বিদেশি শক্তি অত্যন্ত প্রবলভাবে বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১৯৪৮ সালের ২৬ জানুয়ারি ঠাকুরগাঁও জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। ১৯৭২ সালে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন। ১৯৭৯ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে তৎকালীন উপ-প্রধানমন্ত্রী এস এ বারীর ব্যক্তিগত সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে প্রথমে কৃষি প্রতিমন্ত্রী ও পরবর্তীতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
২০০৯ সালের ডিসেম্বরে বিএনপির ৫ম জাতীয় সম্মেলনে তিনি দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব পদে নির্বাচিত হন। ২০১১ সালের ২০শে মার্চ বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব খন্দকার দেলওয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর ২১ মার্চ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তাকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ঘোষণা করেন। ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলটির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেলনে নির্বাচিত হন দলের মহাসচিব। সেই থেকে নানান চড়াই উতরাই পেরিয়ে বিএনপির হাল ধরে এগিয়ে চলছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্প্রতি বরেণ্য এই রাজনীতিক চলমান রাজনীতির নানান বিষয় নিয়ে কথা বলেন দ্য মিরর এশিয়ার সাথে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দ্য মিরর এশিয়ার ঢাকা প্রতিনিধি।
দ্য মিরর এশিয়া: পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে আপনি রাজনীতির মাঠে। আপনার দেখা রাজনীতির এই দীর্ঘ সময়কে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
মির্জা ফখরুল ইসলাম: ৬৯-৭১ সাল পর্যন্ত মূলত রাজনীতির একটা ধারা ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল, স্বাধিকারের প্রশ্ন ছিল। তখন রাজনীতিতে একটা আদর্শ ছিল। সেই আদর্শের পেছনে সবাই যেত। তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টি, তার সাথে যারা ছিল; অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ- তাদের আদর্শিক একটা দিক ছিল। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ৭১ সালের পর আওয়ামী লীগ আদর্শগত জায়গা থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। যে মৌলিক জায়গাগুলো ছিল - গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সেখান থেকে কিন্তু সে (আওয়ামী লীগ) সরে গেছে।
‘এক দল, এক দেশ, শেখ মুজিবের বাংলাদেশ’ এই স্লোগানের মত করে তারা বহুদলীয় গণতন্ত্রকে একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় রূপান্তর করেছে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস হবার টার্নিং পয়েন্ট ছিল মুজিবের ‘বাকশাল’ ব্যবস্থা। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি তৈরিতে তারা যে ভূমিকা রাখতে পারত, তারা নিজেরাই সেটা নষ্ট করেছে।
দেখা গেল, তারা তাদের নেতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে এক দলীয় শাসনের দিকে নিয়ে গেল। সেটা আমাদের চিন্তা, চেতনার বাইরে... বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ, সংগ্রাম, ত্যাগ সব কিছু অর্জন ধুলোর সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। পরবর্তীকালে জিয়াউর রহমান আসার পরে চেষ্টা করেছেন বহুমাত্রিক গণতন্ত্রের বিকাশে। দেশে মুক্তবাজার অর্থনীতির পথ খুলে দিয়েছেন। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ একটা কোর জায়গা পেয়েছিল তখন। দেশটাকে পুনঃগঠন করেছেন।
জিয়াউর রহমানের পর এরশাদ সাহেব আসার পর আবার সেটা পরিবর্তন শুরু হয়। সেই পরিবর্তন থেকে রাষ্ট্রের প্রতিটি পর্যায়ে নৈতিকতার অভাব দেখা যাচ্ছে। তারপর স্বৈরাচারী শাসন দেখল বাংলাদেশ। নব্বইয়ে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন হল। তখন আরেকটা সুযোগ এল বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তিত হবার। আন্দোলনে ৩৭০ জন মানুষ জীবন দিলেন, কিন্তু আমরা তার ফলাফল কাজে লাগাতে পারলাম না। আওয়ামী লীগ কিন্তু তখনো আন্দোলনের মাঝে এসে সরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। আমরা কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় আবারো সুযোগ পেলাম গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার। নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু হয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। বিচার ব্যবস্থা ঠিক ছিল।
সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল, মিডিয়ার স্বাধীনভাবে কাজ করতে পেরেছে। জাতির সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য যে, আমাদের মধ্য থেকেই কিছু ‘অলস’ দল তৈরি হয়ে যায়, যারা আমাদের গণতান্ত্রিক যে চেতনা, সেটা ধ্বংস করে ফেলেছে। আমরা আবার লক্ষ্য করলাম যে, ২০০৯ সালের পর থেকে বাংলাদেশ আবার একদলীয় শাসন ব্যবস্থার দিকে চলে গেল।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে করা হয়েছিল, সেটা সকলের (আওয়ামী লীগসহ) মতামতের উপর ভিত্তি করে। সেই কেয়ারটেকারকে তারাই (আওয়ামী লীগ) বিলুপ্ত করে একনায়কতন্ত্রের দিকে নিয়ে নিয়ে গেল। এখন তো পুরোপুরি গ্রাস করে ফেলেছে। গণতন্ত্র তো কাজ করে তার প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর। নির্বাচন ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলেছে, বিচার ব্যবস্থায় দলীয়করণ হয়েছে, প্রশাসনে পুরোপুরিভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে। মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে, যে তারা স্বাধীন না। পুরো রাষ্ট্রকাঠামোকে একদলের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই সরকার তার নিজের স্বার্থে সেটা ব্যবহার করছে।
অপর দিকে, অর্থনীতি একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতি, নৈরাজ্য, দুঃশাসন; সুশাসন বলে অর্থনীতিতে কিছু দেখছি না। একের পর এক সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি সামনে আসছে। একটা বাহিনীর প্রধান, সে কীভাবে রাষ্ট্রীয় সুবিধা গ্রহন করে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে।
রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা কীভাবে অঢেল সম্পত্তির মালিক হচ্ছেন। আমলাদের মধ্যে, রাজনীতিতে যারা ক্ষমতাসীন আছেন, তাদের মাধ্যমে ‘হাজার হাজার’ কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশ যাচ্ছে। একাত্তর সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের যে চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, সেই চেতনা পুরোপুরি ভাবে নষ্ট করে ফেলেছে আওয়ামী লীগ। আমার মনে হয়, এটা পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে।
দ্য মিরর এশিয়া: বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে- রাজনীতিবিদরা বিভিন্ন সময়ে এ অভিযোগ তোলেন। এই চক্রান্তকারীরা আসলে কারা? আপনারা কী তাদেরকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন?
মির্জা ফখরুল ইসলাম: আপনাকে একটা কথা বলি, তৃতীয় বিশ্বের দেশে যে জাতীয়তাবাদী নেতৃত্ব তৈরি হয়, জাতীয়তাবাদে যারা বিশ্বাস করেন, সত্যিকার অর্থে নিজের দেশকে যারা নির্মান করতে চায় নিজের স্বকীয়তায়, তখন আধিপত্যবাদী শক্তি বা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সেটার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়। একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। সেখানে তার সুবিধাটা হয়, সে প্রভাব বিস্তার করে এবং অর্থনৈতিক যে শোষণ, সেখান থেকে সুবিধা নিশ্চিত করে। বাংলাদেশেও... এটা অপ্রিয় সত্য যে, বাংলাদেশে বিদেশি শক্তি... তারা এখানে অত্যন্ত প্রবলভাবে তাদের নিজেদের স্বার্থে বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।
এটা আমার ব্যক্তিগত ধারণা- শেখ মুজিবরের যে হত্যা, এটাকে আমি বিচ্ছিন্নভাবে দেখি না। এটা ষড়যন্ত্রের ফলাফল। এমনকি, জিয়াউর রহমানকে যে হত্যা করা হয়, এটাতো আরো ভয়াবহভাবে... যখন উঠছিল বাংলাদেশ, বাংলাদেশ টেক অফ... সেই সময়টাতে তাকে হত্যা করা হয়। ফলে এই জায়গায় কিন্তু একটা ধ্বস নেমে গেছে, জাতীয়তাবাদী লিডারশিপ তৈরি হচ্ছিল, সেটা বন্ধ হয়ে যায়।
এই যে দেখেন, যখন একটা প্রমাণিত ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিকাশ লাভের চেষ্টা করল, সেটা বন্ধ করা হয়েছে। সবাই জানে এটা কারা করেছে। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দেয়া, কারাগারে আটক করে রাখা, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান সাহেবকে দেশে আসতে না দেয়া, সব একই নির্দেশনায় হচ্ছে। ওয়ান ইলেভেন কার স্বার্থে হয়েছে চিন্তা করে দেখুন। তখনকার কিছু বিদেশি শক্তি একত্রিত হয়ে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে দুই বছর ধরে তারা সেনা-সমর্থিত একটা সরকার চালাল। এটা পরিষ্কার যে বাংলাদেশে যখনই কোন স্থিতিশীলতা আসে, সেই স্ট্যাবিলিটিকে নষ্ট করে দেয়া হয়।
দ্য মিরর এশিয়া: বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। জনগণের ব্যাপক সমর্থিত একটি দল হিসেবে এই দায় তো বিএনপিরও আছে?
মির্জা ফখরুল ইসলাম: ‘বিএনপির দায় আছে’ এই কথায় আমার পুরোপুরি আপত্তি আছে। বিএনপির দায় তখনই থাকবে যখন সে রাষ্ট্র কাঠামোতে থাকবে। বিএনপি একটি উদার গণতান্ত্রিক দল। বিএনপি কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী দল কিংবা বিপ্লবী দল নয়। বিএনপির ক্যারেক্টারটা আমাদের বুঝতে হবে। বিএনপি হচ্ছে একটা উদারপন্থী রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক দল।
বিএনপি এখানে যুদ্ধ করতে আসবে না, সম্ভবও না। সংগ্রাম করবে, আন্দোলন করবে রাজপথে। শান্তিপূর্ণভাবে করবে। বিএনপি কখনো সহিংসতার মধ্য দিয়ে রাজনীতি করতে পারবে না। এটাই বিএনপির চরিত্র। এটা আমাদের বুঝতে হবে। ২০১৪ সালে যখন আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে কেয়ারটেকার ব্যবস্থার পক্ষে আন্দোলন করছিলাম, তখন সরকার পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে, আর্মড ফোর্স নিয়োগ করে জনগণকে দমন করে।
আপনি বললেন, দায়। দায় কীসের? দায় থাকবে তখন, যদি আমি ভুল করি। আমি তো জনগণকে ভুল পথে নিচ্ছি না। সফলতা একদিনে হবে না, আরো সময় লাগবে। জনগণ সম্পৃক্ত হচ্ছে নিজের তাগিদে। জনগণের অনুভব করছে নিজের ভোটাধিকার দরকার। অর্থনীতিকে তারা ভালো অবস্থায় দেখতে চায়, সেটার জন্য আন্দোলনে সম্পৃক্ত হচ্ছে। বর্তমান যে ফ্যাসিবাদী সরকার, নীতি নৈতিকতা বাদ দিয়ে প্রশাসনকে ব্যবহার করে জনগণকে দমন করার চেষ্টা করছে।
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সময় লেগেছে আড়াইশ বছর। প্রচুর আন্দোলন হয়েছে। সিপাহি বিদ্রোহ হয়েছে, অসহযোগ আন্দোলন হয়েছে। আন্দোলনে একটা ধারাবাহিকতা থাকে। পাকিস্তান পিরিয়ডেও আন্দোলন হয়েছে। একাত্তরে এসে একটা সফলতা পাওয়া গেছে। আসাদ হত্যার পরে জনগণ নেমে এসেছিল। উনসত্তরেও দেখেছি, নব্বইয়েও আন্দোলন হলো, জনগণ নেমে এসেছিল। চূড়ান্ত আন্দোলনে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। ঐ জায়গায় আমরা যেতে পারিনি, এটাই বাস্তবতা।
আমরা আটাশ তারিখে (২৮ অক্টোবর, ২০২৩) ফেইল করলাম। কিন্তু জনগণ যেভাবে নেমে আসল, তাতে ঐ জায়গায় ফেইল করার কথা না। আমাদের প্রস্তুতি ছিল, কিন্তু সরকারের দমননীতিতে আমরা আন্দোলনকে কাটিয়ে উঠতে পারিনি।
দ্য মিরর এশিয়া: বিএনপি আন্তর্জাতিকভাবে ‘বন্ধুহীন’। এ বিষয়টিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
মির্জা ফখরুল ইসলাম: আপনাকে একটা জিনিস খেয়াল করতে হবে, বর্তমান বিশ্বে এক রাষ্ট্রের সাথে অন্য রাষ্ট্রের সম্পর্ক গভীর হয়ে ওঠে বিভিন্ন ইন্ডিকেটরের ওপর। একটা দেশের (অভ্যন্তরীণ রাজনীতির) আন্দোলন নির্ভর করবে সে দেশের জনগণের উপর। এটাই বাস্তবতা, এখানে সাংগঠনিক শক্তি, অন্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংযোগ।
আমরা এখানে বলতে চাই, পশ্চিমা বিশ্বের (যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য) সমর্থন আমরা তখনো পেয়েছি, এখনো পাচ্ছি। ওই জায়গা থেকে তারা সরেনি। এখানে গণতন্ত্র নেই, বিচার ব্যবস্থা নাজুক, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, আইনের শাসন নেই, সে বিষয়ে তারা তাদের উদ্বেগ জানিয়েছে। তবে তারা এসে বসিয়ে দেবে নাতো। আপনার নিজের শক্তিতে বসতে হবে। ওই জায়গাতে আমাদের কিছু ঘাটতি আছে, আমরা সেটা পূরণ করেই সামনের দিকে এগিয়ে যাবো।
দ্য মিরর এশিয়া: আন্দোলনরত এই সময়ে দলের এই পুনর্গঠন কোনো সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে কী?
মির্জা ফখরুল ইসলাম: দলের পুনঃগঠন একটা চলমান প্রক্রিয়া, দুই তিন বছর পর এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটার সাথে আন্দোলনের সম্পর্ক আছে বলে আমি মনে করি না।
দ্য মিরর এশিয়া: দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান ও মহাসচিব হিসেবে আপনার প্রতি মানুষের আবেগ আছে। আপনারা আন্দোলনে মানুষকে কি বার্তা দেবেন?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: আমি বিষয়টা সেভাবে দেখছি না। আমাদের নেত্রী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তাকে অন্যায়ভাবে আটকে রেখে জনগণ থেকে দূরে রাখা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সম্মুখ নেত্রী। তার অবদান সবচেয়ে বেশি, সেই ১৯৮১ সাল থেকে, যেদিন থেকে তিনি রাজনীতিতে এসেছে। খালেদা জিয়াকে এভাবে অন্যায়ভাবে আটক করে রাখার পেছনে অনেক ধরনের চক্রান্ত আছে।
আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের যে গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সেখানে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্যই আমরা আন্দোলন শুরু করেছি। এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই একটা বৃহৎ আন্দোলনের সূত্রপাত হতে পারে। এটাতো আর একদিনে বলা যাবে না। ইট টেইকস টাইম। নেত্রীর প্রতি সারা দেশের মানুষের একটা দুর্বলতাও আছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের প্রতিও মানুষের দুর্বলতা আছে।
বর্তমান বিশ্বে গণতন্ত্রের জন্য যদি কারো সবচেয়ে বেশি ত্যাগ থেকে থাকে, সে খালেদা জিয়া। লক্ষ্য করে দেখুন, প্রত্যেক দিন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে, পরবর্তীকালে তিনি নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা এলেন, তিনি পার্লামেন্টকে শক্তিশালী করেছেন, মিডিয়াকে অনেক বেশি ফ্রিডম দিয়েছেন, দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা যাতে চালু থাকে, সে চেষ্টা তিনি করেছেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্র দখল করলে তিনি তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। বর্তমান বিশ্বে দেখতে পারি, এক সুচি বার্মায় জান্তার অত্যাচার শিকার করছেন। আর এখানে খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের অত্যাচারে বন্দী। এখানে তাকে আসামি করার কোন মানে নেই। তসরুপের কোন ঘটনা ঘটেনি। ব্যাংকের টাকা ব্যাংকেই পড়ে আছে। কেউ ভোগ করেনি। আজও আছে।
দ্য মিরর এশিয়া: ভারতের সাথে ট্রেন করিডোর নিয়ে চুক্তি নিয়ে আপনি কি ভাবছেন?
মির্জা ফখরুল ইসলাম: ভারতের সাথে ১০ দফা চুক্তি হয়েছে, এটাতো নতুন না। এর আগেও আখাউড়া পোর্টের যে চুক্তি হয়েছে, ট্রানজিটের কথা বলা হয়েছে, শিপমেন্টের কথা বলা হয়েছে। সব একই সূত্রে গাঁথা। তারা সব কিছুই করছে তাদের স্বার্থে। আমাদের অভিযোগ ভারতের বিরুদ্ধে না, সে তার স্বার্থ অনুযায়ী সব কিছু করবে। প্রশ্ন হলো, আমাদের সরকার কি করছে? সে তো আমার জন্য ন্যূনতম যে চাহিদা, অমীমাংসিত পানির হিস্যা, তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশের যে দাবিটা ছিল, সে দাবি তারা উঠিয়ে নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) নিজেই বলেছেন, তিস্তা ইস্যুতে ভারতকে সব কিছু দিয়ে দিলেই সমাধান হয়ে যাবে। পানি বণ্টনের আর কোন প্রয়োজন নেই। এই ধরনের একটা সরকার যদি আমাদের থাকে, তাহলে আমার সার্বভৌমত্ব ব্যাহত হবে, স্বাধীনতা ব্যাহত হবে। বার্মা থেকে গুলি আসছে, টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন আপনি যেতে পারছেন না। আমরা (মন্ত্রীরা) বলছি, আমরা অনেক কিছু করব, ওরা যদি কিছু করে! করেই তো ফেলেছে... বাকি রেখেছে কি? গোলাগুলি হচ্ছে, সীমান্তে ‘প্রতিদিন’ লোক মারছে, একটা কথা সরকার বলে না, তাহলে আমরা কি বুঝব?
দ্য মিরর এশিয়া: সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে কি বলবেন?
মির্জা ফখরুল ইসলাম:মানুষের কাছে একটাই কথা, আমরা যে আন্দোলন করছি, দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন, গণতন্ত্রকে রক্ষা করার যে আশা আকাঙ্ক্ষা, এটা তার আন্দোলন। একটা গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা গঠনের আন্দোলন। সুতরাং, মানুষের স্বার্থে, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে, সবাইকে আন্দোলনে নামতে হবে। এই সরকার তো এখন উন্মাদ হয়ে গেছে তার ক্ষমতা রক্ষার জন্য। ভারতীয়দের সাথে যে সমঝোতা চুক্তি হয়েছে, এটা নতুন না। এখন যে কোনো কিছুর বিনিময়ে গদি ধরে রাখায় ব্যস্ত এই ফ্যসিবাদি সরকার।
দ্য মিরর এশিয়া: আপনাকে ধন্যবাদ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম: মানুষের অধিকার আদায়ে সত্য প্রকাশে অবিচল থেকে এগিয়ে যাক দ্য মিরর এশিয়া। আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।