ধর্মের দোহাই দিয়ে কী প্রমাণ করতে চলেছেন তারা, প্রশ্ন তুললেন পরীমণি

ধর্মের দোহাই দিয়ে কী প্রমাণ করতে চলেছেন তারা, প্রশ্ন তুললেন পরীমণি

সামাজিক মাধ্যমে ফলাও করে পরীমণি জানিয়েছিলেন আগামী ২৫ জানুয়ারি তার দেখা হচ্ছে টাঙ্গাইলবাসীর সঙ্গে। এদিন বিকেল ৩টায় এলেঙ্গার টিন মার্কেটে অথেনটিক রিটেইল কসমেটিকস শপ ‘হারল্যান স্টোর’-এর শোরুমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা ছিল তার। তবে স্থানীয়দের প্রবল প্রতিরোধের মুখে স্থগিত করা হয়েছে অনুষ্ঠানটি। 

সংবাদমাধ্যমকে খবরটির সত্যতা নিশ্চিত করেন শোরুমটির মালিক মীর মাসুদ রানা। তিনি বলেন, ‘উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরীমণির থাকার কথা ছিল। এখানে কিছু ঝামেলা হয়েছিল। হেফাজতে ইসলাম আন্দোলন সৃষ্টি করেছিল। ওনারা অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছিলেন। পরীমণি আসলে নাকি সমস্যা হয়। বিভিন্ন মসজিদে আলোচনা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে হেফাজতে ইসলামের এক নেতা ফোন করেছিলেন। বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে থানা পুলিশ আমাদের আপাতত অনুষ্ঠানটি করতে নিষেধ করেছে। পরে কোম্পানির সঙ্গে কথা বলে তাদের (ধর্মপ্রাণ মুসল্লি) প্রতি সম্মান জানিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি স্থগিত করেছি। পরে ফেসবুকে দেখেছি তাদের কর্মসূচিটিও বাতিল করেছে।’

এবার বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন পরীমণি। আজ শনিবার রাতে নিজের ফেসবুকে অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘এত চুপ করে থাকা যায় না কি! পরাধীন মনে হচ্ছে। শিল্পীদের এতো বাধা কেন আসবে? অনিরাপদ বোধ হচ্ছে! এমন স্বাধীন দেশে নিরাপদ নই কেন আমরা!’

এর আগে অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হয়নি, কণ্ঠশিল্পী সাবরিনা পড়শীর অনুষ্ঠানে ঝামেলা পাকানো হয়েছে। বিষয়গুলো টেনে পরী লেখেন, ‘মেহজাবীন ও পড়শী এর আগে এমন হেনস্থার শিকার হয়েছেন! ধর্মের দোহাই দিয়ে কি প্রমাণ করতে চলেছেন তারা? কী বলার আছে আর… এ দেশে সিনেমা/বিনোদন সব বন্ধ করে দেওয়া হোক তাহলে!’

সবশেষে অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘এই দায়ভার কিন্তু আমাদের সবার নিতে হবে।’

এর আগে স্থানীয়রা জানান, ১৫ দিন ধরে পরীমণির আসার খবর প্রচার করা হচ্ছিল মাইকে। তবে বিষয়টি ভালোভাবে নেননি হেফাজতে ইসলামসহ স্থানীয় মুসল্লিরা। গত ২-৩ ধরে অভিনেত্রীকে ঠেকাতে বিভিন্ন কর্মসূচির পরিকল্পনা করছিলেন। আন্দোলনসহ নেওয়া হয়েছিল অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা।

এ নিয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতাসহ কয়েকজন মুসল্লি শোরুম কর্তৃপক্ষ ও থানা পুলিশের সঙ্গেও কথা বলেন। বিষয়টি নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। এক পর্যায়ে বিভিন্ন চাপের মুখে অনুষ্ঠান স্থগিত করতে বাধ্য হয় শোরুম কর্তৃপক্ষ।

বিষয়টি নিয়ে গতকাল (শুক্রবার) হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ টাঙ্গাইল জেলা শাখার যুববিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ কালিহাতি উপজেলার সভাপতি মুফতি সুলাইমান হাবিব তার ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। সেখানে লেখেন, ‘এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে হারলেন শোরুম উদ্বোধন করার জন্য একজন চিত্রশিল্পী (পরীমণি) আশার কথা ছিল। এ বিষয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে ব্যাপক নেতিবাচক আলোচনা হওয়ায় স্থানীয় ইমাম, আলেম-ওলামা ও ধর্মপ্রাণ কিছু ভাই গত রাতে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি অবহিত করেন। যার প্রেক্ষিতে আজ সকালে স্থানীয় ওলামায়ে কেরামসহ আমি শোরুমের মালিক মাসউদ (মাসুদ) ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলি। মাসউদ ভাই সবার সম্মান রক্ষায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে আগামীকালের (শনিবার) প্রোগ্রাম স্থগিত করেন মর্মে আমাকে নিশ্চিত করেছেন। আমরা তার এই আন্তরিকতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এই বিষয় নিয়ে আর কোনও আলোচনা-সমালোচনা বা মজলিস কায়েম (কর্মসূচি) না করার জন্য সকল ইমাম, আলেম-ওলামা ও মুসল্লি ভাইদের প্রতি অনুরোধ করছি।’