এবার আর কোনও প্লট টুইস্ট নয়। চূড়ান্ত ভাবে জীবনাবসান ঘটলো ভারতের সনি টিভি ধারাবাহিক সিআইডির প্রধান চরিত্র এসিপি প্রদ্যুমানের। শিবাজী সাটম অভিনীত সর্বদা ভ্রু কুঁচকে থাকা চরিত্রটির জনপ্রিয়তা বিগত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, দৃঢ় কণ্ঠস্বর এবং হৃদয়ে গেঁথে থাকা কালজয়ী সংলাপগুলো তাকে করে তুলেছিলো গোটা সিরিজের মধ্যমণি। ছোট পর্দায় হিন্দি ভাষার গোয়েন্দা নাটক মানেই সিআইডি, আর সিআইডি মানেই প্রদ্যুমান। চলুন, কিংবদন্তিতূল্য চরিত্র এসিপি প্রদ্যুমানের প্রস্থানের ঘটনাটি নিয়ে আরও বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
এসিপি প্রদ্যুমানের অন্তিম পর্ব: দ্যা ইন্ড অফ দ্যা ওয়াচ
গত ৫ এপ্রিল শনিবার ‘দি এন্ড অফ দ্যা ওয়াচ’ শিরোনামে সম্প্রচারিত হয় সিআইডি সিজন ২-এর ৩১-তম পর্ব। সেখানে সিআইডি দল অ্যাকশনে নামে দীর্ঘদিনের ফেরারি আসামী বারবোজাকে (তিগমাংশু ধুলিয়া) ধরার জন্য। ঘটনাচক্রে ধূর্ত বারবোজা সিআইডি দলনেতাকে ফাঁদে ফেলতে সক্ষম হয়। এরই পরিণতিতে এক শক্তিশালী বিস্ফোরণের শিকার হন এসিপি। বিস্ফোরণে তার কোনও ক্ষতি হয়েছে কিনা তা সরাসরি পর্দায় দেখানো না হলেও দৃশ্যে বোঝানো হয়েছে যে তার মৃত্যু ঘটেছে। স্বভাবতই এতে প্লট টুইস্টে তার বেঁচে ফেরার সমূহ সম্ভাবনা দেখেছে ভক্তরা।
কিন্তু সম্প্রচারের পর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সনি টিভি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের মাধ্যমে প্রদ্যুমানের মৃত্যুকে আনুষ্ঠানিক ভাবে নিশ্চিত করে। এছাড়া পূর্বে অভিনেতা শিবাজি সাটম চরিত্রটি থেকে তার সরে দাড়ানোর অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন। একই সাথে চরিত্রটির ইতি টানা নিয়ে সনির ইতিবাচক অবস্থানের ব্যাপারে বেশ কিছুদিন ধরেই গুঞ্জন উঠেছিলো। এবার নিশ্চিত ভাবেই পরিসমাপ্তি ঘটলো দুই যুগ পুরনো কিংবদন্তির চরিত্রটির।
সিআইডি এবং গোয়েন্দা নাটকে প্রদ্যুমানের একাধিপত্য
অপরাধ, রহস্য, তদন্ত, গোয়েন্দা- এ সবকিছুর মিশেলে ধারাবাহিক সিআইডি’র যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। আকর্ষণীয় প্লট, নাটকীয়তা, এবং গোয়েন্দাগিরিতে ভরপুর বিপি সিং রচিত থ্রিলারটি খুব কম সময়ের মধ্যেই একটি স্বতন্ত্র দর্শক শ্রেণী তৈরি করেছিল।
প্রদ্যুমানের সহশিল্পীরা ছিলেন দয়া (দয়ানন্দ শেঠি), অভিজিত (আদিত্য শ্রিভাস্তভ), ফ্রেডি (দীনেশ ফাড়নিস), এবং ডক্টর আরপি স্যালুন্খে (নরেন্দ্র গুপ্ত)। দলের প্রতিটি সদস্যেরই ছিলো নিজ নিজ বিশেষত্ব, যা দারুণ মুগ্ধতা সৃষ্টি করেছিলো দর্শকদের মাঝে।
সিআইডির পুরোপুরি ফর্মে ছিলো ২০০২ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দশকটিতে। সাটমের বলিষ্ঠ নির্দেশনা ও উপস্থিত বুদ্ধি রহস্যজট ছাড়ানোর মুহুর্তগুলোকে প্রাণবন্ত করে রাখতো। তার অন্তর্ভেদী দৃষ্টি যেন যে কোনও অপরাধীর মস্তিষ্কে কি চলছে তা নিমেষেই দেখতে পেতো। হিন্দি ভাষার নাট্যজগতে গোয়েন্দা কল্পকাহিনীর কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো সিআইডি। এর প্রায় পুরো কৃতিত্বটাই দেয়া যেতে পারে প্রদ্যুমান চরিত্রটিকে। তাই অন্য কোনও নাটক বা এমনকি সিনেমাতেও শিবাজীকে দেখা গেলে মনে হতো- এখনি হয়ত শুরু হয়ে যাবে তদন্ত।
তার “দয়া, দারওয়াজা ছোড় দো”-এর মতো সংলাপগুলো এই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগেও ধরে রেখেছে সিআইডির জনপ্রিয়তাকে। স্পষ্ট সংকল্পের পাশাপাশি গভীর সহানুভূতির বৈচিত্র্যপূর্ণ সন্নিবেশ চরিত্রটিকে দিয়েছিলো গভীর মানবিকতা। এর ফলে গোটা ফ্র্যাঞ্চাইজিটি একটি নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলো।
তাই চরিত্রটির এমন অনাকাঙ্ক্ষিত প্রয়াণ যে কোনও অনুগত ভক্তের জন্যই কষ্টদায়ক। তারই প্রতিফলন ঘটেছে সনির সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের কমেন্টে। সেখানে সেই ভক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন- “এই আরআইপি (রেস্ট-ইন-পিস) কেবল এসিপি প্রদ্যুমানের নয়। এটি গোটা সিআইডির আরআইপি”।
চরিত্রের নেপথ্যের মানুষ
শিবাজি সাটম ভারতীয় নাট্যজগতের বহুল সমাদৃত এক অভিনেতা, যার ঝুলিতে রয়েছে কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা। ছোট পর্দার পাশাপাশি বড় পর্দায়ও ছিলো তার সমান বিচরণ। তবে সে সবগুলোকে ছাড়িয়ে এই এসিপি অফিসারের চরিত্রটিই লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয় কেড়েছিলো। এ প্রজন্মের ক্রাইম ঘরানার ভক্তরা তার আসল নাম না জানলেও অচিরেই তাকে স্বীকৃতি দেয় প্রদ্যুমান নামে।
এই চরিত্রের জন্য শিবাজি ২০০২ ও ২০০৩ সালে ভারতীয় টেলি অ্যাওয়ার্ডে এবং ২০১২ সালে গোল্ড অ্যাওয়ার্ডে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান।