ব্যাপক দমন পীড়নের কারণে বাংলাদেশের জিএসপি+ প্রাপ্তি ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে: জার্মান এমপি
পোশাক শিল্পে জিএসপি+ সুবিধার বিষয়টি পুর্নবিবেচনার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন জার্মানির সবুজ দলের সংসদ সদস্য রেনাটে কুনাস্ট। বাংলাদেশের শিক্ষার্থী বিক্ষোভ নিয়ে জার্মানির জেনিথ ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা বলেন।
জার্মান সংসদ বুন্ডেসটাগের দক্ষিণ এশীয় সংসদীয় গ্রুপের চেয়ারওম্যান রেনাতে কুনাস্ট ওই সাক্ষাতকারে জার্মান সরকারকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন তিনি নিশ্চিত: মানবাধিকার লঙ্ঘন ব্যবসার জন্য খারাপ৷
মিস কুনাস্ট, আপনি গত বছর দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশে গিয়েছিলেন। সেখানকার ছাত্র বিক্ষোভ এবং দেশ কাঁপানো সহিংসতাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
প্রথমত: বাংলাদেশে বর্তমানে যা ঘটছে তা আমার জন্য খুবই আবেগ পূর্ণ। গত বসন্তে আমাদের সফরের সময়, আমরা বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করেছি। আমার মতে দেশ একটি মোড়ের মধ্যে দাড়িয়ে আছে। এটি কি আরও গণতন্ত্রের পাশাপাশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং প্রসারিত হওয়ার দিকে যাচ্ছে? নাকি পুরাতন কাঠামোতেই আটকে থাকবে? আমি উদ্বেগের সাথে উন্নয়ন দেখছি। বাংলাদেশে যা হয় তা বিশ্বব্যাপী অনুভূত হয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো মানবাধিকার সংস্থাগুলো বাংলাদেশের আইনশৃংখলা বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ করেছে। পুলিশ নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছে। ২০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক ঘটনাগুলো তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘের প্রতিক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ। এটা প্রমান করে যে বাংলাদেশে যা ঘটে তা বিশ্বব্যাপী অনুভূত হয়। এটা আমার কাছে স্পষ্ট: সহিংসতা ঘটেছে। বাংলাদেশকে এখন এটি ব্যাপকভাবে, স্বাধীনভাবে এবং স্বচ্ছভাবে আমাদের কাছে পরিস্কার করতে হবে।
আর যদি তা না হয়?
তখন আন্তর্জাতিক দাবি হবে সরকার যেন বাইরে থেকে স্বাধীন তদন্তের অনুমতি দেয়। তদন্তকারীদের অবশ্যই তাদের কাজ করতে দিতে হবেভ এর অর্থ: তদন্তকানীদের সব জায়গায় প্রবেশাধিকার দিতে হবে। কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই সাংবিধানিক মান অনুযায়ী একটি অধিকতর তদন্তকে গুরুত্ব সহকারে সমর্থন করতে হবে। খারাপ মানবাধিকার পরিস্থিতি বিনিয়োগের জন্য অনুকূল নয়।
সহিংসতার সংবাদ যদি সারা বিশ্ব জানতে না পারতো, আপনি কি প্রভাব দেখতে পান?
আমি মনে করি এটা সম্ভব না। অন্য সময় হলে হতে পারতো। কিন্তু ডিজিটাল যুগে নয়। বিদ্যুৎ গতিতে সারা বিশ্বে তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীদের দমন করা যাবে না। এ ধরনের খারাপ মানবাধিকার পরিস্থিতি বিনিয়োগের জন্য অনুকূল নয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্প দেখায় যে বিকল্প উপায় আছে। উন্নতি অন্য উপায় আছে।
আপনি কি বোঝাতে চেয়েছেন?
রানা প্লাজা বিপর্যয় ঘটেছে মাত্র ১০ বছর আগে। সেই সময়ে, দেশটির ব্যবসায়ী সম্প্রদায় পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছিল স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা এবং ইইউ ট্রেড কমিশনারের তীব্র প্রতিক্রিয়ার কারণে রপ্তানি ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক মানগুলি মেনে চলতে হবে। বাংলাদেশ সরকারও অনেক চেষ্টা করেছে। ফলে এখাতে কাংখিত শ্রম পরিবেশের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। ফলে, ইইউর সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। এখনকার পোশাক ব্যবসায়ীরা শ্রম অধিকার এবং পরিবেশের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির চেষ্টা করছে এবং জিএসপি+ স্ট্যাটাস পাওয়ার লক্ষ্যে রয়েছে। আপনি কিভাবে?
বর্তমান ঘটনার কারণে এটি আরও কঠিন হয়ে উঠছে। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করা একটি দেশে বিনিয়োগ করা বা অর্ডার দেওয়া ইউরোপীয় কোম্পানিগুলির জন্য একটি বড় ঝুঁকির বিষয়। জিএসপি+ এর জন্য বাংলাদেশের প্রসারিত উৎপাদন ব্যবস্থা প্রয়োজন। এই ধরনের পুলিশি সহিংসতার কারণে বাংলাদেশ বাদ যেতে পারে। আমদানী কারকদের সুনাম ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।
বাংলাদেশ অনেক দূরে। এই অঞ্চলে ইউরোপের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র ভারত, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থতিতে নিজের কৌশলগত নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে। এ অবস্থায় ইউরোপ কি অর্জণ করতে পারে?
এই প্রশ্নটি আমাকে মোটেও ভাবায় না। আমি একজন গণতন্ত্রী। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে গণতন্ত্র ছাড়া দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক স্বার্থ বাস্তবায়িত হতে পারে না। উৎপাদন খাতে সুনাম অর্জন করতে চাওয়া কিন্তু একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক নীতিকে ব্যাপকভাবে উপেক্ষা করা কোনোভাবেই ভালো হবে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।