নাটক প্রদর্শনী বন্ধ করা ঠিক নয়, এটি কষ্টের : তারিক আনাম
বিক্ষোভকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে ‘নিত্যপুরাণ’ নাটকের শো চলার মাঝপথেই সেটি থামিয়ে দিতে বাধ্য হন মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ।
শনিবার (২ নভেম্বর) রাতে এই ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা সাতটায় শুরু হওয়া নাটকটি বন্ধ করে দিয়ে দর্শকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন খোদ জামিল আহমেদ নিজেই।
এ ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে নানা আলোচনার সৃষ্টি হয়। যেই আলোচনায় এবার যোগ দিলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা তারিক আনাম খান। মাঝপথেই একটি নাটক বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি ভালোভাবে নেননি তিনি।
এই অভিনেতা বলেন, ‘একটি দলের কেউ যদি কোনো দোষ করে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। তাই বলে নাটক প্রদর্শনী বন্ধ করা ঠিক নয়; এটি কষ্টের। দলীয় কিংবা আইগতভাবে হোক, দোষীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। সামগ্রিকভাবে দলকে নিষিদ্ধ করা সঠিক হবে না। দল তো কোনো দোষ করেনি। নাট্যদলের অনেক লোক তো আন্দোলনের পক্ষেও কাজ করেছেন।’
পাশাপাশি নাট্যদলের দায়িত্বশীলদের একটু সংযত আচরণ করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি। তারিক আনাম খান বলেন, ‘শিল্পকলার মহাপরিচালক জামিল আহমেদ একজন নীতিবান মানুষ। তিনি চেষ্টা করেছেন যাতে নাটকের শোটি হয়। শেষ পর্যন্ত তিনি লড়াই করেছিলেন। দর্শকদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন। শিল্পকলার মতো প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসেবে এর থেকে বেশি করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। নাট্যদলের দায়িত্বশীলদের একটু সংযত আচরণ করা উচিত।’
অন্যদিকে, কী কারণে নাটকের প্রদর্শনী বন্ধ করতে হয়েছিল, সে বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ২২ জায়গার শিল্পকলা একাডেমিতে হামলা হয়েছে। সেসব আমার মাথায় ছিল। ঢাকার শিল্পকলা একাডেমরি ভেতরে দর্শক ছিল। উত্তেজিত কেউ গিয়ে যদি দর্শকদের আক্রমণ করে বসে সে শঙ্কা ছিল। দর্শকের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা প্রদর্শনী বন্ধ করি। আমি ভেতরে গিয়ে দর্শকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছি।’
ঘটনা প্রসঙ্গে সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে শিল্পকলার আয়োজনে যাত্রা উৎসব চলছে। আমি এবং নাট্যকলা বিভাগের পরিচালক ফয়েজ জহির সেখানে ছিলাম। নাট্যশালার সামনে বিক্ষোভ হচ্ছে শুনে আমি সেখানে যাই। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলি। তারা বলেন, এহসানুল আজিজ বাবু স্বৈরাচারের দোসর। তার নাট্যদলের প্রদর্শনী করতে দেবে না। আমি তাদের বুঝিয়েছি, দেশ নাটকের জনা বিশেক সদস্যও জুলাই গণঅভ্যুথানে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধও হয়েছেন।’
জামিল আহমেদ আরও বলেন, ‘গত এক মাসে এখানে এমন অনেক নাটকের দল নাটক করেছে, যাদের নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। আমি এবং আমার সহকর্মীরা বলেছি, তাদের নাটক করতে দিতে হবে। দর্শক তাদের নাটক দেখে বিবেচনা করবে, তাদের নাটক দর্শক দেখবে কি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা কিন্তু নাটক করেছে। কোনো সমস্যা হয়নি। দেশ নাটকের “নিত্যপুরাণ” নাটক নিয়েও আপত্তি ছিল না। উত্তেজিত জনতার আপত্তি কেবল একজন ব্যক্তিকে নিয়ে। পরে তারা দেশ নাটকের প্রদর্শনীও বন্ধের দাবি তোলেন।’