বিদেশে ব্যবসায়ীদের যে নৈতিকতা আছে আমাদের ছিটেফোঁটাও নেই
বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদের সদস্য পরিচালক ছিলেন ড. জাহাঙ্গীর আলম খান। তিনি একজন বাংলাদেশি গবেষক ও কৃষি অর্থনীতিবিদ। দ্য মিরর এশিয়ার সঙ্গে সম্প্রতি কথা বলেছেন কাঁচা মরিচসহ, নিত্যপণ্যের দাম, কৃষি বাজেট, ভর্তুকি, চাষাবাদের খরচ এবং ব্যবসায়ীদের নৈতিকতা নিয়ে-
কাঁচা মরিচের দাম বাড়ছে কেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান: জুন-জুলাই মাসে দেশে কাঁচা মরিচের চাষ হয় না। সুতরাং দাম একটু বাড়বে। এ ছাড়া, ঈদের ছুটির সময় কাঁচামরিচ সরবরাহ কমে আসে, এ জন্যও দাম বাড়তে পারে। এবার দেশের উত্তরে এবং সিলেটের ব্যাপক বন্যা হয়েছে। তবে প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা হওয়ার মতো অবস্থা হয়নি। কাঁচা মরিচে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ না। প্রায় ৩০ শতাংশ কাঁচা মরিচ ভারত থেকে আমদানি করতে হয়। আমি আশা করছি ভারত থেকে আমদানি করলে কাঁচা মরিচের দাম কমে আসবে। দুই বছর আগের মতো কেজি প্রতি দাম ১০০০ টাকা ছাড়িয়ে গেলে অবশ্যই তখন বুঝতে হবে এ বাজারে সিন্ডিকেট ঢুকে পড়েছে। যদি দেশে বড় ধরনের বন্যাও হয়, কোনোভাবেই কাঁচা মরিচের দাম ১০০০ টাকা হতে পারে না। এমনটা হলে অবশ্যই সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই সিন্ডিকেটকে ভাঙতে হবে। কীভাবে ভাঙবে, সেই পরিকল্পনা নিতে হবে সরকারকে।
পেঁয়াজ আর আলুর দাম কমছে না কেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান: পেঁয়াজ এবং আলুর দাম বেড়ে যাচ্ছে, সেই দাম কমানো যাচ্ছে না। পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকা। আলুর কেজি কোনোভাবে ৬০ টাকা হতে পারে না। সরবরাহ কমে গেলে, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কাজ করে। এ দুই পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হলে অবশ্যই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। আলুর উৎপাদন দেখানো হয় ১ কোটি ৯ লাখ টন। আলুর উৎপাদনের পরিসংখ্যান কোনোভাবে ঠিক নয়। কোল্ড স্টোরে এবার আলু নাই। এখানে কারসাজি আছে।
দেশের পরিসংখ্যানের গুনগত মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়?
জাহাঙ্গীর আলম খান: আমাদের দেশের পরিসংখ্যানের গুনগত মান ভালো নয়। প্রতিটা কৃষি পণ্যের অতিরিক্ত উৎপাদনের পরিসংখ্যান দেওয়া হয়। যা বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে আমাদের প্রতিটা পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। সরকারকে বিভিন্ন খাতের পরিসংখ্যানকে নির্ভরযোগ্য করে তুলতে হবে। সবার যেন সেই পরিসংখ্যান থেকে আস্থা আসে।
বিদেশে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পায় না কেন?
জাহাঙ্গীর আলম খান: বিদেশে সরকারের পরিসংখ্যানটার ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। আমাদের দেশে ঠিক উল্টো চিত্র দেখা যায়। পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভর করেন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। এ ছাড়া বিদেশে ব্যবসায়ীদের যে নৈতিকতা আছে, আমাদের ব্যবসায়ীদের মধ্যে এর ছিটেফোঁটাও নেই। কীভাবে এদের নিয়ন্ত্রণ করবে সরকার!
এ অর্থবছরে কৃষি বাজেট কেমন হয়েছে?
জাহাঙ্গীর আলম খান: এ বছর কৃষি বাজেট ভালো হয়নি । আগের ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের তুলনায় এ বাজেট ভর্তুকি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। চলতি বছর কৃষি ভর্তুকি শেষ সময়ে ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আগামী অর্থ বছরে কৃষি ভর্তুকি ১৭ হাজার কোটি টাকা। ভর্তুকির আকার আরো বাড়াতে হতো, কারণ ডলারের দাম বেড়ে গেছে। ভর্তুকির আকার বাড়াতে না পারলে অনেক কৃষক চাষাবাদের জন্য কম দামে সার কিনতে পারবে না। ফলে খরচ বেড়ে যাবে। এ ছাড়া সরকার জ্বালানি তেল এবং বিদ্যুতের দাম ব্যাপক হারে বাড়িয়েছে। ইউটিলিটির দাম বৃদ্ধি কৃষি উৎপাদন খরচের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কৃষি বাজেট আরো মনোযোগ দিয়ে করা উচিত ছিল। কারণ জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ২ নম্বর অভীষ্ট বাস্তবায়ন নিশ্চিতের জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করতে হবে । তার মানে হচ্ছে, এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন এখন থেকে ৫ থেকে ৬ শতাংশ বাড়াতে হবে । বর্তমানে এ হার মাত্র ৩ শতাংশ। এখন থেকে উৎপাদনের হার বাড়াতে না পারলে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে না।