ করার স্বপ্ন তো প্রায় সব অভিনেতা-অভিনেত্রীরই থাকে। আপনার ভাবনা কি?
নাজনীন নীহা: সিনেমা নিয়ে আমার এখন কোনো পরিকল্পনা নেই। যদি কখনো হয়, তাহলে আমার থেকে জানতে পারবেন। ভবিষ্যতের কথা তো জানি না। তবে আপাতত কোনো প্ল্যান নেই।
প্রশ্ন: ভবিষ্যতে কি তাহলে দেখা যাবে?
নাজনীন নীহা: সেটা আমি আগে তৈরি হয়ে নিই। এই জায়গাটায় (নাটকে) আগে স্টাবলিস্ট হয়ে নিই। অভিনয়টা ঠিক হয়ে নিক। আসলে সিনেমার জন্য আমার রেডি হতে এখনও অনেক সময় লাগবে।