বাংলাদেশ একটা নিপীড়ক সরকারের হাতে: আলোকচিত্রী শহিদুল আলম
ইউনিভার্সিটি অব দ্য আর্টস লন্ডনের বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের ইসরায়েলী কানেকশন থাকায় ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে ডক্টরেট ফিরিয়ে দিয়েছেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। শুধু ফিলিস্তিনে ইসরায়েলী নিপীড়ন নয়, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষয়িষ্ণু গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়ানো মানুষের প্রতিও ক্ষমতাসীনদের নিপীড়ন ও নির্যাতন নিয়ে দ্য মিরর এশিয়ার সাথে কথা বলেছেন এই মানবাধিকারকর্মী। দ্য মিরর এশিয়ার ঢাকা অফিস সাক্ষাৎকারটি নিয়েছে
দ্য মিরর এশিয়া: সুনির্দিষ্ট কোন বিষয়গুলোর কারণে ইউনিভার্সিটি অব দ্য আর্টস লন্ডনের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রত্যাহার করলেন?
শহিদুল আলম: বেশ কয়েকটি বিষয় রয়েছে। প্রথমত, আমি যখন এই ডিগ্রি গ্রহণ করি; তখন ভিন্ন একজন ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন। পরে ওই বিশ্ববিদ্যালয় নতুন একজন ভাইস চ্যান্সেলরকে নিয়োগ দেয়। সেই ভাইস চ্যান্সেলরের ইসরাইলের প্রতি খুব পরিষ্কার সমর্থন ছিল। তিনি গণহত্যাকেও সমর্থন করেছেন। তার ক্ষেত্রে আমার একটা আপত্তি তো ছিলই। কিন্তু ছাত্র ছাত্রীরা যখন প্রতিবাদ করে, ছাত্র ছাত্রীদের প্রতিবাদের ওপর নিপীড়ক আচরণ করা এবং তাদেরকে হেনস্তা করাটা আমার কাছে আপত্তিজনক ছিল। আমি যখন ডিগ্রি গ্রহণ করি, তখন যিনি চ্যান্সেলর ছিলেন, তার একেবারেই ভিন্ন একটা মত ছিল। তিনি (আগের ভাইস চ্যান্সেলর) এই বিশ্ববিদ্যালয়কে একটা প্রতিবাদের জায়গা হিসেবে দেখতেন। এটা এখনও আছে। আর্ট অ্যান্ড কালচারের দিক থেকে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে এটা দ্বিতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সেগুলোও একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। সেটার সাথে যুক্ত থাকায় তখন আমার কোন আপত্তি ছিল না। কিন্তু এখন ইসরাইলী গণহত্যার সাথে তাল মিলিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বড় বিনিয়োগ ইসরাইলী কোম্পানিতে এবং তারা লাভ করে। ইসরাইলীরাও লাভ করে। তাদের অর্থ দিয়েই ফিলিস্তিনদের আক্রমণ করা হচ্ছে, যা আমার কাছে একদম গ্রহণযোগ্য না।
টিএমএ: একই ভাবে তো বাংলাদেশসহ সাউথ এশিয়ায় নিপীড়ন, নির্যাতন চলছে। এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশ ও এশিয়ায় যে সুশীল সমাজ আছে, তাদেরও এমন প্রতিবাদে যাওয়া উচিত কী না?
শহিদুল আলম: সুশীল সমাজ শব্দের একটা অর্থ আছে, তাদের সুশীল আচরণ করা। সেখানে ন্যায়ের পক্ষে থাকার কথা, নিপীড়কদের প্রতিবাদ করার কথা, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা। কিন্তু আজকে সুশীল সমাজ বাংলাদেশে তেমন ভূমিকা পালন করছে বলে আমি মনে করি না। অনেক ক্ষেত্রেই তারা দূরে সরে গেছে। এটা সত্য যে বাংলাদেশে বর্তমানে (আওয়ামী লীগ) একটা নিপীড়ন সরকার। এই পরিস্থিতির মধ্যে আমাদেরও একটা ঐতিহ্য রয়েছে; প্রতিবাদে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর। সেই জিনিসটা আজকে নেই। যাদেরকে সুশীল সমাজ বলা হচ্ছে, তারা তা করছে না। প্রকাশ্যে তারা সুবিধাবাদী হচ্ছে, এটা আমাদের জন্য দুশ্চিন্তার বিষয়।
টিএমএ: সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য যারাই কথা বলেছেন, তারাই নানাভাবে হ্যারেজড হয়েছেন। বিরোধী দলের অনেক নেতাকর্মীসহ শিশুরা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে চোখ হারিয়েছে কেউ, হাত হারিয়েছে, পা হারিয়েছে, জীবন দিয়েছে। তাদের পক্ষে আপনার কোন প্রতিবাদী বার্তা আছে কী?
শহিদুল আলম: আমি প্রতিবাদ করে যাচ্ছি, অনেক বছর ধরে। সরকার যেভাবে আমার উপর অত্যাচার নিপীড়ন করতে পারে, চালিয়ে যাচ্ছে। আমাকে অপহরণ করা হয়েছিল; নির্যাতন করা হয়েছিল প্রায় ছয় বছর আগে। এখন পর্যন্ত চার্জশিট জমা দেয়া হয়নি। প্রতি মাসে আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। ৫ জুন আমি আবার আদালতে হাজিরা দেব। এটাতো চলছেই, এ ধরনের হয়রানি তো তারা শুধু আমার ক্ষেত্রে নয়; সারা দেশের অনেক মানুষের ওপরও চলছে। আমার ওপর যা হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি হয়রানি হচ্ছে সাধারণ মানুষের ওপর। মানুষ গুম হচ্ছে, খুন হচ্ছে, ঘরবাড়ি হারা হয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশের মানুষ এদেরকে কেন এখনও গ্রহণ করছে, এটাতে আমি অবাক হচ্ছি। যদিও নিপীড়কদের একটা সুযোগটা তো রয়েছেই। ভয় দেখানোর কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিপীড়করা পার পেয়ে যায়, পার পেয়ে যাচ্ছে।
টিএমএ: মিরর এশিয়ার পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।
শহিদুল আলম: দ্য মিরর এশিয়াকেও ধন্যবাদ।