বিদ্যুৎখাতে সরকারের উন্নয়ন কাগুজে: বিডি রহমতুল্লাহ

জ্বালানি ও বিদ্যুৎখাতে ভয়াবহ সঙ্কট চলছে এখন। সরকারের পক্ষ থেকে একে সাময়িক সমস্যা বলা হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের মধ্যে দুর্নীতিপ্রবণতা বাড়ার ফলে এই সঙ্কট সহসাই কাটবে না। বিশেষ করে, ক্ষমতামুখী রাজনৈতিক ব্যবস্থার কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সঙ্কট সমাধানে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। এই অবস্থায় আমদানি নির্ভরতা দেশের অর্থনীতিতে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ নিয়ে দ্য মিরর এশিয়ার সঙ্গে কথা বলেছেন পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতুল্লাহ।

টিএমএ: লোডশেডিং নিয়ে কিছু বলুন।

বিডি রহমতুল্লাহ: আপনি-আমি রাজধানীতে থাকি এখানে সে অর্থে লোডশেডিং নেই। কিন্তু গ্রামের অবস্থা ভয়াবহ। সেখানে ঘণ্টার ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। গরমে মানুষের অবস্থা খুবই নাজুক। মানুষ রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারে না।

টিএমএ: এতো বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরও এমন লোডশেডিংয়ের কারণ কী?

বিডি রহমতুল্লাহ: বিদ্যুতের উৎপাদন কাগজে-কলমে যতোটা, বাস্তবে ঠিক ততোটা না। সেটা আমরা সবাই বুঝি। বাস্তবে সেটি থাকলে তো আর লোডশেডিং হয় না।

টিএমএ: বাস্তবতার সঙ্গে মিলছে না কেন? সমস্যা কোথায়?

বিডি রহমতুল্লাহ: সমস্যা বহুবিধ। সরকার রাতারাতি বিদ্যুতে বিপ্লব করতে চেয়েছিল। সেটি করতে গিয়ে রাতারাতি কিছু মানুষের অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটেছে। অনিয়ম-দুর্নীতি করে এখাত হতে হাজার হাজার কোটি টাকা অনেকে লোপাট করেছে। তাদের কারণেই মূলত এই সঙ্কট।

টিএমএ: এর বাইরে আর কি আছে?

বিডি রহমতুল্লাহ: সরকার তার ক্ষমতায় টিকে থাকতে ভারত, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে অতিমাত্রায় অর্থনৈতিক সখ্য গড়ে তুলেছে। ওই দেশগুলো বাংলাদেশকে বেশকিছু অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গছিয়ে দিয়ে বিশাল অংকের টাকা নিয়ে গেছে। এটিও একটি কারণ।

টিএমএ: বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে সরকারের বিশাল অংকের টাকা দেনা হয়েছে। বলা হয়ে থাকে ৫০ হাজার কোটি টাকা। কোন দিকে যাচ্ছে এ খাত?

বিডি রহমতুল্লাহ: অবস্থা এক কথায় শোচনীয়। সংসারের বাবা যদি মাতাল হন সেই সংসারের কোনো ভবিষ্যত থাকে না। আমাদের দেশের জ্বালানি খাতেরও কোনো ভবিষ্যত দেখি না।

টিএমএ: সরকার কেন দেশের অভ্যন্তরে জ্বালানির সন্ধান করছে না।

বিডি রহমতুল্লাহ: আমাদের প্রতিবেশি দেশ বার্মা গভীর সমুদ্রে বহু আগে থেকেই গ্যাস অনুসন্ধান করে। এটি নিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের বিরোধ ছিলো। অবশেষে ২০১৪ সালে বিষয়টির একটি ফয়সালা হয়। তারা ১১ নম্বর কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন করছে। কিন্তু আমরা আমাদের ১২ নম্বর কূপ থেকে গ্যাস উত্তোলন করতে পারছি না। সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করতে হয়তো ৭ থেকে ৮ বছর সময় লাগতো। কিন্তু সে সময় শুরু করলে আমরা এখন নিজেদের গ্যাস দিয়ে বিদ্যুতের জ্বালানি পেতাম।

টিএমএ: বিদ্যুতের বিকল্প খাতগুলোর কী অবস্থা?

বিডি রহমতুল্লাহ: সরকারের সেদিকে কোনো নজর আছে বলে মনে হয় না। তারা নিজেরা সোলার ও উইন্ডে কোনো কাজ করছে না। এমনকি বেসরকারি খাতকেও এক্ষেত্রে উৎসাহিত করছে না। সরকার যেখানে দুর্নীতি করা যাবে সেগুলোতে আছে। তারা আমদানীতে বেশি মনোযোগী। এখানে বেশি মজা।

টিএমএ: দ্য মিরর এশিয়াকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

বিডি রহমতুল্লাহ: আপনাকে ও মিরর এশিয়াকেও ধন্যবাদ।